২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

যাত্রাপথ দুর্ভোগমুক্ত রাখা ঈমানি দায়িত্ব

-

মহান আল্লাহ বলেন, আর তোমরা নিকটাত্মীয়দের দিয়ে দাও তার হক (অধিকার), আর মিসকিন ও মুসাফিরকে (পথিক)। আর অতিমাত্রায় ব্যয় করো না (অপব্যয় বা অপচয়) নিশ্চয়ই অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার পালনকর্তার বড়ই অকৃতজ্ঞ (কাফির) (সূরা বনি ইসরাইল আয়াত : ২৬-২৭)।
আমরা সবাই সড়ক, নৌ, বিমান, রেল তথা যাত্রাপথে ভ্রমণ করি বা সফর করি। পেশা বা কাজের প্রয়োজনে সফর করি অথবা উৎসবে বিশেষ করে দু’ ঈদে সফর করি। আর মানুষ হিসেবে তো এ ক্ষেত্রে নজরদারি করা আমাদের সবারই দায়িত্ব। আমাদের প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাত্রাপথ তথা চলার পথের কষ্ট-দুর্ভোগ লাঘব করার প্রতি অত্যন্ত জোরারোপ করেছেন। হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেনÑ ঈমানের সত্তর অথবা ষাটের অধিক শাখা-প্রশাখা রয়েছে তন্মধ্যে সর্বোত্তম হলো লা ইলাহা ইল্লাহ (আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই) বলা, আর সর্বনিম্ন হলো রাস্তা থেকে চলার পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেয়া আর লজ্জাশীলতা (হায়া) হলো ঈমানের অঙ্গ (বুখারি ও মুসলিম)।
যেখানে রাসুলুল্লাহ সা: পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেয়া ঈমানের অঙ্গ বললেন, সেখানে আমরা কেবল এর উল্টো চিত্রই দেখছি। পুরো পথ জুড়ে শুধুই কষ্ট আর কষ্ট, ভোগান্তি আর ভোগান্তি। সেটা নানাভাবে হচ্ছে। যেমন হচ্ছে খানাখন্দে ভরা বেহাল সড়ক দশার কারণে। যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাবে ধীরে ধীরে গাড়ি চালনা ও দীর্ঘ সময় চরম যানজটের কারণে, ফিটনেসবিহীন পুরাতন লক্কড়-ঝক্কড় গাড়ি রঙ করে নতুন বানানোর কারণে, নির্ধারিত সংখ্যক যাত্রীর তুলনায় ভেতর বাইর বোঝাই করে অতিরিক্ত যাত্রী নেয়ার কারণে, তেমনি হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও এ সকল অব্যবস্থাপনায় সড়ক দুর্ঘটনার কারণ।
দুর্ভোগের মাত্রা চরম থেকে চরমে ওঠে যখন যাবতীয় দায়িত্বহীনতার কারণে কোনো একটি প্রাণের মানুষের মৃত্যু ঘটে বা অঙ্গ হানি হয়। তখন তো এ দুর্ভোগ শুধু ওই ব্যক্তিরই নয় বরং পুরো পরিবার, সমাজ এমনকি সর্বোপরি দেশেরই দুর্ভোগ ও ক্ষতি। আর সেখানে তো শুধু একটি প্রায়ই মৃত্যু (অপমৃত্যু) হচ্ছে না কখনো কখনো পুরো বাস, ট্রেন বা লঞ্চটিই দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে। হারিয়ে ফেলছি বিশালসংখ্যক মানববন্ধু ও মানবসম্পদকে। অথচ তাদেরকেই রক্ষা ও নির্বিঘেœ নিরাপদে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্বতো আল্লাহর হুকুমে আমাদের হাতেই ছিল বা আছে। আর প্রকৃত মুসলমান হতে হলে তো এ দায়িত্বটি যথাযথ পালন করতে হয়। কেননা হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, প্রকৃত মুসলমান তো সে যার মুখ ও হাত থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে আর প্রকৃত মুহাজির তো সে যে আল্লাহ যা থেকে নিষেধ করেছেন তা ত্যাগ করে (বুখারি ও মুসলিম)।
অতএব আমাদেরকে প্রত্যেককে সজাগ থাকতে হবে আমাদের কারোরই কারণে যেন যাত্রাপথ দুর্ভোগ না হয়। শুধু সরকার নয়, আমরা প্রত্যেকেই যাত্রী সাধারণের ভোগান্তি দূর করে নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে সচেষ্ট হবো ইনশা আল্লাহ। কেননা হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেনÑ এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই। সে তাকে অপদস্থ করবে না আর তাকে মিথ্যায় ফেলবে না (মিথ্যা বলবে না বা ধোঁকা দেবে না) এবং তার সাথে জুলুম করবে না। আর নিশ্চয়ই তোমাদের কেউ তার ভাইয়ের আয়না অতএব যদি সে কোনো কষ্ট বা দুর্ভোগ দেখে সে যেন তার থেকে তা দূর করে দেয় (জামে আত তিরমিজি ১৯২৭ সহিহ)
লেখক : নিবন্ধকার


আরো সংবাদ



premium cement