সৃষ্টির প্রতি মানুষের দায়িত্ব
- ড. মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ
- ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০
দায়িত্ব ও দায়িত্ববোধ ইসলামের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য। এখানে প্রত্যেকেই তার নিজ নিজ অবস্থান থেকে কোনো না কোনো কিছুর ব্যাপারে দায়িত্বশীল। (সহিহ বুখারি) আল্লাহ তায়ালা মানবজাতিকে এমনি এমনিই সৃষ্টি করেনি। বরং কিছু উদ্দেশ্য নিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে। সৃষ্টির শুরুতে আল্লাহ তাই-ই জানিয়েছিলেন ফেরেশতাদেরকে। আল্লাহ বলেন, ‘স্মরণ করুন সে সময়ের কথা, যখন আপনার প্রভু ফেরেশতাদেরকে বলেছিলেন আমি পৃথিবীতে আমার খলিফা (প্রতিনিধি) সৃষ্টি করতে যাচ্ছি...।’ (সূরা বাকারা : ৩০) ‘খলিফা’ শব্দটিও কিছু দায়িত্বের প্রতি ইঙ্গিত করে। এ দায়িত্বকে আমরা প্রাথমিকভাবে দুই ভাগে প্রকাশ করতে পারি। ১. সৃষ্টিকর্তার প্রতি দায়িত্ব এবং ২. সৃষ্টির প্রতি দায়িত্ব।
প্রথমত সৃষ্টিকর্তা তথা আল্লাহর প্রতি মানবজাতির প্রথম দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো তাঁকে স্রষ্টা হিসেবে মেনে নিয়ে তাঁর উপাসনায় নিজেকে আত্মনিয়োগ করা। কুরআন ও হাদিসে মানব সৃষ্টির বিভিন্ন উদ্দেশ্যর প্রতি ইঙ্গিত থাকলেও সরাসরি এ বিষয়টিকেই উল্লেখ করা হয়েছে। (সূরা আজ-জারিয়াত : ৫৬) তবে ইবাদত সম্পর্কে আমাদের কিছু ভুল ধারণা রয়েছে। আর তা হলো, সালাত, সাওম, জাকাত ইত্যাদি ফরজ বিষয়গুলোকেই শুধু ইবাদত মনে করা। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বিষয়টি মোটেও তা নয়। বরং মানবজীবনের প্রত্যেকটি কাজ যা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশিত সেগুলোকে পালন করাও ইবাদত। প্রত্যেকটি কাজে আল্লাহকে স্মরণ রেখে এবং তারই সন্তুষ্টির জন্য করলেই তা ইবাদত হিসেবে সাব্যস্ত হবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কেউ যদি তার সংসার পরিচালনার জন্য বাজার সওদা এ উদ্দেশ্যে করে যে এটি শরিয়ত কর্তৃক দেয়া কর্তব্য তাহলে এটিও সাদাকা হিসেবে গণ্য হবে এবং পরকালে তার প্রতিদান পাবে। অবসর সময়ে যদি কেউ কক্সবাজারে কিংবা নীলগিরিতে বেড়াতে যায় এবং সেখানের সৌন্দর্য উপভোগ করে বলে ‘সুবহানাল্লাহ’ এবং আল্লাহ সৃষ্টির সৌন্দর্য বুঝার চেষ্টা করে, তা হলে তার এ ভ্রমণও ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে। কিন্তু এ কথা জেনে রাখা দরকার, ইবাদতের চূড়ান্ত অবস্থান হলো ফরজ কাজগুলো এবং সাধারণ অবস্থান হলো সব বৈধ কাজ। আবার হারাম বা নিষিদ্ধগুলো থেকে নিজেকে বিরত রাখাও একটা ইবাদত। কুরআন বলে, রাসূল সা: তাদের জন্য যা কিছু নিয়ে এসেছেন তা তোমরা গ্রহণ করো এবং যা কিছু নিষেধ করেছেন তা ছেড়ে দাও। (সূরা আল-হাশর : ৭)
দ্বিতীয়ত, আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি মানুষের দায়িত্বকে আমরা তিন ভাগে ভাগ করতে পারি। ১. ব্যক্তির নিজের প্রতি দায়িত্ব, ২. অন্যান্য মানুষের প্রতি দায়িত্ব এবং ৩. অন্য সব সৃষ্টি যথাÑ পশু-পাখি, প্রাণী, জীব-জড় ও সব প্রকৃতির প্রতি দায়িত্ব।
১. ব্যক্তির নিজের প্রতিও দায়িত্ব রয়েছে। প্রথমত তার নিজের জীবন, শরীর স্বাস্থ্য একটা আমানত। এটিকে সুস্থ ও সুন্দর রাখার দায়িত্ব তার। ইচ্ছে করে এসব দায়িত্বের অবহেলা করলে তার জবাবদিহিতা করতে হবে। নিজের জীবনকে সে শেষ করতে পারবে না। আত্মহত্যা করতে কুরআন নিষেধ করেছে। শুধু তাই নয়, শরীরের জন্য ক্ষতিকারক বিষয়গুলোকেও তার জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
২. অন্যান্য মানুষের প্রতি দায়িত্ব পালন করাও ব্যক্তির ওপর কর্তব্য। এ দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্ভর করবে ব্যক্তির সামাজিক, অর্থনৈতিকসহ অন্যান্য অবস্থার ওপর। যেমন একজন সাধারণ মানুষের দায়িত্ব একজন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব এক নয়। প্রধানমন্ত্রী তার রাষ্ট্রের প্রত্যেকের ব্যাপারে দায়িত্বশীল। অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে এটি ব্যক্তির, পরিবার, আত্মীয়, প্রতিবেশী, সমাজ রাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে বিশ্বমানবতার পর্যায়ে পৌঁছায়। (সূরা বনি ইসরাইল : ২৩-২৬) এ ছাড়াও ধনীদের কাছে গরিবদের হক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। (সূরা আজ-জারিয়াত : ১৯) রাসূল সা: একটি হাদিসে বিশ্বমানবতার প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে মুমিন মুসলিমদেরকে বুঝাতে তাদেরকে একটি শরীরের সাথে তুলনা করেন। যেখানে একটি অঙ্গও যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে পুরো শরীরই অসুস্থ হয়ে পড়ে। (সহিহ বুখারি)
৩. মানুষের সর্বশেষ দায়িত্ব হলো সব সৃষ্টি জগতের প্রতি। পশু, পাখি থেকে শুরু করে গাছপালাসহ প্রকৃতির প্রত্যেকটি বিষয়ের প্রতি তাদের দায়িত্ব হলোÑ সেগুলোকে বিনা কারণে নষ্ট করবে না। প্রয়োজনানুযায়ী ব্যবহার করবে। তাদেরকে সংরক্ষণ করার চেষ্টা করবে, যাতে পরবর্তীরা সেসব থেকে বঞ্চিত না হয়ে উপকার লাভ করতে পারে। সহিহ বুখারির এক হাদিসে এসেছে, রাসূল সা: বলেছেন, ‘একজন মহিলাকে এ জন্য জাহান্নামে দেয়া হয়েছে যে, সে একটি বিড়ালকে বেঁধে রেখেছিল, তাকে খেতে দেয়নি এবং শেষ পর্যন্ত বিড়ালটি মারা গিয়েছিল।’ অন্য হাদিসে রাসূল সা: নির্দেশ দিয়েছেন, তোমরা যদি সাগরের মাঝেও থাকো তবুও পানির অপচয় করো না। এভাবে প্রকৃতির অন্যান্য সৃষ্টির প্রতি আমাদের দায়িত্বকে গুরুত্বের সাথে তুলে ধরা হয়েছে।
একজন ব্যক্তি যদি এসব দায়িত্ব সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান লাভ করে, তবেই সে তা যথার্থভাবে পালন করতে সক্ষম হবে। এভাবে একজন ব্যক্তি প্রকৃতভাবে অন্যের জন্য কল্যাণকামী হয়ে উঠতে পারে। মুমিন-মুসলিমের তাই প্রাথমিক দায়িত্ব হলোÑ এসব সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করা। কুরআন ও হাদিস ভিত্তিক সঠিক জ্ঞানই তাকে দায়িত্ববান করে তুলতে পারবে। সফলতা এনে দিতে পারবে দুনিয়া ও আখিরাতের উভয় জীবনে। এটিই আমাদের ইহজীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য হওয়া উচিত।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা