২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

নেক্কার মানুষের সম্মান

-

মানুষের মর্যাদা ও পূর্ণতা দু’ভাবে গণ্য হয়ে থাকে। একটি হয়ে থাকে ব্যক্তিগতভাবে যোগ্যতা-পরিপূর্ণতা অর্জনের মাধ্যমে এবং অন্যটি হয়ে থাকে বংশগত বা খান্দানি সম্মানসূত্রে। বিষয়টি কুরআন শরিফ ও হাদিসের উল্লেখ করা হয়েছেÑ
সূরা আল-কাহফে দু’জন এতিমের দেয়াল নির্মাণ করে দেয়ার কথা আলোচিত হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা সেটি কোনো পারিশ্রমিক ছাড়াই হজরত মুসা আ: ও হজরত খিজির আ:-এর দ্বারা নির্মাণ করিয়ে দিয়েছেন। এ কল্যাণ কাজে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে যে দয়া-অনুগ্রহ কার্যকরী হয়েছে, তার কারণ হিসেবে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, তাদের দু’জনের পিতা নেককার ছিলেন। (১৮ : ৮২)।
আল্লামা আলুসি র: ‘তাফসিরে রুহুল মায়ানি’তে লিখেছেন, ওই নেককার লোকটি এ শিশুদের সপ্তম বা দশম ঊর্ধ্বতন পুরুষ ছিলেন। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, পিতা-দাদা প্রমুখের নেক ও মর্যাদাসম্পন্ন হওয়ার কল্যাণও বংশপরম্পরায় সন্তানদের পর্যন্ত পৌঁছে থাকে। যে কারণে এ বংশগত সম্মানের বিবেচনায় মহান আল্লাহ শিশুদের প্রতিও বিশেষ বিবেচনা এবং সম্মানজনক দয়া করেছেন।
ইমাম ইবনে আবু শায়বা র:, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল র: ও ইবনে আবু হাতেম র: হজরত খায়ছামা রা: সূত্রে হজরত ঈসা আ:-এর এই বাণী উদ্ধৃত করেছেন যে, ‘সন্তানের ক্ষেত্রে নিজ বরকত-কল্যাণের দ্বারা, তারা তার পরবর্তীতেও শান্তি ও নিরাপদে থাকবে।’ অতঃপর এর সমর্থনে হজরত খায়ছামা রা: সূরা কাহফের ওই আয়াত পাঠ করেছিলেন।
তাফসিরে ‘রুহুল মায়ানি’ গ্রন্থে ইমাম আবদ ইবন হুমাইদ র: ও ইবনুল মুনজির র: সূত্রে হজরত ওয়াহাব রা: থেকে উদ্ধৃত করেছেন, হজরত হাসান রা: জনৈক খারেজিকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা জানো যে, সূরা কাহফে বর্ণিত এতিমদের সম্পদ আল্লাহ তায়ালা কেন হিফাজত করে রেখেছিলেন? সে জবাবে বলল, পিতার নেক আমল ও পুণ্যবান হওয়ার কারণে। তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ! আমার পিতা ও নানা রাসূল সা:-এর নেককার হওয়া ও নেক আমল তো ওই পিতার চেয়ে হাজারো গুণ অধিক ছিল।
সূরা তুর, আয়াত নম্বর ২১-এ লিপিবদ্ধ আছেÑ
‘এবং যারা ঈমান গ্রহণ করে আর তাদের সন্তানসন্ততি ঈমানে তাদের অনুগামী হয়, তাদের সঙ্গে (পরকালে) তাদের সন্তানসন্ততিকে একত্র করে দেবো এবং আমি তাদের কর্মফল মোটেও হ্রাস করব না।’ (আয়াত নম্বর-২১)।
ওই আয়াতের ব্যাখ্যার অধীনে ‘তাফসিরে রুহুল মায়ানি’তে কয়েকজন হাদিসবিশারদ ও তাফসিরবিশারদ সূত্রে হজরত ইবনে আব্বাস রা:-এর বাচনিক বর্ণনা লিখিত রয়েছে যে, মহান আল্লাহ মুমিনদের সন্তানদের বেহেশতে তাদের কাছে একই ঠিকানায়, একই সঙ্গে সমমর্যাদায় অবস্থানের সুযোগ করে দেবেন। যেন তা সংশ্লিষ্ট মুমিনের চক্ষু শীতল ও আত্ম-প্রশান্তির কারণ হয়। এটাও মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বংশগত সম্মানের বিবেচনাতেই হয়ে থাকবে।
বংশগত মর্যাদা পবিত্র কুরআনের নি¤েœাক্ত আয়াতেও বোঝা যায়Ñ
‘বলুন! দয়াময় আল্লাহর কোনো সন্তান থাকলে, আমিই হতাম তার প্রথম ইবাদতকারী।’ (সূরা যুখরুফ : আয়াত নম্বর-৮১)।
লেখক : মুফতি, ইফা

 


আরো সংবাদ



premium cement