২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বৈশ্বিক ঐক্যের মাধ্যম

-

পৃথিবীর সব ইবাদত ও ধ্যানের সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম সালাত। মহানবী সা: বলেছেন, সালাত মুমিনের মিরাজস্বরূপ। মহানবী আরশে আজিমে গমন করে আল্লাহর সান্নিধ্য বা নৈকট্য লাভ করেছিলেন। পৃথিবীর অন্য কোনো মানুষের পক্ষে এ সম্মান ও মর্যাদা অর্জন করা সম্ভব নয়। সে কারণে আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে মহানবী নামাজকে আল্লাহপাকের সর্বোচ্চ নৈকট্য লাভের মাধ্যম হিসেবে বর্ণনা করেছেন। কালামে পাক আল্লাহপাক ৮২টি আয়াতে নামাজের গুরুত্ব বর্ণনা করেছেন। কালামে পাকে বর্ণিত হয়েছে, ‘তোমরা নামাজ আদায় কর ও জাকাত প্রদান কর’। মহানবী সা: বলেছেন, ‘তুমি এমন ধ্যানের সহিত নামাজ আদায় কর যেন তুমি আল্লাহ পাককে দর্শন করছ, যদি এমন ভাব বা ধ্যান তোমার হৃদয়ে উদয় না হয় তবে তুমি এ ধ্যানের সহিত নামাজ আদায় কর যেন আল্লাহ পাক তোমাকে দেখছেন।’ (আল-হাদিস) মানবত্মাকে পরমাত্মা বা আল্লাহপাকের সাথে মিলিত করার সর্ব উত্তম মাধ্যম সালাত। সালাত এক দিকে মানুষের আত্মাকে পরমাত্মার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে। মানসিক প্রশান্তি অর্জিত হয়। অপর দিকে সালাতের মধ্যে দৈহিক চর্চার মাধ্যমে শরীরের সর্বোত্তম ব্যায়াম বা চর্চা সাধিত হয়। সালাত পরিচ্ছন্নতার চাবিকাঠি। দেহে কোনো অপবিত্র বস্তু থাকলে সালাতে দণ্ডায়মানের পূর্বে তা ধৌত বা পবিত্র করা কর্তব্য। সালাতে দণ্ডায়মান হওয়ার আগে মানুষ পরিচ্ছন্নতা হিসেবে পোশাক-পরিচ্ছদ ও পবিত্র করা কর্তব্য। আবার নামাজের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে ওজুর মাধ্যমে বিশেষ বিশেষ অঙ্গগুলো ধৌত করে পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা আবশ্যক বা ফরজ। সর্বশেষ নামাজ আদায় করার স্থানকে পবিত্র করে মানুষ একাগ্রচিত্তে বিনয় অবনতভাবে নামাজে বা ধ্যানে লিপ্ত হয়।
দৈনিক পাঁচবার মানুষ জামাতবদ্ধভাবে মসজিদে সালাত আদায় করে থাকেন। সালাতে যোগদানের জন্য মাসজিদে গমনের পূর্বে ও পরে মুসল্লিরা পরস্পরের সাথে সালাম ও ভাব বিনিময় করে থাকেন, যা সৌভ্রাতৃত্ব ও সামাজিক ঐক্যের অন্যতম মাধ্যম। সালাত আদায়ের সময় মুসল্লিরা শৃঙ্খলার সাথে সারিবদ্ধভাবে সালাতে নিবেদিত হয়ে থাকেন। যার মাধ্যমে মুসল্লিরা ব্যক্তি, পরিবার ও সামাজিক শৃঙ্খলার শিক্ষা গ্রহণ করে থাকেন। সে কারণে বলা যায় সালাত বা নামাজ ঐক্য, শান্তি ও সুস্থতার প্রতীক। একজন মুমিনের আত্মিক প্রশান্তি, স্রষ্টার নৈকট্য, দৈহিক সুস্থতা, পারিবারিক ও সামাজিক ঐক্যের প্রধান ভিত্তি সালাত। পবিত্র কালামে পাকে ও হাদিস শরিফে সালাত বা নামাজ আদায়ের গুরুত্ব সবিশেষভাবে আলোচনা করা হয়েছে। কোনো মুমিন পাঁচ ওয়াক্ত জামাতের সাথে নামাজ আদায় করলে পারিবারিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলে পারস্পরিক সাক্ষাৎ ও সৌহার্দ্য গড়ে ওঠে। সপ্তাহে এক দিন গুরুত্বসহকারে জুমার নামাজ আদায় করলে সামাজিক পরিচিতি ও ঐক্য অধিক দৃঢ় হয়। বছরে দুই দিন ঈদের নামাজের মাধ্যমে অঞ্চলভিত্তিক পরিচিতি ও ঐক্য গড়ে ওঠে। মূলত সালাত বা নামাজ মুসলিম জাতির ও বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের ঐক্যের মূল চাবিকাঠি। মুসলিম জাতি যত বেশি মহানবীর এই প্রদর্শিত পথে আল্লাহ পাকের ইবাদতে অগ্রসর হবে, তত বেশি মুসলিম জাতির ইহলৌকিক শান্তি ও পারলৌকিক মুক্তির পথ সুগম হবে। বর্তমানে মুসলিম জাতির ঐক্যে ফাটল সৃষ্টির লক্ষ্যে মসজিদে বোমা হামলা করা হচ্ছে। যার প্রতিক্রিয়ায় নিরীহ ধর্মপ্রাণ মুসলমান শহীদ হচ্ছেন। এই বোমা হামলায় মুসলিম জাতির বিভিন্ন ফেরকা পরস্পরকে দোষারোপ করছে। প্রকৃতপক্ষে এই বোমা হামলার পেছনে কারা দায়ী তা খুঁজে বের করা মুসলিম জাতির নৈতিক দায়িত্ব।
প্রকৃতপক্ষে সালাত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিশ্বে মুসলিম জাতির ঐক্য ও সৌভ্রাতৃত্ব টিকে আছে। যে কারণে বিজাতীয়রা মুসলিম জাতির মাঝে বিভিন্ন ফেরকা বা দল তৈরি করে মুসলিম জাতিকে বহুধাভাগে বিভক্ত করে চলেছে। উদাহরণ হিসেবে কাদিয়ানি, শিয়া, খারেজি, রাফেজি ইত্যাদি ফেরকার নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। মুসলিম জাতির ঐক্যকে সুদূঢ় করতে হলে এসব ফেরকাবাজির ঊর্ধ্বে সমগ্র মুসলিম জাতিকে নিয়মিত সালাত আদায়ের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তাহলে মুসলিম জাতির ঐক্যের পথ সুগম হবে। বর্তমানে মুসলিম জাতিকে বিভাজিত করার জন্য নতুন করে চক্রান্ত শুরু হয়েছে। মুসলিম জাতির ঐক্যের সর্বশেষ মাধ্যম নামাজের মাঝেও বিভক্তির বীজ বপন করা শুরু হয়েছে। আমরা আগেই উল্লেখ করেছি নামাজের মাধ্যমে মুসলিম জাতির ঐক্য সুদৃঢ় হয়। অথচ বর্তমানে নামাজ আদায়ের পদ্ধতির মাঝে বিভাজন সৃষ্টি করা হচ্ছে। দীর্ঘ দিনের মাজহাবি সিদ্ধান্তকে পরিবর্তন করার প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। মুসলিম বিশ্বের কাছে চার মাজহাব অতি পরিচিত নাম। প্রতিষ্ঠিত এ চার মাজহাবের মাঝে মূলত কোনো দ্বন্দ্ব নেই। অথচ বর্তমানে বিভাজন সৃষ্টিতে তৎপর একশ্রেণীর লোক বলছেন, মাজহাবের বিভক্তির কারণেই মুসলিম বিশ্বে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। অথচ ইতঃপূর্বে পৃথিবীর কোনো স্থানে মুসলিম উম্মাহর মাঝে এক মাজহাবের সাথে অন্য মাজহাবের কোনো দ্বন্দ্ব সঙ্ঘাত সৃষ্টি হয়নি। মাজহাব অস্বীকারকারীরা কিছু নতুন পদ্ধতি, মত ও পথ সৃষ্টি করে মুসলিম উম্মাহর মাঝে নতুন করে বিভাজন সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে।
বিদায় হজে মহানবী স্পষ্ট বলেছেন, আমি তোমাদের মাঝে দুটি নির্দেশ রেখে যাচ্ছি যত দিন তোমরা তা আঁকড়ে ধরে থাকবে, তত দিন তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। সে দু’টি বিষয় হলো কিতাবুল্লাহ বা আল্লাহ পাকের কালাম ও রাসূলের সুন্নাহ। কুরআন ও সুন্নাহর আলোকেই মুসলিম জাতিকে তাদের চলার পথ খুঁজে নিতে হবে। ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
লেখক : শিক্ষাবিদ

 


আরো সংবাদ



premium cement