আত্মহত্যা ও তার কুফল
- ড. মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ
- ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
আত্মহত্যা বা নিজেকে নিজে হত্যা করা বর্তমান সমাজের জন্য একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় প্রত্যেক দিনই কোনো কোনো দৈনিক পত্রিকাতে আমরা আত্মহত্যার খবর পাই। বিভিন্ন কারণে এসব আত্মহত্যা করা হয় বলেও আমরা জানতে পারি। কিন্তু এ থেকে পরিত্রাণের কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছি না। বিগত বছরগুলোতে আত্মহত্যা সংঘটিত হওয়ার পরিসংখ্যান অন্তত আমাদের তা-ই মনে করিয়ে দেয়। শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা বিশ্বের অবস্থা একই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, বছরে প্রায় আট লাখ মানুষ আত্মহত্যা করে। তবে ১৯ থেকে ২৫ বছর বয়সী যুবক-যুবতীরা বেশি আত্মহত্যা করে বলে জানা গেছে। সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় দশম।
বাংলাদেশ পুলিশ হেড কোয়ার্টারের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে আত্মহত্যার সংখ্যা ছিল ১১ হাজার ৯৫টি। আর ২০১৬ সালে এর সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ৬০০, ২০১৫ সালে ১০ হাজার ৫০০ এবং ২০১৪ সালে তা ছিল ১০ হাজার ২০০টি। এ তথ্য থেকে বোঝা যায়, প্রতি বছরই আত্মহত্যার ঘটনা বাড়ছে এবং গড়ে প্রতিদিন ৩০ জন করে আত্মহত্যা করছে। বড়দের সাথে শিশু ও কিশোররাও আত্মহত্যা করছে। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের মতে, শুধু ২০১৭ সালেই ৭৬ জন আত্মহত্যা করে, যা গত ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ছিল ৫৩৪। আরো শঙ্কার বিষয় হলোÑ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের এক রিপোর্ট মতে, বাংলাদেশে প্রায় ৬৫ লাখ মানুষ আত্মহত্যার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এমন অবস্থা কারোরই কাম্য নয়। এটি মনে রাখা জরুরি যে, একটি আত্মহত্যা শুধু একটি জীবনকে শেষ করে দেয় না বরং একটি পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র এমনকি গোটা মানবজাতিকে হুমকির মধ্যে ফেলে দেয়। এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া জরুরি। কিন্তু কিভাবে? সে নিয়ে চিন্তা ও গবেষণার কোনো অন্ত নেই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি আত্মহত্যার পেছনে অনেক কারণ থাকে। তার মধ্যে অন্যতম হলোÑ ডিপ্রেশন, দাম্পত্য কিংবা যেকোনো সম্পর্কের মধ্যে দ্বন্দ্ব, দারিদ্র্য, বেকারত্ব, মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে অসচেতনতা এবং পারিপার্র্শ্বিক সহযোগিতা। তাদের মতেÑ এগুলো থেকে নিজেদের উত্তরণ করতে পারলে আত্মহত্যার প্রবণতা কমিয়ে আনা কিংবা বন্ধ করা সম্ভব। কিন্তু ভাবনার বিষয় হলোÑ উপরিউক্ত বিষয়গুলো কি কখনো ওই বিষয়গুলো থেকে সমাজকে পুরোপুরি মুক্ত করা আদৌ সম্ভব? অবশ্যই না। পৃথিবীর শুরু থেকেই মানুষ দারিদ্যকে জয় করার চেষ্টায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছে। কিন্তু সেই দারিদ্র্য না কমে বরং ভিন্ন ভিন্ন রূপে বেড়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী মানুষটিও অনেক কিছুরই অভাব বোধ করে। সম্পর্কের মধ্যে দ্বন্দ্ব-কলহও ঠিক ওইরূপ। সম্পর্ক যতদিন থাকবে, দ্বন্দ্ব-কলহও ততদিন থাকবে। এটিই নিয়ম। সুতরাং উল্লিখিত ওই সমস্যাগুলো নিরূপণ করতে না পারলে আত্মহত্যা এবং এর প্রবণতা বন্ধ করা যাবে না তা যুক্তিহীন। বরং ভিন্ন উপায় অবশ্যই থাকবে এবং আছে। আর তা হলোÑ নৈতিকতা ও মূল্যবোধ এবং এতদসংক্রান্ত শিক্ষা। ব্যক্তিজীবনে যতদিন নৈতিকতা ও মূল্যবোধের বাস্তবায়ন না হবে, ততদিন কোনো উপায়েই এসব সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে না। আর নৈতিকতা ও মূল্যবোধের জোগান দিতে পারে একমাত্র ধর্ম। সে ক্ষেত্রে পূর্ণ এবং আল্লাহর কাছে মনোনীত ধর্ম হিসেবে ইসলামই হবে একমাত্র সমাধান।
এখন আমরা দেখি ইসলাম আত্মহত্যা ও তার পরিণতি সম্পর্কে কী বলছে। ইসলামী আইন ও বিধানে আত্মহত্যাকে হারাম করা হয়েছে এবং তার পরিণতিতে বলা হয়েছে, আত্মহত্যাকারী ব্যক্তির আত্মহত্যা করার পদ্ধতি অনুযায়ী তার যন্ত্রণাকে অব্যাহত রাখা হবে। পবিত্র কুরআনে এ ব্যাপারে নির্দেশিত হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর করুণাময়।’ (সূরা আন-নিসা, ৪ : ২৯-৩০) অন্য দিকে অনেক হাদিস আত্মহত্যা এবং এর শাস্তি সম্পর্কে আমাদের অবহিত করে। রাসূলুল্লাহ সা: আমাদের এ ব্যাপারে বিশেষভাবে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ আমরা আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত হাদিসকে উল্লেখ করতে পারি। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করবে, জাহান্নামেও তার সেই যন্ত্রণাকে অব্যাহত রাখা হবে। আর যে ব্যক্তি ধারালো কোনো কিছু দিয়ে আত্মহত্যা করবে, তার সেই যন্ত্রণাকেও জাহান্নামে অব্যাহত রাখা হবে।’ (সহিহ বুখারি, খণ্ড ২, হাদিস নং ৪৪৬) এখন যারা ইসলামী অনুশাসনে বিশ্বাসী এবং সে আলোকে নিজেদের জীবন পরিচালনা করেন, তারা কখনো আত্মহত্যা করে নিজেদের পরকালীন জীবনকে জাহান্নামে নিশ্চিত করতে চাইবে না এটাই স্বাভাবিক।
এ ছাড়া আমরা উল্লেখ করতে পারি, পৃথিবীর কোনো ধর্মই আত্মহত্যাকে সমর্থন করে না। সুতরাং অন্যান্য গ্রহণযোগ্য পদক্ষেপের পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষার প্রসারতা যদি নিশ্চিত করা যায় এবং মানবীয় মূল্যবোধ ও নৈতিকতার সমন্বয় যদি বাস্তব জীবনে করা যায়, তাহলেই কেবল এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। নৈতিকতা ও মূল্যবোধ এবং ধর্মীয় শিক্ষার প্রসারতার জন্য শুধু একাডেমিক কার্যক্রমই একমাত্র উপায় ভাবা উচিত নয়। বরং অন্যান্য মাধ্যমকেও কাজে লাগাতে হবে। যেমনÑ প্রত্যেক মসজিদের জুমার খুতবায়, কিংবা ওয়াজ মাহফিলে এসব সামাজিক সমস্যা ও তা থেকে উত্তরণে ইসলামের শিক্ষাগুলোকে সুস্পষ্ট এবং বোধগম্যভাবে তুলে ধরা জরুরি। সামাজিক ও ধর্মীয় নেতারা এ ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারেন। পাশাপাশি সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোও যদি সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তাহলে তা আরো সহজ হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
পরিশেষে বলব, এইচআইভির বিরুদ্ধে আমরা যেমন কার্যকর ভূমিকা সর্বস্তরে গ্রহণ করেছি, তেমনি আত্মহত্যার ব্যাপারেও আমাদের যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। সামাজিক এ মহাব্যাধি থেকে মানবতাকে মুক্ত করা আমাদের সবারই দায়িত্ব।
লেখক : শিক্ষাবিদ
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা