২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

লোভ ধ্বংস ডেকে আনে

-

অনৈতিক, অবৈধ, বেআইনি এবং অনাহূত আকাক্সাই হচ্ছে দোষণীয় লোভ। আর এখন লোভের বীজ হচ্ছে লিপ্সা। লিপ্সা থেকেই লোল-লালসার জন্ম। মানুষ জীবনে যতই ধার্মিক হোক না কেন, লোভ সামলাতে না পারলে সবই বৃথা, সবই শূন্য, সবই শয়তানি কর্ম!
লোভে চোখ চকচক করছে : কামনা-বাসনা ও খায়েশ পূরণের লোভে, পদ-পদবি ও ক্ষমতার মোহে এবং হাজারো হীনস্বার্থ হাসিলের লোভে বেশির ভাগ মানুষের চোখ চকচক করছে! তারা মানবিক মূল্যবোধ ও নৈতিকতার তোয়াক্কা করছে না। লোভাতুর, তোষামোদকারী অতি উৎসাহীদের ভিড়ে ভালো মানুষের মূল্যায়ন হচ্ছে না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মানুষগুলো মুখ থুবড়ে পড়ছে। অতি লোভীরা যেন স্বার্থের জিভ মেলে পৃথিবীকে গ্রাস করতে চাইছে! পৃথিবীতে মানুষ যত অনাসৃষ্টি করছে, সব লোভের বশবর্তী হয়েই করছে। অতিলোভের কারণেই মানুষ অমানসিক কাজ করছে, নিষ্ঠুর ও অত্যাচারী হচ্ছে, দুর্নীতিবাজ ও স্বার্থপর হচ্ছে। সুশিক্ষা ও সৎকর্মের বিস্তার ঘটছে না এবং মানুষ ধর্মকর্ম ভুলে, নাফরমান হয়ে, অশান্তি ও অস্বস্তিতে ভুগছে। শয়তানি কর্মে সময় কাটাচ্ছে! ‘আমি তোমাদের জানিয়ে দেবো যে, শয়তান কার কাছে অবতরণ করে? তারা তো অবতরণ করে প্রত্যেক ঘোর মিথ্যাবাদী ও পাপীর কাছে।’ (সূরা শুয়ারা-২২১, ২২২)
একে অন্যের থেকে বেশি পাওয়ার লোভ : লোভের কারণেই আমরা ভুলে যাই ক্ষণস্থায়ী জীবনের কথা। ছোট্ট এক জীবনে কত টাকা, কত ক্ষমতা, কত সম্মান ও প্রতিপত্তি প্রয়োজন? এত লোভ, এত অহঙ্কার কেন? মাটির পিঠ থেকে পেটে চলে গেলে এসব কী কাজে আসবে? এতে না পাওয়া যায় দুনিয়ার সুখ-শান্তি এবং আখিরাতের জন্য হয় গোনাহের বোঝা ভারী। দিন যাচ্ছে, বয়স ফুরাচ্ছে, অথচ লোভাতুর হয়েই মানুষ কবর পর্যন্ত চলে যাচ্ছে। ‘একে অন্যের থেকে বেশি পাওয়ার লোভ বা প্রতিযোগিতা তোমাদের ভুলের মধ্যে ফেলে রেখেছে। এমনকি দুনিয়া পাওয়ার এ চিন্তা নিয়েই তোমরা কবরে পৌঁছে যাও।’ (সূরা তাকাসুর-১ ও ২)
লোভ সুন্দর জীবনকে এলোমেলো করে : দুনিয়ার বাহাদুরি ও ক্ষমতা ক্ষণিকের। পরকালে নেক আমল ছাড়া কোনো কিছুই কারো কাজে আসবে না। হজরত ওমর রা: বলেন, ‘লোভ করলে আত্মা দরিদ্র হয়ে যায় বা মন মরে যায়। ইবাদতে স্বাদ পাওয়া যায় না। হজরত মূসা আ: আল্লাহ তায়ালকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহ! প্রকৃত ধনী কে? আল্লাহ বললেন, ‘যে লোভ করে না সেই প্রকৃত ধনী’। সুনানে তিরমিজির হাদিসে আছে, একটি ছাগল পালে ুধার্ত নেকড়ে যেভাবে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়, ছিন্নভিন্ন করে ফেলে সব ছাগলকে, তেমনি লোভ-লালসা মানুষের সুন্দর জীবনকে এলোমেলো করে দেয়। ধ্বংস করে দেয়, দুনিয়া ও আখিরাতের সুখময় আরামকে।
লোভ যদি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে : লোভ-লালসা যদি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, তখন মানুষ হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। বুকের জ্বালা বেড়ে যায়। শয়তান শিরায় শিরায় সফলতার জয়ধ্বনি তুলে অহঙ্কারের সীমা লঙ্ঘন করে এবং মানুষকে চরম ও ভয়াবহ পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়। আল্লাহর ভয়, মানবতা, দয়ামায়া, ইমান-আমল, বিবেক ও সুবুদ্ধি লোপ পায়। অন্তরে লু হাওয়ার ঝড় ওঠে। কোনো মানুষের লোভ-লালসা যখন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, তখন মানুষ জীবন-জিন্দেগিকে প্রয়োজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে পারে না। অধিক আশার জগতে প্রবেশ করে জগতের সব কিছু একাই পেতে চায়। কিন্তু তার অস্থির ও অশান্ত চিত্তে এ কথার উদয় হয় না যে, ‘প্রয়োজন ফকিরেরও পূর্ণ হয়, কিন্তু আশা রাজা-বাদশাহরও পূর্ণ হয় না।’ (হজরত আলী) ‘যে যা করে (ভালো-মন্দ কর্ম) সে তারই ফল পাবে। কেউ কারো পাপের বোঝা বহন করবে না।’ (সূরা আনআম-১৬৪)
মিছে মহব্বত মিছে মায়া : দুনিয়ার লোল-লালসা, মোহ-মায়া, প্রতিপত্তি, ক্ষমতা সবই বৃথা, সবই মরীচিকা। ছেলেমেয়ে, আত্মীয়স্বজন, সম্পদ ভোগ করবে, কিন্তু পাপের বোঝা বহন করবে না। আল্লাহর রঙে নিজেকে রাঙিয়ে অন্তরকে পরিশুদ্ধ করতে পারলেই লোভ-লালসা এবং যাবতীয় মন্দ বিলীন হয়ে যাবে।
লোভ-লালসার মুখ্য দাওয়াই : লোভ-লালসার মুখ্য দাওয়াই হচ্ছে তাকওয়া বা আল্লাহ ভয়। যার ভেতর আল্লাহর ভয় নেই, সে যেকোনো অপকর্ম করতে পারবে। যার ভেতর আল্লাহর ভয় আছে, অর্থাৎ আল্লাহকে না দেখেও সর্বক্ষণ ভয় করে, তার বিধানে জীবন অতিবাহিত করে এবং স্মরণ রাখে যে, আল্লাহ ও বান্দার মাঝের দরজা কখনো বন্ধ থাকে না। আমাদের গোপন ও প্রকাশ্য সব কিছুই তিনি দেখছেন, সে যা ইচ্ছে তা করতে পারে না। ‘হে ঈমানদাররা! আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিত, ঠিক তেমন ভয় করতে থাকো এবং অবশ্যই মুসলমান (আল্লাহতে পূর্ণ সমর্পিত প্রাণ) না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।’ (সূরা ইমরান-১০১)
আল্লাহ ভীরুরাই উত্তম চরিত্রের অধিকারী। যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তাকে সর্বপ্রকার ভয় থেকে মুক্ত করে দেন। স্বার্থের জিব মেলে সে দুনিয়াকে গ্রাস করতে চায় না, বরং সে আল্লাহর কুদরত চোখে ডুব দিয়ে সর্বপ্রকার লোভ-লালসা, দুঃখ-কষ্টকে জয় করে নেয়। ‘যে ব্যক্তি তার রবের সামনে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে এবং নিজেকে কুপ্রবৃত্তি থেকে ফিরিয়ে রাখে, নিশ্চয়ই জান্নাত হবে তার আবাসস্থল।’ (সূরা নাযিআত-৪০, ৪১)
লেখক : প্রবন্ধকার


আরো সংবাদ



premium cement