২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

জিকরের ফজিলত

-

জিকর আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ স্মরণ করা, উল্লেখ করা, বর্ণনা করা। যখন জিকর নীরবে হয় তখন এর অর্থ হয় স্মরণ করা। আর জিকর যদি সরবে হয় তখন এর অর্থ হয়, বর্ণনা করা বা উল্লেখ করা। পরিভাষায় জিকর বলা হয় আল্লাহ তা’য়ালার ভয় ও ভালোবাসা হৃদয়ে সদা-সর্বদা জাগ্রত রেখে তারই সন্তুষ্টি অর্জনের ঐকান্তিক কামনায় মন ও মুখে একনিষ্ঠচিত্তে কথাবার্তা, কাজেকর্মে, আচার-আচরণ, চিন্তাচেতনায় তথা জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে মহান আল্লাহকে স্মরণ করা এবং তার বিধান মোতাবেক জীবন পরিচালনা করা। আমার বান্দারা যখন ( হে নবী!) আপনার কছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারেÑ (তাদেরকে বলুন), নিশ্চয় আমি তাদের খুব কাছে আছি। যারা আমাকে ডাকে (স্মরণ করে) আমি তাদের ডাকে সাড়া দেই। কাজেই আমার নির্দেশ মেনে চলা এবং আমার প্রতি ঈমান আনা তাদের একান্ত কর্তব্য। যাতে তারা সৎপথে আসতে পারে। (সূরা আল বাকারা: ১৮৬)
‘আর স্মরণ করতে থাক আপন পালনকর্তাকে মনে-মনে, ক্রন্দরত ও ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় এবং অনুচ্চস্বরে সকাল-সন্ধ্যায়। আর উদাসীনদের দলভুক্ত হয়ো না।’ (সূরা আল আরাফ: ২০৫)
যারা ঈমানদার তারা এমন যে, যখন আল্লাহর নাম নেয়া হয় তখন ভীত হয়ে পড়ে তাদের অন্তর। (সূরা আনফাল: ৯) আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘আমাদের প্রভু আল্লাহ তা’য়ালার প্রত্যেক রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকতে দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং বলতে থাকেন, কে আছ আমাকে ডাক, আমি তার ডাকে সাড়া দেবো, কে আছ আমার কাছে চাও আমি দেবো, কে আছ আমার কাছে পাপ থেকে ক্ষমা চাও আমি তাকে ক্ষমা করব।’ (বুখারি, নবম খণ্ড, অ: দু’আ পৃষ্ঠা ৫৬১) ‘নিশ্চয় আসমান ও জমিন সৃষ্টিতে এবং রাত ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে জ্ঞানীদের জন্য। যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে (সর্বাবস্থায়) আল্লাহকে স্মরণ করে এবং চিন্তা-গবেষণা করে আসমান জমিন সৃষ্টির বিষয়ে, (আর তারা বলে) পরওয়ারদেগার এসব তুমি বিনা কারণে সৃষ্টি করোনি। সব পবিত্রতা তোমারই, আমাদেরকে তুমি দোজখের শাস্তি থেকে বাঁচাও।’ (সূরা আল ইমরান: ১৯০-১৯১) ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করো এবং সকাল-বিকেল (সার্বক্ষণিক) আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করো।’ সূরা আহজাব: (৪০-৪১) আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দিনে এক শ’ বার ‘সুবাহান আল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’ পড়ে তার গুনাহগুলো মাফ করে দেয়া হয় তা সমুদ্রের তামাম ফেনা পরিমাণ (গুনাহ) হলেও।’ ( বুখারি, নবম খণ্ড, অ: দোয়া, পৃষ্ঠা:৫৯৮) আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত। ‘যে আমার স্মরণ (জিকর) থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে তার জীবিকা সঙ্কীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উঠাব।’ সূরা তহা: ১২৪) ‘যে ব্যক্তি মেহেরবান দয়ালু আল্লাহর স্মরণ থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয়, আমি তার জন্য একজন শয়তান নিয়োজিত করে দেই। অতঃপর সেই হয় তার সঙ্গীসাথী।’ সূরা জুখরুফ: ৩৬) ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন আল্লাহর স্মরণ থেকে তোমাদেরকে গাফেল না করে। যারা এ কারণে গাফেল হয়, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত’। সূরা (মুনাফিকুন: ৯) ‘(হে নবী) আপনি আপনার প্রতি ওহিকৃত কিতাব তিলাওয়াত করুন এবং সালাত কায়েম করুন। নিশ্চয় সালাত সব ধরনের অশ্লীল এবং অপছন্দনীয় কাজ থেকে বিরত রাখে। আর আল্লাহর জিকর (সালাতই) সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ জানেন তোমরা যা কিছু করো।’ (সূরা আনকাবুত : ৪৫)
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে আমরা যেন ব্যক্তিগত জীবনে আল্লাহকে স্মরণ করে এর প্রতিফলন ঘটাতে পারি সে চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
লেখক : প্রবন্ধকার


আরো সংবাদ



premium cement