কম পানিতে কমলালেবু চাষে সাহায্য করছে এআই
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:১৫, আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১৩:২৪
স্পেনের কর্দোবা ও সেভিয়া শহরের মাঝে কমলালেবুর বাগিচা রোদের তাপে পুড়ে, শুকিয়ে গেছে। আগের বছরের মতো প্রায় ১৬ লাখ টনের ফসল যে এবার পাওয়া যাবে না, চাষিদের কাছে তা এখনই স্পষ্ট হয়ে গেছে।
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ধাক্কায় স্পেনের দক্ষিণে কমলালেবু চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পানির অভাব সত্ত্বেও গাছের সুরক্ষায় এবার আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করা হচ্ছে। একগুচ্ছ পদক্ষেপের মাধ্যমে সার্বিক সমাধানসূত্রের আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
দ্য অ্যারেদিয়া প্লান্টেশনের দিকে চলেছেন খোসে ফার্নান্দেস। সেখানে আর কোনো পানি আসছে না।
তিনি বলেন, ‘বীজ বপন করে গাছগুলো বড় করেছি। এখন সেগুলোর এমন অবস্থা দেখে খুব খারাপ লাগছে। ১৪ বছরে এমন অবস্থা কখনো দেখিনি। এখানে কিছু জায়গায় একেবারেই কোনো কমলালেবু ফলেনি। অন্য জায়গায় কয়েকটি ফল দেখা যাচ্ছে। তবে কমলার আকার খুবই ছোট, কয়েকটি এমনকি রস বের করারও উপযুক্ত নয়। গাছগুলো পুরোপুরি ফুলেফেঁপে ওঠার কথা কিন্তু সেটা ঘটেনি।’
গাছগুলো দেখাশোনার জন্য হাজার হাজার পরিবারের পানির প্রয়োজন। কিন্তু জলাধার প্রায় শুকনা। মাত্র ১০ শতাংশের মতো পানি অবশিষ্ট রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা কমপক্ষে পরের বারের খরার জন্য প্রস্তুতি নেবার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
কর্দোবা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী অ্যামিলিও কামাচো মনে করেন, ‘আমাদের পানির সরবরাহে উন্নতি ঘটাতে হবে। অর্থাৎ পানি ধরে রাখার আরো পথ খুঁজতে হবে। সেইসাথে ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে পানির ব্যবহার আদর্শ করে তুলতে হবে।’
সেই লক্ষ্যে বিশেষ সেন্সরের প্রয়োজন। সেই পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে সেভিয়ার উত্তরে এক ফিনকা বা খামারে মাটির আর্দ্রতা পরিমাপ করা হচ্ছে। সেইসাথে গাছের ব্যাসও মাপা হচ্ছে। গাছ কুঁকড়ে গেলে বোঝা যায় পানির প্রয়োজন।
ফিনকা ন্যাচারাল গ্রিনের সমন্বয়ক খেসুস মার্তিনেস বলেন, ‘এই প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে অন্যান্য খেতের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি দক্ষতা বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। কোন গাছের কখন, কতটা পানি প্রয়োজন আমরা তা জানতে পারছি।’
জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা সামলে কৃষিকাজ করতে হলে সেই জ্ঞান থাকা অত্যন্ত জরুরি। তবে স্পেনের দক্ষিণে কৃষিকাজ টিকিয়ে রাখার জন্য সেটাই যথেষ্ট হবে না।
স্পেনের ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার (ডাব্লিউডাব্লিউএফ) শাখার প্রতিনিধি ফেলিপে ফুয়েন্তেলসাস মনে করেন, ‘আমাদের সেচ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ বন্ধ করতে হবে, আরো ভালোভাবে পানির ব্যবহার করতে হবে। তাছাড়া সেচ ছাড়া চাষ করা যায়, এমন গাছের চাষ বাড়াতে হবে। সবাই মিলে একটা সমাধানসূত্র পেতে আমাদের নানা রকম পদক্ষেপ নেবার চেষ্টা করে দেখতে হবে। আরো কম পানি দিয়ে সেচ ব্যবস্থাও একটা সমাধানসূত্র হতে পারে।’
মালাগা শহরে টিইউপিএল অ্যাগ্রো নামের এক স্টার্টআপ কোম্পানি সেই লক্ষ্যে একটি সফটওয়্যার তৈরি করছে। এক্ষেত্রেও সেন্সরের মাধ্যমে পাওয়া তথ্য ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে সেই তথ্যের বিশ্লেষণই আসল বিষয়। কৃত্রিম বুদ্ধামত্তা ব্যবহার করে সেটা করা হচ্ছে।
প্রকল্পের প্রধান আন্তোনিও মানুয়েল আদ্রিয়ান বলেন, ‘এআই এই প্রকল্পের আত্মা। সেন্সর, প্রযুক্তি সে সব আগেই আছে। কিন্তু এআই-এর প্রয়োগ এই প্রকল্পের মাত্রা বাড়াতে আমাদের সাহায্য করবে। এর মাধ্যমে আমরা আরো ফল ভালো রাখতে পারবো। বিশেষ করে প্রত্যেক চাষিদের নির্দিষ্ট প্রয়োজন মেটাতে ভিন্নভাবে সাহায্য করতে পারবো।’
সাফল্য অবশ্য কিছুটা প্রচার বা যোগাযোগের উপরও নির্ভর করছে। সেটা যত সহজ হবে, ততই ভালো। হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে চাষিরা তথ্য ও পরামর্শ পাচ্ছেন। প্রয়োজনে তারাও প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন।
আদ্রিয়ানের মতে, ‘আমাদের ধারণা, আভোকাডো, কমলালেবু, জলপাই ও আঙুরের ক্ষেত্রেও ২০ থেকে ৪০ শতাংশ পানি সাশ্রয় করা সম্ভব।’
এখন যে খরা চলছে, এআই-এর মাধ্যমেও তা এড়ানো সম্ভব নয়। তা সত্ত্বেও এই প্রযুক্তি কম পানি নিয়ে আরো বেশি সময় কাজে লাগাতে সাহায্য করবে।
সূত্র : ডয়চে ভেলে
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা