২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

মসজিদে পালনীয় আদব

-

মসজিদ আল্লাহর ঘর। এখানে সবাই আসেন ইবাদতের জন্য। এই ইবাদত পালনের পাশাপাশি মসজিদে প্রবেশ ও প্রস্থানের কিছু আদব রয়েছে। যেমনÑ আমরা অনেকেই যখন মসজিদে প্রবেশ করি কোনো পা দিয়ে প্রবেশ করব, তা ভুলে যাই। মসজিদে প্রবেশের আদব হচ্ছেÑ সবসময় ডান পা দিয়ে প্রবেশ করা। এ ক্ষেত্রে একটি দোয়া আছে। পবিত্র কাবা শরিফ ও মদিনা শরিফের দরজায় যা লেখা আছেÑ বিসমিল্লাহি ওসলাতু ওসালামু আলা রাসূলিল্লাহি আল্লাহুম্মাফতাহলি আবওয়াবা রাহমাতিক। একইভাবে মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময়ও বিসমিল্লাহি ওসলাতু ওসালামু আলা রাসূলিল্লাহি আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাদলিক। এই দোয়া পড়ে মসজিদে প্রবেশ করতে হয়। আর যদি এত বড় দোয়া মনে না থাকে বা কোনো দোয়াই না জানেন, শুধু ‘বিসমিল্লাহ’ পড়ে মসজিদে প্রবেশ করলেও সওয়াব পাওয়া যাবে।
মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় বড় একটি আদব হচ্ছেÑ হাত থেকে মাটিতে জুতা আস্তে ফেলা। আমাদের চলাফেরায় কখনো যেন অহঙ্কার বা তাকাব্বরি প্রকাশ না পায় সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। আল্লাহ অহঙ্কারীদের পছন্দ করেন না। সূরা লোকমানের ১৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা উদ্ধতভাবে পৃথিবীতে বিচরণ করো না, কেন না, আল্লাহ অহঙ্কারীকে পছন্দ করেন না।’ সূরা বনি ইসরাইলের ৩৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আরো ইরশাদ করেন, ‘ভূ-পৃষ্ঠে দম্ভভরে বিচরণ করো না, তুমি তো কখনোই পদভারে ভূ-পৃষ্ঠ বিদীর্ণ করতে পারবে না।’ এখানে ভূ-পৃষ্ঠ বলতে মাটিকেই বোঝানো হয়েছে। এমন কোনো মুহূর্ত নেইÑ যে সময় মানুষ মাটির ওপর অবস্থান করে না। ঘরে বা বাইরে মাটিকে আল্লাহ এভাবেই মানুষের অধীন করে দিয়েছেন। মানুষ তার বান্দা হিসেবে এর ওপর বিচরণ করে, বসবাস করে, ফসল ফলায়, ফল-ফলাদি ভক্ষণ করে, বৃক্ষরোপণ করে, এর থেকে রিজিক আহরণ করে। আল্লাহ ভূমিকে যাবতীয় বস্তু থেকে নত ও পতিত করে সৃষ্টি করেছেন। মানুষের সৃষ্টিও মাটি থেকে। মানুষের মরণও এই মাটিতে। সুতরাং এমন নত বস্তুর হক আদায় করতে গেলে মানুষকেও নত হতে হবে। এটিই কুরআনের শিক্ষা।
আমাদের অনেকেই মসজিদে প্রবেশ করে গল্প শুরু করে দেই। মসজিদ গল্পের জায়গা নয়। মসজিদ নিছক ইবাদতের জায়গা। হাদিস শরিফে মসজিদে কথা বলার ব্যাপারে এমনো জোর তাগিদ এসেছেÑ ‘মসজিদে দুনিয়াদারি বাজে গল্প করা হারাম’। মসজিদে কথা বলবেন, ওয়াজ করবেন, মুসল্লিদের দ্বীনের ব্যাপারে নসিহত করার এখতিয়ার শুধু ইমাম সাহেবের। অন্যদের কথা বলার সুযোগ নেই। একান্ত কোনো মাসয়ালা-মাসায়েল জানা বা কোনো বিষয়ের পরামর্শ থাকলে তা ভদ্রভাবে, নম্রতার সাথে, আদবের সাথে, লিখিতভাবে করা ভালো। আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার জন্য শুধু নামাজ, রোজা, হজ বা জাকাত আদায় করলেই চলবে না, এসব গুণাবলিও অর্জন করতে হবে। বিনয় ও নম্রতা উত্তম চরিত্রের ভূষণ। আল্লাহ তায়ালা বিনয় ও নম্রতা সম্পর্কে সূরা আশ-শুয়ারার ২১৫ নম্বর আয়াতে ঘোষণা করেছেন, ‘যারা তোমার অনুসরণ করে সে সব বিশ্বাসীর প্রতি বিনয়ী হও’। এ ছাড়া হাদিসে কুদসিতে বিনয়ী গুণ অর্জনে উদ্বুদ্ধ করে বিধৃৃত হয়েছেÑ ‘আমি সে সব লোকের সালাতই কবুল করি, যারা মর্যাদার সাথে বিনয়াবনত হয় এবং আমার সৃষ্টির সাথে রূঢ় আচরণ করে না।’ (বাযযার আল মুসনাদ) হাদিস শরিফে আরো এসেছেÑ ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নম্রতা অবলম্বন করবে, আল্লাহ তায়ালা তার সম্মান বাড়িয়ে দেবেন।’ (সহিহ মুসলিম)
তাই আসুন আমরা মসজিদে যাবো শুধু নামাজ পড়ার জন্য নয়, এ ছাড়াও মসজিদের আরো যে আদব রযেছে, যেমনÑ উচ্চৈঃস্বরে কথা না বলা, নামাজের তাসবিহগুলো নীরবে পড়া, নামাজে এমনভাবে দাঁড়ানো, শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এমনভাবে রাখা, যাতে কারো কষ্ট না হয়। পরস্পর পরস্পরকে সালাম দেয়া, মুসাফাহা করা, কৌশল বিনিময় করা, অপর মুসলমানের জন্য দোয়া করা। এসব গুণাবলি অর্জনের চেষ্টা করি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে কবুল করুন। আমিন।
লেখক : প্রবন্ধকার


আরো সংবাদ



premium cement