ইবাদত কবুলের পূর্বশর্ত হালাল রিজিক
- জাফর আহমাদ
- ১১ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
ইবাদত বা আমলে সালেহ বা সৎকাজ কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত হলো হালাল রিজিক ভক্ষণ করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে রাসূল! পাকপবিত্র জিনিস খাও এবং সৎকাজ করো। তোমরা যা কিছু করো না কেন, আমি তা ভালোভাবেই জানি।’ (মুমিনুন : ৫১) সৎকাজ করার আগে পবিত্র ও হালাল জিনিস খাওয়ার নির্দেশের মধ্যে একদিকে পরিষ্কার ইঙ্গিত রয়েছে, হারাম খেয়ে সৎকাজ করার কোনো মানে হয় না। সৎকাজের জন্য প্রথম শর্ত হচ্ছে হালাল রিজিক খাওয়া।
হালাল রিজিক ভক্ষণ করার জন্য কুরআন ও হাদিস যতটা গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, আমরা বিষয়টাকে ততটা গুরুত্ব দেই না। সমাজের সর্বস্তরেই এটি আজ একটি গুরুত্বহীন, অবহেলিত ও মামুলি বিষয় হিসেবে গণ্য করা হয়। এমনকি এ বিষয়ে যারা জানেন এবং হালাল-হারামের নিয়মিত চর্চা করেন, তাদের কাছেও বিষয়টি অস্পষ্ট। তাদেরকে হালাল রিজিক, হালাল উপার্জন এবং উপার্জনের উৎসমূল নিয়ে তেমন একটা চিন্তাভাবনা করতে দেখা যায় না। যারা ইসলামের কথা বলেন, বিভিন্নভাবে ইসলামের খেদমত করছেন, কুরআন-হাদিসের শিক্ষা বিস্তার করেন, ইবাদতে আমাদের নেতৃত্ব দেন, তাদের মধ্যে অনেককে দেখা যায়; উপার্জনের উৎসমূল নিয়ে তেমন মাথা ঘামান না। আল্লাহর রাসূল সা:-এর সেই বিখ্যাত হাদিসও এখানে প্রণিধানযোগ্য যে, ‘হাশরের ময়দানে মানুষ সাতটি প্রশ্নের উত্তর না দেয়া পর্যন্ত এক কদম সামনের দিকে এগোতে পারবে না। এই সাতটি প্রশ্নের দু’টি প্রশ্ন এমন হবে যে, ‘কোন পথে আয়-উপার্জন করেছ? এবং কোন পথে তা ব্যয় করেছ?’
যে বিষয়টি এখানে আনা হয়েছে, তা ব্যাপক আলোচনার দাবি রাখে। আর একটি সেক্টর ও ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করলে আরো ব্যাপক হবে। সূরা মুমিনুনের ৫১ নম্বর আয়াতটি অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত। যার মানে হচ্ছেÑ ‘হালাল খাও, ইবাদাত করো।’
রাসূল সা: বলেছেন, আবু হোরায়রা রা: থেকে বর্ণিতÑ ‘মানুষের সম্মুখে এমন এক সময় আসবে, যখন কোনো ব্যক্তি অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্রে তা হালাল বা হারাম পন্থায় অর্জিত হচ্ছে কি-না এ কথা মোটেই চিন্তা করবে না।’ (বুখারি)
উদাহরণ-১. লোকটি সুদ গ্রহীতা বা সুদ দাতা, ঘুষ গ্রহীতা বা ঘুষদাতা, কালোবাজারি, অবৈধ মজুতদার, খাদ্যে ভেজাল মিশ্রণকারী, ট্যাক্স-ভ্যাট ফাঁকিবাজ, চোরাকারবারি, ওজনে কমবেশকারী এককভাবে প্রত্যেকটির অধিকারী অথবা এর কোনো একটির অধিকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, ব্যক্তিরা সবাই। তিনি একটি মাদরাসা বা স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, এলাকার কোনো মসজিদের সভাপতি বা সেক্রেটারি অথবা মুতাওয়াল্লি, প্রতি মাসে তার ঈড়হঃৎরনঁঃরড়হ সবার ঊর্র্ধ্বে। এখন প্রশ্ন হলো, যিনি এই কোরবানিগুলো করছেন বা ঈড়হঃৎরনঁঃড়ৎ, পক্ষান্তরে যারা এর সুবিধাভোগী বা ইবহরভরপরধৎু উভয়ের আয় বা উপার্জন কি হালাল?
উদাহরণ-২. দুইজন ব্যক্তি, যাদের একজন অন্ধ, অন্যজন ল্যাংড়া। একজনের দু’টো পা নেই কিন্তু দু’টো চক্ষু আছে, অন্যজনের দু’টো চক্ষু নেই কিন্তু দু’টো পা আছে। এ দুইজনকে একত্র করলে একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষের রূপ পাওয়া যায়। ল্যাংড়া তার দু’টো চক্ষু দ্বারা নয়নাভিরাম পৃথিবীর দৃশ্য দেখতে পারে। কিন্তু দু’টো পায়ের অভাবে পৃথিবীর অনেক কিছুর ভোগ ব্যবহার বা মনের স্বাদ-আহলাদ চরিতার্থ করতে পারে না। চোখের সামনেই ওই যে নাগালের প্রায় কাছাকাছি একজনের গাছে আম ঝুলে আছে। কিন্তু আপসোস, দু’টো পায়ের অভাবে খেতে পারছি না। এমন সময় খটখট শব্দ তুলে অন্ধ তার সামনে দিয়ে পথ চলছে। দুষ্টু ল্যাংড়ার মনে ঢেউ খেলে গেল, আমি আর অন্ধ দুইজনে মিলে গেলেই তো ওই গাছের আম খেতে পারি। সাথে সাথে ল্যাংড়া অন্ধকে প্রস্তাব পেশ করল, এই অন্ধ, আম খাবি? ভাই! আমি একজন অন্ধ মানুষ, আম পাবো কোথায়? পৃথিবীটার কোথায় কি আছে তা তো আমি দেখতে পাই না। এবার ল্যাংড়া বলল, আমি একজন ল্যাংড়া, পায়ের অভাবে ওই যে আম ঝুলে আছে, খেতে পারছি না। তুই আমাকে তোর কাঁধে নিয়ে চল, আমি তোকে পথ দেখাব। যেই কথা সেই কাজ।
এবার মালিক আমসহ ল্যাংড়াকে প্রহার শুরু করল। ল্যাংড়া বলছে, বাপুরে! আমার কি দোষ? আমি একজন ল্যাংড়া, আমার দু’টো পা নেই, আমার কি কোনো সাধ্য আছে আম পাড়ার? ব্যাটা অন্ধ তার কাঁধে করে আমাকে নিয়ে এসেছে বলেই তা পেড়েছি। মালিক, তাই তো। পেটা ব্যাটা অন্ধকে। এবার অন্ধ বলছে বাপুরে! আমি একজন জন্ম অন্ধ, আমার দু’টো চক্ষু নাই, আমি কি জানি কোথায় আম গাছ বা কোথায় কাঁঠাল গাছ? ব্যাটা ল্যাংড়া আমাকে প্রস্তাব করেছে, তাই তাকে কাঁধে তুলে এখানে নিয়ে এসেছি, মালিক দেখল, তাই তো। মালিক পড়ল বিপাকে। কিন্তু পরক্ষণেই মনের মধ্যে উদয় হলো, দোষ তো দুইজনেরই সমান।
আমরা জনগণ অন্ধ আর আমাদের নেতৃত্ব হলো ল্যাংড়া। আমরা তাদেরকে কাঁধে করে ক্ষমতার ওই চেয়ারটায় বসাই। মনে রাখবেন, ওই চেয়ারে বসে যতগুলো অকাজ, কু’কাজ ও অবৈধ উপার্জন সে করবে, তার ভাগ কি অন্ধ-ল্যাংড়ার অনুপাতে হবে না?
উদাহরণ-৩. আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় লক্ষ্য করা যায়, বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর ছেলে উত্তরাধিকারীরা বিভিন্ন কলাকৌশল অবলম্বন করে মৃত ব্যক্তির মেয়ে উত্তরাধিকারীদের বঞ্চিত করে। কোনো কোনো এলাকায় মেয়েরা ওয়ারিশ গ্রহণ করবে, এটিকে ঘৃণার বিষয় মনে করা হয়। এমন কুপ্রথাও প্রচলিত আছে যে, ‘বাপের বাড়ির মিরাস গ্রহণ করলে সংসারে অশান্তি নেমে আসে এবং সংসারের উন্নতি হয় না।’ ফলে মেয়েটির স্বামী তাকে হক আনতে নিষেধ করে। মূলত সমাজের সুবিধাবাদী লোকেরাই নিজেদের বদ-মতলব চরিতার্থ করার জন্য এ কুপ্রথাগুলো গড়ে তুলেছে। তারা এমন এক পরিবেশ সৃষ্টি করে, যাতে মেয়েটি তার অংশ নিতে এগিয়ে না আসে। এ সমস্ত লোক দুষ্টু, লোভী ও স্বার্থপর। বোনদের সম্পদ অন্যায়ভাবে আত্মসাতের দরুণ অবশ্যই এদেরকে আল্লাহর বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বোন মনে করে, অংশ চাইতে গেলে ভাই রাগ করবে অথবা ভাইয়ের সাথে মন কষাকষি হবে। ফলে সে তার অংশ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় অথবা চক্ষুলজ্জায় মাফ করে দেয়। এ দিকে ধূর্ত ভাইটি নীরব ভূমিকা পালন করতে থাকে। মনে রাখা প্রয়োজন, এ ধরনের কাজ ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয়। এ ক্ষেত্রে ভাইয়ের কর্তব্য হবে, যেহেতু আদরের বোনটি নিজের অংশ চাইতে লজ্জা পাচ্ছে, তাই স্বেচ্ছায় বোনের অংশ ভাগ করে তাকে বুঝিয়ে দেয়া। রাসূল সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কারো উত্তরাধিকার হরণ করে, আল্লাহ তায়ালা তার জান্নাতের উত্তরাধিকার হরণ করবেন।’ (ইবনে মাজাহ)
এ রকম হাজারো উদাহরণ পেশ করা যাবে। আপনারা চিন্তা করুন, এদের ইবাদত-বন্দেগি কি কখনো কবুল হবে?
লেখক : ব্যাংকার
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা