২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

আলেমদের ঐক্য প্রয়োজন

-

আমরা দেখেছি, অতীতের অনেক সরকারের দাম্ভিকতা, দমন-পীড়ন, নির্যাতন ও ইসলামবিরোধী আচরণের কথা মুছে যেতে না যেতেই আরো অত্যাধুনিক পন্থায় বর্তমানে দমন, পীড়ন, নির্যাতন ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী কার্যকলাপ। আমাদের দেশীয় কিছু স্বার্থবাদী, সুযোগসন্ধানী জাতীয় নেতা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর পুনরায় ক্ষমতার মোহে এবং বিদেশী প্রভুদের ইঙ্গিতে এ দেশের মুসলমান ও সাধারণ জনগণের কথা একেবারে ভুলে গেলেও ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তারা বুঝতে শুরু করেন যে, ইসলাম ও সাধারণ মানুষের স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডের কারণে আমাদের পতন হয়েছে। সুতরাং আবার ইসলাম ও জনগণের স্বার্থের কথা জোরগলায় বলতে হবে যাতে পুনরায় ক্ষমতায় যেতে পারি।
সমগ্র বিশ্ব আজ চরম অশান্তি ও হতাশায় নিমজ্জিত। সারা বিশ্ব ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের যৌথ ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে আবদ্ধ। মুসলিম বিশ্ব প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তাদের গোলামিতে আবদ্ধ। এ মুহূর্তে দ্বীপ্ত ঈমানি চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বিশ্ব মুসলিমদের সুদৃঢ় ঐক্য ও সাহসী প্রয়াস একান্ত প্রয়োজন। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ হওয়া সত্ত্বেও আলেমদের বিশৃঙ্খলা, ইসলামী দলগুলোর অনৈক্য, পরস্পরের প্রতি হিংসাবিদ্বেষ, সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির দরুন তাগুতি শক্তিগুলো নিজেদের ব্যক্তিগত ও দলীয় স্বার্থ চরিতার্থ করার নিমিত্তে দেশ শাসনের নামে দেশে সর্বপ্রকার অশান্তি, নৈরাজ্য, গুম-খুন, সন্ত্রাস, নারী নির্যাতন ছড়িয়ে দিয়েছে।
স্বাধীনতা লাভের দীর্ঘ ৪৭ বছর পার হলেও এ পর্যন্ত শুধু ক্ষমতার হাতবদল হয়েছে। কিন্তু সর্বসাধারণের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। শান্তির সব পথ রুদ্ধ করে অশান্তির শাহী ফটক উন্মুক্ত করে শান্তি পাওয়া সুদূর পরাহত করা হয়েছে। যাই হোক, একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, এ অঞ্চলের মুসলমানদের মধ্যে ধর্মীয় ব্যাপারে উদারতা, মহানুভবতা, পরম সহিষ্ণুতা, অসাম্প্রদায়িকতা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। আমরা নিজ ধর্মে গভীরভাবে অনুরাগী বটে, কিন্তু পরধর্মে মোটেই অসহিষ্ণু নই। যুগের পর যুগ, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আমরা পাশাপাশি বাস করছি। হচ্ছে না ধর্মীয় কারণে মারামারি, হানাহানি, সঙ্ঘাত-সংঘর্ষ। স্বার্থান্বেষীরা নিজেদের ঘৃণ্য ও হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য কখনো উত্তেজনা সৃষ্টি করতে চাইলেও তাতে ধর্মীয় রূপ আরোপ করতে সক্ষম হয়নি। আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ, মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, দ্বীনদার মুসলমানরাই সর্বাগ্রে এগিয়ে এসেছেন তা প্রতিরোধে। ওলামায়ে কেরামরা স্পষ্ট বলেছেন, এর পেছনে পবিত্র ধর্ম ইসলামের, আল্লাহ রাসূলের, কুরআন-হাদিসের কোনো সমর্থন নেই। এই উদারতা, মহানুভবতা, পরমত সহিষ্ণুতা ও অসাম্প্রদায়িকতা শিক্ষা দিয়েছেন মানবতার মহান শিক্ষক হজরত মুহাম্মদ সা:। তারই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চলেছেন হাক্কানি ওলামা-মাশায়েখরা।
অতঃপর ওলামায়ে কেরামদের খেদমতে বলতে চাই-খাবার দাওয়াত, ওয়াজ মাহফিল, কুরআন খতম এবং বুখারি খতম ও অন্যান্য দাওয়াতে আমাদের একই টেবিলে বসতে আপত্তি যদি না থাকে, তাহলে তাগুতি শক্তির হাত থেকে ইসলামকে রক্ষার জন্য এক টেবিলে বসতে আপত্তি কেন? অথচ আমরা নিজেরাই তো বিভিন্ন মাহফিলে ও জুমার খুতবায় কুরআনের এই আয়াতের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে মানুষকে শুনাই। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘আর তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে (দ্বীন ইসলামকে) একত্র হয়ে (সুদৃঢ়ভাবে) আঁকড়ে ধরো। আর পরস্পরের মধ্যে বিচ্ছিন্ন হয়ো না’ (আল ইমরান-১০৩)। আলোচ্য আয়াতে মুমিনদেরকে আল্লাহ পাকের প্রতি ভয় এবং তার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছেন। পরিতাপের বিষয়, কুরআনের আলোচনা আমরা মানুষকে নসিহত করি, কিন্তু আমরা নিজেরাই তা বাস্তব জীবনে আমল করি না।
পরিশেষে বলতে চাই, বর্তমান প্রেক্ষাপটে আলেমদের দায়িত্ব দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় আজ হক্কানি ওলামা-মাশায়েখের ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে। সক্রিয় হতে হবে, বৈজ্ঞানিক কর্মপন্থা গ্রহণ করতে হবে। চালিয়ে যেতে হবে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা। এর কোনো বিকল্প নেই। আমাদের এই জমিন আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সেরা দান। আমরা সৃষ্টির সেরা জীব। এই জমিন ১৬ কোটি মুসলমানের জায়নামাজ। রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকতেই পারে, কিন্তু আমরা সবাই ইসলামের প্রতি আনুগত্য ও আস্থাশীল। তাই সময়ের দাবি হচ্ছে, রাজনীতির ঊর্ধ্বে থেকে সব হক্কানি ওলামা-পীর-মাশায়েখের ঐক্যবদ্ধ হওয়া। জাতির সামনে দ্বীনি কর্মসূচি পেশ করা এবং তা বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা। অতএব আসুন, আমরা সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে এই দায়িত্ব পালন করি।
লেখক : খতিব ও ইমাম, আবুল খায়ের চৌধুরী জামে মসজিদ, চট্টগ্রাম


আরো সংবাদ



premium cement