২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ভোটদানে ইসলামের বিধান

-

ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমনকি বিভিন্ন সংগঠন, সমিতি ইত্যাদির নির্বাচনে আমরা ভোট দিয়ে থাকি। এক সময় ছিল যখন যুদ্ধজয়ের মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদল হতো। ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থায় জনগণের রায় তথা বাইয়াত বা আনুগত্য প্রকাশের মাধ্যমে খলিফা নির্বাচিত হতো। বর্তমানের ভোট দেয়া তারই ধারাবাহিকতা। তাফসিরে মারেফুল কুরআন বাংলা অনুবাদের ৩১৫ পৃষ্ঠায় সূরা মায়িদার আট নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যায় ভোট দেয়ার তিনটি দিক উল্লেখ করা হয়েছে।
সাক্ষ্যদান
ভোট দিতে ভোট দাতার পক্ষ থেকে সাক্ষ্য দেয়া হয় যেÑ আমার মতে, এ ব্যক্তি ব্যক্তিগত যোগ্যতা সততা ও বিশ^স্থতার দিক দিয়ে জাতির প্রতিনিধি হওয়ার যোগ্য। এখন চিন্তা করা প্রয়োজন, আমাদের প্রতিনিধিদের মধ্যে ক’জন এমন রয়েছেন, যাদের বেলায় এ সাক্ষ্য সত্য ও বিশুদ্ধ হতে পারে। দুর্ভাগ্যের বিষয়, আমাদের জনগণ নির্বাচনকে একটি হার-জিতের খেলা মনে করেন। এ কারণে কখনো পয়সার বিনিময়ে, কখনো চাপের মুখে, কখনো সাময়িক বন্ধুত্ব এবং সস্তা প্রতিশ্রুতির ভরসায়, ব্যক্তিস্বার্থে, দলীয়স্বার্থে, লোভ-লালসায় ভোটাধিকার প্রয়োগ করি। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষিত ধার্মিক মুসলমানও চিন্তা করেন না যে, অযোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ার মতো মহাপাপ করে খোদায়ি অভিশাপ ও শাস্তির উপযুক্ত হয়ে যাচ্ছি।
সুপারিশ করা
ভোটদাতা ব্যক্তি যেন সুপারিশ করে যে, অমুক প্রার্থীকে প্রতিনিধিত্ব দেয়া হোক। এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছেÑ ‘যে ব্যক্তি উত্তম ও সত্য সুপারিশ করবে, যার জন্য সুপারিশ করে, তাকে তার পুণ্য থেকে অংশ দেয়া হবে এবং যে ব্যক্তি মন্দ ও মিথ্যা সুপারিশ করবে, সে তার মন্দ কর্মের অংশ পাবে। এর ফলে এ প্রার্থী নির্বাচিত হয়ে তার কর্মজীবনে যেসব ভ্রান্ত ও অবৈধ কাজ করবে, তার পাপ ভোটদাতাও বহন করবে।
ওকালতি
ভোটদাতা প্রার্থীকে নিজ প্রতিনিধিত্বের জন্য উকিল নিযুক্ত করে। কিন্তু এ ওকালতি যদি ভোটদাতার ব্যক্তিগত অধিকার সম্পর্কে হতো এবং এর লাভ-লোকসান কেবল সেই পেত, তবে এর জন্য সে নিজেই দায়ী হতো। কিন্তু এখানে ব্যাপারটি তেমন নয়। কেননা, এ ওকালতি এমন সব অধিকারের সাথে সম্পৃক্ত, যাতে তার সাথে জনগণ শরিক, কাজেই কোনো অযোগ্য ব্যক্তিকে স্বীয় প্রতিনিধিত্বের জন্য ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করলে জনগণের অধিকার খর্ব করার পাপও ভোটদাতার কাঁধে চেপে বসবে।
উল্লিখিত তিনটি ক্ষেত্রে সৎ, ধর্মভীরু ও যোগ্য ব্যক্তিকে ভোট দেয়া যেমন সওয়াবের কাজ এবং এর সুফল ভোটদাতাও প্রাপ্ত হন, তেমনি অধর্মপরায়ণ অযোগ্যকে ভোট দেয়া মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে মন্দ সুপারিশ ও অবৈধ ওকালতির অন্তর্ভুক্ত এবং এর পাপের ভাগিদার হওয়াও মারাত্মক ফলাফল ভোটদাতার আমলনামায় লিপিবদ্ধ হয়।
ইসলামী বিধান মোতাবেক, আপনার অধিকার বা সম্পদ কেউ জোর করে নিয়ে যেতে চাইলে তা রক্ষা করতে গিয়ে আপনি যদি মারাও যান, তবে শহীদ হিসেবে গণ্য হবেন। ঠিক তেমনি আপনার ভোটাধিকার রক্ষায়ও আপনাকে সচেষ্ট হতে হবে।
তাই সবাইকে দুনিয়াবি স্বার্থের দিকে না তাকিয়ে আল্লাহর নির্দেশনা মোতাবেক আমানতকে যোগ্যস্থানে অর্পণ করা প্রয়োজন।
লেখক : অধ্যক্ষ, ফুলগাঁও ফাজিল ডিগ্রি মাদরাসা, লাকসাম, কুমিল্লা

 


আরো সংবাদ



premium cement