২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

হালাল হারামের বিধান

-

কোনো মানুষ মুসলমান হয়ে থাকলে হালাল হারামের বিধান জানা এবং মেনে চলা তার জন্য ফরজ। কারণ হালাল হারামের বিধান আল্লাহ প্রদত্ত এবং রাসূল প্রদর্শিত বিধান। এ বিধানের উল্টো চলা কবিরা গুনাহ ও হারাম। ক্ষেত্র বিশেষে কুফরি এবং শিরিক। আল্লাহর দেয়া হালাল হারামের বিধান অমান্য করে কেউ যদি কোনো বিধান চালু এবং জারি করে, তা হবে বেঈমানি ও কুফরি। যারা এরকম বিধান চালু করে তারা তাগুত। যারা তাগুতি এ বিধান মান্য করে তারা শিরিককারী। আল্লাহর আইন ও শাসন বাদ দিয়ে তাগুতি আইন ও শাসনের গোলামি গ্রহণ করার কারণেই মুসলমানদের ওপর আজ আল্লাহর অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, রাষ্ট্রীয় ও প্রাকৃতিক গজব চলছে। যেমন চলেছিল বনি ইসরাইল আর ইহুদিদের ওপর। কারণ বর্তমান বিশ্বের মুসলমানেরা নামে মুসলমান হলেও কাজে প্রায় বনি ইসরাইলের ইহুদিদের মতো। তাই আল্লাহ বলেন, ‘তাদের অনেকেই আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে বটে, আবার শিরিকও করে’ (সূরা ইউছুফ : ১০৬) তিনি আরো বলেন, ‘তারা তাগুতকে হুকুমদাতা বানাতে চায় অথচ তাদের আদেশ করা হয়েছিল তাগুতকে অস্বীকার ও অমান্য করতে’ (সূরা নিছা : ৬০)। আল্লাহর আরো বলেন, ‘তোমরা যদি তাদের কথা মতো চলো তাহলে তোমরা শিরিককারী হয়ে যাবে’ (সূরা আনয়াম : ১২১)। অপর আয়াতে বলেন, ‘তারা যদি শিরিক করে তাদের সমস্ত আমল (নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত) বরবাদ হয়ে যাবে’ (সূরা আনয়াম : ৮৮)। আল্লাহ অপর আয়াতে বলেন, ‘জলে স্থলে যত অরাজকতা সব মানুষের হাতের কামাই’ (সূরা রুম : ৪১)। হালাল হারামের এ বিধান মান্য করা মুসলমানদের জন্যই শুধু ফরজ। অমুসলমানগণ আল্লাহর নিরঙ্কুশ একত্ববাদের প্রতি ঈমান না আনার কারণে হালাল হারামের এ বিধান তাদের জন্য প্রযোজ্য নয়। মুসলমান দেশে দেশে আল্লাহর যত গজব চলছে, সবই মুসলমানদের পাপের এবং আল্লাহর রাসূলের সা: বিরোধিতার কারণেই চলছে। অমুসলমানদের কারণে নয়।
কোনো ব্যক্তি, শক্তি, প্রতিষ্ঠান, প্রশাসন অথবা কোনো দল যদি আল্লাহর দেয়া হালাল হারামের বিধান লঙ্ঘন করার মতো অন্যায় কাজে লিপ্ত হয়, তা প্রতিরোধ করে হালাল হারামের বিধান চালু করা মুসলমানদের ঈমানি দায়িত্ব। আল্লাহর নবী সা: বলেন, ‘তোমরা যদি কেউ কোনো অন্যায় দেখো তা হাতে বদলিয়ে দাও। যদি সম্ভব না হয় মুখে প্রতিবাদ করো। তাও যদি অসম্ভব হয় অন্তরে ঘৃণা করো (তার থেকে দূরে থাক)। ইহা সবচেয়ে দুর্বল ঈমানের পরিচয়’ (হাদিস)। অপর হাদিসে তিনি বলেন, ‘হে সাহাবাগণ! শিগগিরই কুরআন থেকে শাসন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। তখন শাসকেরা এমন হুকুম ও বিধান দেবে, তোমরা মান্য করলে তোমাদের গুনাহ হবে। অমান্য করলে তারা তোমাদের হত্যা করবে’ (হাদিস)। ইমাম হোসাইন রা: এবং কারবালার শহীদরা এর জ্বলন্ত প্রমাণ। এ রাজনীতির কারণে বর্তমান বিশ্বে মুসলমানের দেশে দেশে আজ কারবালা চলছে।
আল্লাহকে বিশ্বাস ও ভয় করে ইসলামের হালাল হারামের বিধান মেনে চলার ওপরই নির্ভর করে দুনিয়ার সুখ, শান্তি ও উন্নতি। আল্লাহ বলেন, ‘এলাকার লোকেরা যদি আল্লাহকে বিশ্বাস করে এবং ভয় করে চলে, আমি তাদের জন্য আসমান-জমিনের বরকতের সব দরজা খুলে দেবো’ (সূরা আরাফ : ৯৬)। এ জন্যই আল্লাহ বলেছেন, ‘হে ঈমানদারেরা! আল্লাহকে বিশ্বাস করো’ (সূরা নিসা : ১৩৬)।
কোনো কথা কাজ ও বিশ্বাসে অন্য কোনো ব্যক্তি শক্তি প্রতিষ্ঠান দল ও পার্টিকে আল্লাহর সমান বানানোটা হচ্ছে শিরিক। আর এ শিরিক থেকে মুক্ত হওয়া মুসলমানদের জন্য ফরজ। কুরআনবর্জিত হারাম রাজনীতি করে আল্লাহর সাথে শিরিক করার কারণেই আল্লাহর গজবস্বরূপ মুসলমানের দেশে দেশে আজ অরাজকতা। সঙ্ঘাত সংঘর্ষ। পারিবারিক ও সামাজিক অশান্তি। রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি ও বিশৃঙ্খলা।
লেখক : খতিব


আরো সংবাদ



premium cement