মুমিনের গুণাবলি
- মুফতি মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম
- ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০
মানুষ আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে সেরা ও সম্মানিত সৃষ্টি। আল্লাহ তায়ালা মানুষের মধ্য থেকেই প্রেরণ করেছেন নবী-রাসূল। আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন নিজ কুদরতের হাতে, ফেরেশতাদের নির্দেশ দিয়েছেন আদি মানব আদম আ:কে সিজদা করতে, স্থান দিয়েছেন জান্নাতে। মানব জাতির প্রতিই নাজিল করেছেন আসমানি গ্রন্থ। আল্লাহ তায়ালা চান, মানব জাতি সিরাতুল মুস্তাকিমে চলুক এবং এমন গুণাবলি অর্জন করুক, যার ফলে দুনিয়া ও আখেরাতে শান্তিতে থাকতে পারবে। কিন্তু দুনিয়ার মানুষ দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। একদল তাদের স্রষ্টার কথামতো জীবন পরিচালনা করছে, স্রষ্টার আদেশ-নিষেধ মান্য করছে। আরেক দল তাদের স্রষ্টার কথামতো জীবন পরিচালনা করছে না, স্রষ্টার আদেশ-নিষেধ মান্য করছে না। যারা নিজ রবের নির্দেশমতো জীবন পরিচালনা করছে, তারাই হলো আল্লাহর বান্দাহ এবং খাঁটি মুমিন।
খাঁটি মুমিনের গুণাবলি : সূরা ফুরকানের ৬৩ নম্বর আয়াত থেকে ৬৮ নম্বর আয়াতে বর্ণিত খাঁটি মুমিনের গুণাবলি নি¤œরূপ :
সব কাজকর্ম আল্লাহর মর্জি অনুযায়ী করে : খাঁটি মুমিনের প্রথম গুণ হলো তার বিশ্বাস, চিন্তা-চেতনা, ইচ্ছা-আকাক্সা এবং আচার-আচরণ সবই প্রভুর মর্জি মোতাবেক হয়। যেসব কাজকর্মে আল্লাহ তায়ালা রাজি নন, সেসব কাজ তারা আদৌ করে না।
জমিনে নম্রভাবে চলাফেরা করে : খাঁটি মুমিনের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, চক্ষু, কর্ণ, হাত, পা ইত্যাদি আল্লাহর সামনে হীন ও অক্ষম হয়ে থাকে। আল্লাহভীতির কারণে তারা বিনম্র হয়ে ও দুর্বলভাবে চলাফেরা করে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনÑ ‘রহমানের (আল্লাহর) বান্দাহ তারাই যারা জমিনে নম্রভাবে চলাফেরা করে।’ (সূরা ফুরকান- ৬৩)।
অজ্ঞ লোকদের কথার জবাব কটুকথা দিয়ে দেয় না : খাঁটি মুমিন তারা যারা মূর্খদের জবাবে নিরাপত্তার কথাবার্তা বলে, যাতে অন্যরা কষ্ট না পায় এবং নিজেরা গুনাহগার না হয়। আল্লাহর বাণীÑ ‘যখন অজ্ঞ লোকেরা তাদেরকে সম্বোধন করে (কটুকথা) বলে, তারা এর প্রতিবাদ করে না বরং প্রশান্তিমূলক কথাবার্তা বলে।’ আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনÑ ‘মন্দের জবাবে তাই বলুন যা উত্তম’। (সূরা মুমিনুন-৯৫)।
নামাজে রজনী কাটিয়ে দেয় : আল্লাহ তায়ালার প্রিয় বান্দাদের অন্যতম গুণ হলো তারা দিনরাত আল্লাহর ইবাদতে রত থাকে। দিবাভাগে শিক্ষাদান, দ্বীনি দাওয়াত, জিহাদ ইত্যাদি কাজে ব্যস্ত থাকে এবং রাতে আল্লাহর সম্মুখে ইবাদত-বন্দেগিতে রত থাকে। সাহাবায়ে কেরামের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ছিলÑ দিবসে সৈনিক, রাতে দরবেশ। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনÑ ‘তারা রাত যাপন করে তাদের পালনকর্তার সামনে সিজদা করা অবস্থায় ও (নামাজে) দণ্ডায়মান অবস্থায়।’ (সূরা ফুরকান-৬৪)। রাতের নামাজের মধ্যে তাহাজ্জুদ অন্যতম। মহানবী সা: বলেছেনÑ ‘নিয়মিত তাহাজ্জুদ পড়ো। কেননা, এটা তোমাদের পূর্ববর্তী সব নেক বান্দার অভ্যাস ছিল। এটা তোমাদেরকে আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য দানকারী, মন্দকাজের কাফফারা এবং পাপাচার থেকে নিবৃত্তকারী।’ (মাযহারি)।
সদা জাহান্নামের ভয়ে ভীত থাকে : আল্লাহর প্রিয় বান্দারা শুধু দিনরাত ইবাদতে রত থেকেই নিশ্চিন্ত হয় না; বরং সদা আল্লাহর আজাবের ভয়ে ভীত থাকে। আর আজাব থেকে বাঁচার জন্য তার কাছে করজোড়ে প্রার্থনা করে। আল্লাহর বাণীÑ ‘খাঁটি বান্দাহ তারা যারা বলে, হে আমাদের রব, আমাদের থেকে জাহান্নামের শাস্তি হটিয়ে দাও।’ (সূরা ফুরকান-৬৫)।
অযথা ব্যয় করে না : খাঁটি মুমিন অযথা এবং নাহক পথে ব্যয় করে না। আর ব্যয় করার ক্ষেত্রে অতিরঞ্জন ও কৃপণতা উভয়ই পরিহার করে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনÑ ‘খাঁটি মুমিন হলো তারা যারা অযথা ব্যয় করে না এবং কৃপণতাও করে না এবং তাদের পন্থা হয় এতদুভয়ের মধ্যবর্তী।’ (সূরা ফুরকান-৬৭)।
ইবাদতে শিরক করে না : শিরক হলো কবিরা গুনাহগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ কবিরা গুনাহ। শিরক দুই প্রকার। (ক) আকিদাগত শিরক তথা আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করা এবং তার ইবাদত করা। (খ) লোক দেখানো ইবাদত। ইবাদত করতে হবে সম্পূর্ণ ইখলাসের সাথে এবং লৌকিকতামুক্ত ভাবে। লোক দেখানো ইবাদত শিরক। সর্বপ্রকার শিরকই হারাম। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনÑ ‘খাঁটি মুমিন হলো তারা যারা আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যের ইবাদত করে না।’
অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করে না : খাঁটি মুমিনের অন্যতম গুণ হলো সে অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করে না। আল্লাহর বাণীÑ ‘আল্লাহ যার হত্যা অবৈধ করেছেন, সঙ্গত কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না।’ (সূরা ফুরকান-৬৮)। অন্যত্র ইরশাদ করেনÑ ‘যে কেউ প্রাণের বিনিময় ছাড়া কাউকে হত্যা করল অথবা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করার জন্য কাউকে হত্যা করল সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করল। আর যে কারো জীবন রক্ষা করল সে যেন সবার জীবন রক্ষা করল।’ (সূরা মায়েদা-৩২)।
ব্যভিচার করে না : খাঁটি মুমিন নিজ জীবনকে পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র রাখে। ব্যভিচার করা তো দূরের কথা, এর কাছেও যায় না। কারণ, আল্লাহ তায়ালা বলেছেনÑ ‘আর তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। অবশ্যই তা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ (সূরা বনি ইসরাইল-৩২)। অন্যত্র ইরশাদ করেনÑ ‘খাঁটি মুমিন ব্যভিচার করে না।’ (সূরা ফুরকান-৬৮)। মহানবী সা: বলেনÑ ‘মানুষের চুদ্বয় ব্যভিচার করে, উভয়ের ব্যভিচার হলো বেগানা নারীর প্রতি দৃষ্টিদান।’ (বুখারি-৬৬১২)।
লেখক : প্রধান ফকিহ, আল জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসা, ফেনী
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা