ধর্ম পালন ঐচ্ছিক নয় বাধ্যতামূলক
- মুফতি মুহাম্মাদ শোয়াইব
- ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
ধর্ম মানুষের অপ্রয়োজনীয় বিষয় নয়। বরং একটি পূর্ণাঙ্গ ও সর্বাঙ্গীণ জীবনব্যবস্থা, যার মাধ্যমে দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনকে যাপন করে আখিরাতের অনন্তকালের সুখ-সমৃদ্ধির ব্যবস্থা করা যায়। পশ্চিমা ধ্যান-ধারণায় প্রভাবান্বিত বুদ্ধিজীবীরা ধর্মকে দেশ ও জনগণের উন্নয়ন, শান্তিশৃঙ্খলা ও সমৃদ্ধির পথে বাধা মনে করেন। তাদের দৃষ্টিতে ইসলামের প্রবেশাধিকার সীমিত। ইসলামকে তারা কিছু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে পছন্দ করেন। ধর্মীয় বিধিবিধানকে মসজিদের বাইরে দেখতে নারাজ। কেবল মসজিদেই চলবে। বাইরে সর্বোচ্চ নতুন দোকান উদ্বোধন, ভবন যাত্রা, নতুন গাড়ির মিলাদ ইত্যাদি ধরনের হাতেগোনা কয়েকটি কাজে ধর্মের প্রবেশাধিকার রয়েছে। এর বাইরে যেকোনো জায়গায় ধর্মের নাক গলানো ঠিক নয়।
ইসলাম সম্পর্কে মুসলিম সমাজে এ ধরনের বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিয়েছে পশ্চিমা ও তাদের এদেশীয় অনুসারীরা। ইসলামের প্রতি তাদের এক ধরনের অ্যালার্জি রয়েছে। তারা ধর্মনিরপেক্ষতার জিগির তুলে ধর্মকে রাষ্ট্র থেকে দূরে রাখতে চায়। ধর্মকে মানুষের অপ্রয়োজনীয় ঐচ্ছিক বিষয় বলে গুরুত্বহীন করে তুলতে চায়। অথচ পৃথিবীতে কোনো কালে ধর্মকে উপেক্ষা করা যায়নি। ধর্ম মানুষের প্রাকৃতিক স্বভাব-ঝোঁক। কোনো না কোনো ধর্মে বা ধর্মীয় আচরণে বিশ্বাস করা মানুষের স্বভাবের অংশ। এর বিরুদ্ধাচরণ করা আচরণগত দিক থেকে অন্তহীন স্ববিরোধিতায় লিপ্ত হওয়ার নামান্তর।
ইসলাম বিশ্বজনীন ধর্ম। অন্যান্য ধর্মের দেখাদেখি ইসলামকে আচার-অনুষ্ঠানসর্বস্ব ধর্ম মনে করার সুযোগ নেই। ইসলামের পূর্ণাঙ্গতার সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম। তোমাদের ওপর আমার নিয়ামত পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে ইসলামকে (চিরকালের জন্য) পছন্দ করে নিলাম।’ (সূরা মায়েদা, আয়াত : ৩)
আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ, ইসলামে সম্পূর্ণরূপে প্রবেশ করো আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কোরো না। অবশ্যই শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ২০৮)
মুমিন জীবনের খুঁটিনাটি সব কিছু কুরআন ও সুন্নাহর মধ্যে বিদ্যমান। এগুলো মান্য করা মুমিনের জন্য অপরিহার্য। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তবে তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশে ইমান রাখো এবং কিছু অংশ অস্বীকার করো? তাহলে বলো, যারা এরূপ করে তাদের শাস্তি ছাড়া আর কী হতে পারে; যে পার্থিব জীবনে তাদের জন্য থাকবে লাঞ্ছনা। আর কিয়ামতের দিন তাদের নিয়ে যাওয়া হবে কঠিনতর আজাবের দিকে? তোমরা যা কিছু করো, আল্লাহ সে সম্পর্কে উদাসীন নন।’ (সূর বাকারা, আয়াত : ৮৫)
ইসলাম আল্লাহর মনোনীত সর্বশেষ দ্বীন। সৃষ্টিকর্তা যে ধর্ম মনোনীত করেছেন, সেটি মান্য করাই আমাদের কাম্য। পবিত্র কুরআনে এসেছে : ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য দ্বীন কেবল ইসলাম।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৯)।
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন অবলম্বন করতে চায়, তার থেকে সে দ্বীন কবুল করা হবে না এবং যারা আখিরাতে মহা ক্ষতিগ্রস্ত, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ৮৫)
মহানবী সা: ইরশাদ করেন, ‘যদি মূসা আ: জীবিত থাকতেন, তা হলে তাঁকেও আমার অনুসরণ করতে হতো।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৪৭৩৬, বাবুল ইমান, বায়হাকি, হাদিস : ১৭৬)
এর অর্থ এই নয় যে, ইসলামী রাষ্ট্রে কোনো অমুসলিম নিরাপদে বসবাস করতে পারবে না। কেননা ইসলাম মানবতার ধর্ম। জাতি-ধর্ম, বংশ-বর্ণ নির্বিশেষে সবার প্রতি, এমনকি জীব-জানোয়ারের প্রতিও ন্যায়বিচার, সহমর্মিতা, সৌজন্যমূলক আচরণ করার নির্দেশ রয়েছে এই ধর্মে। কুরআনুল কারিম শিক্ষা দিয়েছে, ‘হে মুসলিমগণ! নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের আদেশ করেছেন যে, তোমরা আমানতগুলো তার হকদারকে আদায় করে দেবে এবং যখন মানুষের মধ্যে বিচার করবে, তখন ইনসাফের সাথে বিচার করবে। নিশ্চিত জেনে রেখো, আল্লাহ তোমাদের যে বিষয়ে উপদেশ দেন, তা অতি উৎকৃষ্ট। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছু শোনেন, সব কিছু দেখেন।’ (সূরা নিসা, আয়াত : ৫৮)
হজরত জারির ইবনে আবদুল্লাহ রা: থেকে বর্ণিত, রাসূল সা: ইরশাদ করেন, ‘যারা মানুষের প্রতি দয়া করে না, আল্লাহ তাদের প্রতি দয়া করেন না। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬১৭২)
ইসলাম গ্রহণের জন্য কাউকে বাধ্য করা যায় না। বরং দরদের সাথে মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দেয়া যায়। তবে যারা মুসলিম, তাদের জন্য ইসলামের রীতিনীতি পরিপালন করা বাধ্যতামূলক। সেখানে নিজেকে স্বাধীন মনে করা ঠিক নয়। ধর্ম পালনে গড়িমসি করার জন্য অনেকে ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রশ্ন তোলেন, তা কিন্তু সঠিক নয়। যারা মুসলিম, তাদের জন্য ধর্ম পালন অবশ্যই বাধ্যতামূলক। ক্ষমতাশালী কর্তৃপক্ষ বাধ্য করতে পারবেন। বনি ইসরাইল হজরত মূসা আ:-এর প্রতি ইমান আনার পর যখন তাওরাতের বিধিবিধান পালনে টালবাহানা করে, তখন তাদের ওপর পাহাড় তুলে ধরা হয়। কুরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘দ্বীন গ্রহণের বিষয়ে কোনো জবরদস্তি নেই। হেদায়েতের পথ গুমরাহি থেকে পৃথকরূপে স্পষ্ট হয়ে গেছে। এরপর যে ব্যক্তি তাগুতকে অস্বীকার করে, আল্লাহর প্রতি ইমান আনে, সে এক মজবুত হাতল আঁকড়ে ধরল, যা ভেঙে যাওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। আল্লাহ সব কিছু শোনেন ও সব কিছু জানেন।’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ২৫৬)
লেখক : প্রবন্ধকার
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা