ভালোবাসা একটি মানবিক অনুভূতি
- আতিকুর রহমান নগরী
- ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
ব্যঞ্জনবর্ণের চারটি বর্ণ দ্বারা গঠিত একটি ক্ষুদ্র শব্দের নাম ‘ভালোবাসা’। যাকে আরবিতে ‘মুহাব্বত’ ও ইংরেজি ভাষায় ‘লাভ’ বলা হয়। যার অর্থ হচ্ছেÑ অনুভূতি, আকর্ষণ, হৃদয়ের টান; যা মানুষের অন্তরে আল্লাহপাক সৃষ্টিগতভাবে দিয়ে দেন।
তবে উইকিপিডিয়া মুক্ত বিশ্বকোষে ভালোবাসার সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে এভাবেÑ ‘ভালোবাসা একটি মানবিক অনুভূতি এবং আবেগকেন্দ্রিক একটি অভিজ্ঞতা। বিশেষ কোনো মানুষের জন্য স্নেহের শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে ভালোবাসা। তবুও ভালোবাসাকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভাগ করা যায়। আবেগধর্মী ভালোবাসা সাধারণত গভীর হয়, বিশেষ কারো সাথে নিজের সব মানবীয় অনুভূতি ভাগ করে নেয়া, এমনকি শরীরের ব্যাপারটাও এ ধরনের ভালোবাসা থেকে পৃথক করা যায় না। ভালোবাসা বিভিন্ন রকম হতে পারে, যেমনÑ নিষ্কাম ভালোবাসা, ধর্মীয় ভালোবাসা, আত্মীয়দের প্রতি ভালোবাসা ইত্যাদি। প্রকৃত অর্থে ভালোবাসা দুই ধরনের হয়ে থাকেÑ ১. বৈধ ও পবিত্র; ২. অবৈধ ও অপবিত্র। বিয়ের আগে আধুনিক যুবক-যুবতীরা যে সম্পর্ক গড়ে তোলে তাকেই অবৈধ ও অপবিত্র ভালোবাসা বলে। আর পবিত্র ভালোবাসা বলতে আল্লাহ ও রাসূল সা:-এর প্রতি ভালোবাসা, সন্তানের প্রতি মা-বাবার ভালোবাসা, স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা ইত্যাদিকে বোঝায়। আল্লাহপাক কুরআন শরিফে ইরশাদ করেনÑ ‘যারা ঈমানদার মুমিন, তাদের অন্তরে আল্লাহর মহব্বত ভালোবাসা হবে সর্বাধিক প্রগাঢ়।’ (সূরা বাকারা-১৬৫) নবী করিম সা: ইরশাদ করেনÑ ‘কোনো লোক পূর্ণ মুমিন হবে না ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ না সে নিজের জীবন এবং পরিবার পরিজনের চেয়ে আমাকে বেশি ভালোবাসবে।’
শরিয়তের দৃষ্টিতে ভালোবাসা
সব ধরনের অশ্লীলতা-বেহায়াপনা তথা গুনাহের দরজাগুলো বন্ধ করার জন্য শরিয়ত এসেছে। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ রা: বলেনÑ ‘ইশক বা প্রেম একটি মানসিক ব্যাধি। আর যখন তা প্রকট আকার ধারণ করে শরীরকেও তা প্রভাবিত করে। সে হিসেবে তা শরীরের পক্ষেও ব্যাধি। মস্তিষ্কের জন্যও তা ব্যাধি। এ জন্যই বলা হয়েছে, এটা একটা হৃদয়জাত ব্যাধি। শরীরের ক্ষেত্রে এ ব্যাধির প্রকাশ ঘটে দুর্বলতা ও শরীর শুকিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে।’ (মাজমুউল ফাতওয়া : ১০/১২৯) তিনি আরো বলেনÑ ‘পর নারীর প্রেমে এমন সব ফ্যাসাদ রয়েছে যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ গুনে শেষ করতে পারবে না। এটা এমন ব্যাধির একটি যা মানুষের দ্বীনকে নষ্ট করে দেয়। মানুষের বুদ্ধি-বিবেচনাকে নষ্ট করে দেয়, অতঃপর শরীরকেও নষ্ট করে।’ (মাজমুউল ফাতওয়া : ১০/১৩২) বিপরীত লিঙ্গের প্রতি প্রেম-ভালোবাসার ক্ষতি জানার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, এটা হলো হৃদয়ের বন্দিদশা, আর প্রীতিভাজনের জন্য দাসত্ব, প্রেম-ভালোবাসা অসম্মান, অপদস্ততা ও কষ্টের দরজা। প্রেম-প্রীতি শূন্য হৃদয়ের আন্দোলন। হৃদয় যখন আল্লাহর মহব্বত ও স্মরণ থেকে শূন্য হয়ে যায়, আল্লাহর কাছে দোয়া-মুনাজাত ও আল্লাহর কালামের স্বাদ গ্রহণ করা থেকে যখন শূন্য হয়ে যায়, তখন নারীর ভালোবাসা, ছবির প্রতি আগ্রহ, গান-বাজনা শোনার আগ্রহ তার জায়গা দখল করে।
স্বামী-স্ত্রীকে ভালোবাসার ফজিলত
হাদিস শরিফে আছে, স্বামী-স্ত্রী মহব্বতের সাথে আলাপ-আলোচনা করা, কথাবার্তা বলা নফল ইবাদতের চেয়ে উত্তম। অন্যথায় রাসূল সা: বলেন, ‘যে মহিলা (স্ত্রী) তার স্বামীকে সন্তুষ্ট রেখে দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়, সে অবশ্যই বেহেশতে প্রবেশ করবে।’
সন্তানকে ভালোবাসার ফজিলত
রাসূল সা: নিজ সন্তান ফাতেমাকে অত্যধিক ভালোবাসতেন। তিনি স্বীয় জীবনে ইরশাদ করেনÑ ‘ফাতিমা আমার কলিজার টুকরো, তাকে কেউ কষ্ট দিলে আমাকেই কষ্ট দেয়া হবে।’ নবীজীর পাক জবানের বর্ণনায় ফুটে উঠে যে সন্তানকে ভালোবাসা সওয়াবের কাজ।
পক্ষান্তরে আমাদের সমাজে বেগানা যুবক-যুবতী, তরুণ-তরুণীরা প্রেম-ভালোবাসার নামে যে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির উত্তাল সাগরের উর্মিমালার মতো বহমান রয়েছে তা সম্পূর্ণরূপে অবৈধ ও হারাম। বিয়ের আগে এরূপ প্রেম-ভালোবাসা শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ নয়। ইসলামের বিধিবিধান অনুযায়ী কোনো যুবতি কোনো অবস্থায় কোনো যুবকের সান্নিধ্যে থাকতে পারে না।
উমর রা: থেকে বর্ণিত, রাসূল সা: বলেছেনÑ ‘কোনো পুরুষ যখন কোনো নারীর সাথে একান্তে থাকে, তখন তাদের মাঝে তৃতীয়জন হিসেবে উপস্থিত হয় স্বয়ং শয়তান। তাদের মাঝে ভাবাবেগকে উৎসাহিত করে এবং উভয়ের মাঝে খারাপ কুমন্ত্রণা দিতে থাকে এবং সর্বশেষ লজ্জাকর পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটায়। এতে তারা নিজেরা যেমনি কঠিন গোনাহগার হবে, তেমনি তাদের এই মেলামেশার সুযোগ দেয়ার কারণে তাদের বাবা-মা ও অভিভাবকদের হাদিস শরিফে দাইয়ুস বলা হয়েছে। আরো বলা হয়েছেÑ দাইয়ুস জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। তাই এসব ব্যাপারে সবার কঠোরভাবে সাবধান হওয়া জরুরি এবং তা ঈমানের দাবি।
লেখক : তরুণ আলেম
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা