২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

শাওয়ালের ৬ রোজার ফজিলাত

-

মহান আল্লাহ মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁরই ইবাদাতের জন্য। এ মর্মে আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি জিন ও মানব জাতিকে আমারই ইবাদাতের জন্য সৃষ্টি করেছি’ (সূরা জারিয়াত : ৫৬)। ইবাদাতের মাধ্যমেই বান্দা মহান আল্লাহর একান্ত সান্নিধ্য লাভে ধন্য হতে পারে। প্রতিটি নেক কাজেই রয়েছে মহান আল্লাহর প হতে প্রতিদানপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা। সূরা আনয়ামের ১৬০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘কেউ কোনো সৎ কাজ করলে সে তার ১০ গুণ পাবে’। নেক ইবাদাতের প্রতিদান প্রসঙ্গে মহানবী সা: বলেন, মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা যেকোনো নেক আমলই করবে, আমার কাছে তার ১০ গুণ সওয়াব প্রস্তুত আছে’ (হাদিসে কুদসি)। ১০ গুণ সওয়াব দেয়ার এই ওয়াদা দুনিয়ার কোনো মানুষের নয়, বরং মহান আল্লাহর প থেকেই করা হয়েছে। আর এটিকে কোনো বিশেষ নেকির সাথেও সীমাবদ্ধ করা হয়নি; বরং বলা হয়েছে যেকোনো ধরনের নেকি, হোক তা ফরজ কিংবা নফল। হোক একবার সুবহানাল্লাহ বলা কিংবা আলহামদু লিল্লাহ বলা। তার সওয়াব ১০ গুণ বৃদ্ধি পাবে।
মহান আল্লাহর একান্ত ইচ্ছা তাঁর প্রত্যেক বান্দা তাঁরই ইবাদাত সম্পন্ন করার মাধ্যমে ইহ ও পরকালীন জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলবে। ইবাদাত মূলত দুই প্রকার। ফরজ ইবাদাত, যেমন নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত ইত্যাদি; নফল ইবাদাত, যেমন নফল নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, দান-খয়রাত, নফল রোজা রাখা ইত্যাদি।
মানব জাতি মূলত তখনই মহান আল্লাহর নিকট প্রকৃত সম্মানিত ও প্রিয় হবে যখন তার প্রতিটি কাজ হবে একমাত্র তাঁরই উদ্দেশে। সুখে-দুঃখে একমাত্র তাঁরই ইবাদাত করবে, তাঁকেই ভালোবাসবে। তাঁরই নৈকট্য লাভের চেষ্টায় সর্বদা ব্যস্ত থাকবে। ফরজ ইবাদাত সম্পন্ন করার সাথে সাথে নফল ইবাদাতে অধিক মনোযোগী হবে। নফল ইবাদাতসমূহের মধ্যে নফল রোজা বান্দাকে অতি সহজেই মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছে দেয়। কারণ রোজা এমন একটি ইবাদাত, যা জাহান্নাম থেকে রা পাওয়ার জন্য ঢালস্বরূপ এবং এর প্রতিদান স্বয়ং আল্লাহ দিয়ে থাকেন।
মহানবী সা:-এর বাণী : মুসলমান ব্যক্তি যাতে শুধু রমজানের রোজা রেখেই থেমে না যায়, বরং অল্প কিছু রোজা রেখে পুরো বছরের রোজা রাখার মর্যাদা লাভ করতে পারেন তার এক মহাসুযোগ করে দিয়ে মহানবী সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে ফরজ রোজা পালন করলো, অতঃপর শাওয়াল মাসে আরো ছয় দিন রোজা পালন করলো, সে যেন সারা বছর রোজা রাখলো’ (সহিহ মুসলিম)। অর্থাৎ একজন ব্যক্তি যখন রমজান মাসের রোজা রেখে তার সাথে সাথে শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাখলো সে এই রোজার কারণে মহান আল্লাহর দরবারে পূর্ণ একটি বছর রোজা রাখার সাওয়াব পেয়ে গেল। অপর এক হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা শেষ করে শাওয়াল মাসে ছয় দিন রোজা রাখবে, সেটি তার জন্য পুরো বছর রোজা রাখার সমতুল্য’ (মুসনাদে আহমদ, দারেমি)।
বিশ্লেষণ : যদি কোনো ব্যক্তি রমজান মাসের ৩০টি রোজা রাখে, তাহলে তার ১০ গুণ ৩০০ রাত হবে। আর শাওয়ালের ছয় রোজার ১০ গুণ ৬০ হবে। এমনিভাবে সব রোজার সাওয়াব মিলে ৩৬০ দিন হয়ে গেল। আর আরবি দিনপঞ্জির হিসাবে ৩৬০ দিনেই তো বছর পূর্ণ হয়।
শিা : হাদিসদ্বয় থেকে আমরা যে শিা পেয়ে থাকি তা হলোÑ
শাওয়ালের ছয়টি রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত অবগত হওয়া গেল। ুদ্র আমল কিন্তু অর্জন বিশাল।
বান্দার প্রতি মহান আল্লাহর সীমাহীন দয়ার বহিঃপ্রকাশ। অল্প আমলেই অধিক প্রতিদানপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা।
কল্যাণকর কাজে প্রতিযোগিতাস্বরূপ এই ছয় রোজার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা মুস্তাহাব, যাতে রোজাগুলো ছুটে না যায়। কোনো ব্যস্ততাই যেন পুণ্য আহরণের এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত করতে না পারে সেদিকে ল রাখতে হবে।
নফলসমূহ ফরজের ত্রুটিগুলোর তিপূরণ করে। অর্থাৎ জ্ঞাতসারে কিংবা অজ্ঞাতসারে রোজাদার কর্তৃক যে ভুলত্রুটি হয়ে থাকে নফল রোজা তা দূর করতে সহায়তা করে।
শাওয়ালের ৬ রোজার উপকারিতা : এ রোজা ফরজ নামাজের পর সুন্নাতে মুয়াক্কাদার মতো, যা ফরজ নামাজের অসম্পূর্ণতাকে পূর্ণ করে। অনুরূপভাবে শাওয়ালের ছয় রোজা রমজানের ফরজ রোজার অসম্পূর্ণতাকে সম্পূর্ণ করে এবং তাতে কোনো ত্রুটি থাকলে তা দূর করে।
কখন এবং কিভাবে রাখব : শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখা যাবে মাসের শুরু-শেষ-মাঝামাঝি সব সময়। ধারাবাহিকভাবে বা বিরতি দিয়ে যেভাবেই করা হোক, রোজাদার অবশ্যই এর সওয়াবের অধিকারী হবেন। একথা স্মরণ রাখতে হবে যে, শাওয়ালের ছয় রোজার সাথে রমজানের কাজা রোজা আদায় হবে না। উভয় রোজাই আলাদা আলাদা রাখতে হবে। প্রথমে রমজানের কাজা রোজা রাখতে হবে, তারপর ছয় রোজা রাখবে। যদি পুরো মাসই কাজা রোজায় শেষ হয়ে যায় এবং নফল রোজা রাখার সুযোগ না পাওয়া যায়, তবুও মহান আল্লাহ বান্দার মনের আকাক্সার কারণে তাকে ঐ ছয় রোজারও সওয়াব দিবেন বলে আমরা আশা করি। মা-বোনদের এ দিকটি খেয়াল রাখা উচিত যে, প্রাকৃতিক কারণে প্রতি রমজানে যে রোজাগুলো কাজা হয়ে যায়, তাদের উচিত প্রথমে সেই কাজা রোজাগুলো আদায় করা। এরপর শরীর সুস্থ ও সুযোগ থাকলে পূর্ববতী বছরের কাজা রোজা আদায় করা। যদি কোনো কাজা রোজা না থাকে তাহলে শাওয়ালের ছয় রোজা রাখাই হবে উত্তম। কারণ মহানবী সা: বলেছেন. ‘যে রমজানের রোজা রাখবে সে যেন পুরোপুরি রাখে। যার উপর কাজা রয়ে গেছে, তার রোজাগুলো পূর্ণ হয়েছে বলে গণ্য করা হবে না, কেননা সে তার কাজা আদায় করেনি’ (মুগনি)। উল্লেখ্য, শাওয়ালের রোজা হচ্ছে নফল আর রমজানের রোজা হচ্ছে ফরজ। আর রমজানের কাজা রোজা আদায় করাও ফরজ।
শেষ কথা : প্রত্যেক সুস্থ সবল ব্যক্তির উচিত শাওয়াল মাসের ফজিলাতপূর্ণ ছয়টি রোজা রেখে পূর্ণ এক বছর রোজা রাখার সমান সওয়াব হাসিল করে মহান আল্লাহর একান্ত সান্নিধ্য লাভে ধন্য হওয়া। কোনো মুমিন নারী-পুরুষ যদি তার অপর কোনো ভাইবোনকে এই রোজা রাখতে উদ্বুদ্ধ করেন এবং সে যদি তার পরামর্শে রোজা রাখেন, তবে উদ্বুদ্ধকারীও সাওয়াব পাবেন। উল্লেখ্য, কেউ নফল রোজা রেখে ভেঙে ফেললে তার কাজা আদায় করা ওয়াজিব।
লেখক : গবেষক


আরো সংবাদ



premium cement