২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

অপসংস্কৃতি প্রতিরোধে ইমামদের ভূমিকা

-


সংস্কৃতির বিকৃত রূপই হচ্ছে অপসংস্কৃতি। সংস্কৃতি যেমন মানুষকে বিকশিত করে,আনন্দিত ও প্রেমময় করে, তেমনি অপসংস্কৃতি মানুষের জীবনে বিকৃতি আনে, চিত্তকে কলুষিত করে, জীবন ও মূল্যবোধকে ধ্বংস করে দেয়। তাই যে আচার মানুষের নৈতিকতাকে বিনষ্ট করে তাই অপসংস্কৃতি।

অপসংস্কৃতির আগ্রাসন
‘আমরা আজ চরমভাবে বিকৃত সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের শিকার। নগ্ন-দানবীয় সংস্কৃতি বাংলাদেশের অস্তিত্ব, জাতিসত্তা, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, তাহজিব-তামাদ্দুন, ঐতিহ্য, বিশ্বাস, মূল্যবোধের ওপর প্রচণ্ড হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। স্যাটেলাইট সংস্কৃতির দাপটে আমাদের সবকিছু যেন হারাতে বসেছি। দিবারাত্র প্রতিমুহূর্তে বিভিন্ন চ্যানেলে নগ্ন সংস্কৃতির ছোবলে তবিত করে দিচ্ছে আমাদের সব কিছু। লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ছে আমাদের বিশ্বাস, চেতনা, বোধ, বুদ্ধি-বিবেক, পরিবার ও সমাজ। সমাজে দ্রুত মূল্যবোধের পরিবর্তন সূচিত হচ্ছে। যেমনÑ পারিবারিক বন্ধনে শিথিলতা আসছে। পবিত্র ও অনাবিল শান্তিময় দাম্পত্য জীবনকে বন্দিজীবন মনে করা হচ্ছে। পিতা-মাতা ও আপনজনকে আপদ মনে করা হচ্ছে। বিয়েপ্রথাকে নারী নির্যাতনের হাতিয়ার মনে করা হচ্ছে। জরায়ুর স্বাধীনতার দাবি উঠছে। লিভ টুগেদার ও ফ্র্রি সেক্সের ফজিলত বর্ণনা করে পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আহ্বান জানানো হচ্ছে এবং বিভিন্ন মিডিয়ায় এর প্রতি উৎসাহিত করা হচ্ছে। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে টিভি-রেডিওতে এইডস নামক মারাত্মক ব্যাধির প্রতি নিরুৎসাহিত না করে বরং ‘বাজি লাগানোর’ আহ্বান জানিয়ে অবাধ যৌনতার প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে। সমকামিতার প্রতি উৎসাহিত করা হচ্ছে। পর্দাপ্রথাকে তিরস্কার করা হচ্ছে অথচ নারীদের বিভিন্ন মডেলিংয়ের আবরণে বাজারি পণ্যে পরিণত করা হচ্ছে। লাইসেন্সধারী বেশ্যাবৃত্তি চালু রাখা হচ্ছে। লাইসেন্সবিহীন অবাধ যৌনতার নগ্ন প্রসার ঘটানোর জন্য দৈনিক সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, সাহিত্য, পাঠ্যপুস্তক, চলচিত্র, সঙ্গীতনিকেতন, আর্ট স্কুল, ফ্যাশন শো, কনসার্ট, মেলা, বিজ্ঞাপন শিল্প, বিউটি পার্লার, ম্যাসেজ পার্লার, বিনোদন কেন্দ্র, অবকাশ কেন্দ্র, সমুদ্রসৈকত, মোটেল, পার্ক, গার্ডেন, পর্ন শো এবং পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে অন্ধকারময় পথে পরিচালিত করছে; যা আজ ভাবতে ঘৃণা লাগে।
এ সবের মাধ্যমে জাতিকে কোথায় নিয়ে যেতে চাচ্ছে তা দেখার যেন কেউ নেই। ভোগবাদী এই নগ্ন-যৌন সংস্কৃতি ঠেকানোর মতো কোনো কর্তৃপ আছে কি না তার কোনো অস্তিত্ব আমরা দেশে ল করছি না। এমনকি মানবতাকে রা করার জন্য ভোগবাদী এই বিশ্বের কোথাও কোনো কর্তৃপ এগিয়ে আসার লণ অনুভূত হচ্ছে না। কেউ কোথাও এই নগ্ন যৌনতার বিপে কোনো কথা ীণ স্বরে উচ্চারণ করলে ওই ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে প্রগতিবিরোধী, প্রতিক্রিয়াশীল, সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী বলে বিভিন্ন অপবাদে আখ্যায়িত করে নাস্তানাবুদ করে ছাড়ছে। কেউ সাহস করে এই প্রতিবাদী কণ্ঠকে সমর্থন করার পে এগিয়ে তো আসছেই না, বরং নীরব সুবিধাবাদী আঁতেল টাইপের বক্তব্য দিয়ে যেন প্রকারান্তরে ওদেরই সমর্থন যুগিয়ে যাচ্ছে। সাংস্কৃতিক বেহায়াপনার মাধ্যমে আমাদের প্রতিষ্ঠিত সমাজ সভ্যতা ও ঐতিহ্যকে ভেঙে দেয়ার যে ধ্বংসযজ্ঞ হচ্ছে, এসব কিছুই সাংস্কৃতিক আগ্রাসন। (সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ইসলামী সংস্কৃতি ও অন্যান্য অনুষঙ্গ শাহ মুহাম্মদ আবদু রাহিম ও ড. মো: আমির হোসেন সরকার)

অপসংস্কৃতির আগ্রাসন প্রতিরোধে
ইমামদের ভূমিকা
ইমাম অর্থ নেতা, পরিচালক, বা অগ্রনায়ক। আধ্যাত্মিক ও জাগতিক উভয় দিক থেকে যিনি সমাজের নেতৃত্ব দান করেন তাকেই ইমাম বলা হয়। কেউ কেউ বলেছেন, মসজিদে যিনি সালাতে নেতৃত্ব দেন তাকে ইমাম বলা হয়। ইসলামে ইমামের গুরুত্ব অপরিসীম।
বর্তমানে বিশ্বায়নের যুগে বিশ্বব্যবস্থার দ্রুত আধুনিকায়নের ফলে সমাজ ও রাষ্ট্রের বৈষয়িক উন্নতি আশাতীত হলেও মানবিক বিচার বিবেকের দিকটিতে অধঃগতি পরিলতি হচ্ছে। অপসংস্কৃতির আগ্রাসনে মুসলিম বিশ্ব আজ অধঃপতিত, জর্জরিত। এমতাবস্থায় মানুষের প্রকৃত গুণাবলি সৃষ্টিতে একজন ইমাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।
ওয়াজ মাহফিল, ইসালে সওয়াব, আলোচনা সভা, মিলাদ মাহফিল, প্রতি জুমায় সালাতের আগে বাংলায় মুসল্লিদের সামনে অপসংস্কৃতির কুফল সম্পর্কে, তিকর দিক সম্পর্কে বক্তব্য রাখার মাধ্যমে, জনসংযোগেরর মাধ্যমে ইমামগণ অতি সহজে ভূমিকা পালন করতে পারেন। অপসংস্কৃতির অক্টোপাসে আক্রান্ত সমাজকে সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে ইমামগণ অত্যন্ত সচেতনতার পরিচয় দিতে পারেন। প্রতিটি মসজিদের মিম্বার থেকে আওয়াজ তুলে একমাত্র ইমামগণই পারেন অপসংস্কৃতির আগ্রাসনের ঢেউকে রুখে দিতে। তাই প্রত্যেক মসজিদের ইমামদের জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে এগিয়ে আসা এখন সময়ের অনিবার্য দাবিও বটে। নতুবা আমরা হারিয়ে যাবো অপসংস্কৃতির চোরাবালিতে।
লেখক : মুফাসসিরে কুরআন


আরো সংবাদ



premium cement