যেখানে দরকার, সেখানেই লকডাউন
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৩ জুন ২০২০, ১০:৪৫, আপডেট: ১৩ জুন ২০২০, ১০:৪৬
বাংলাদেশে এখনো করোনা পরীক্ষার জন্য ভোর থেকে লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হয়৷ টাকা দিলেও টেস্টের সুযোগ মিলছে না৷ কিভাবে এই টেস্টের পরিধি বাড়ানো যায়? করোনা মোকাবেলায় স্বাস্থ্য বিভাগ নতুন করে কী ভাবছে?
ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, দৈনিক এক লাখ টেস্ট করার চেষ্টা চলছে৷ এমনকি র্যাপিড কিট নিয়েও আলোচনা হচ্ছে৷ অনেকেই অপ্রয়োজনে বা একাধিকবার টেস্ট করছেন৷
ডয়চে ভেলে : করোনা মোকাবেলায় স্বাস্থ্য বিভাগ শুরু থেকে যে পরিকল্পনা নিয়েছিল সে অনুযায়ী কি কাজগুলো হচ্ছে?
অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ : করোনা মোকাবেলায় শুরু থেকে পরিকল্পনা করা যায় না৷ একটাই যেটা করা যায়, যখন যেটা প্রয়োজন, আমরা সেটা করব৷ যখন যেটার প্রয়োজন হচ্ছে আমরা সেটা করছি৷ একটা সময় সবাই সাজেশন দিলো প্রচুর ভেন্টিলেটর ও আইসিইউ লাগবে? এখন বলা হচ্ছে হাইপো নেজাল অক্সিজেন দিতে হবে৷ এটা কিন্তু আগে কেউ বলেনি৷ আমাদের পরিকল্পনাটা ছিল, যখন যেটা দরকার হবে, তখন সেটা করব৷
বর্তমানে যে পরিস্থিতি সেটা কি আরো খারাপ হতে পারে?
এই রোগটার বিরুদ্ধে শরীরের মধ্যে প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেই৷ কাজেই প্রতিটি মানুষ সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা আছে৷ যতক্ষণ পর্যন্ত একটা ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হবে, এটা প্রয়োগ করা না হবে ততক্ষণ এটা চলমান থাকবে৷ আমাদের পরিকল্পনা হলো স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সক্ষমতার সঙ্গে সামঞ্জস্য আনা৷ এ কারণেই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড মাঝে মধ্যে সীমিত করা হয়, সেই কারণে জোনিং সিস্টেমটা চিন্তা করা হচ্ছে৷ মানুষের মধ্যে সচেতনতার চেষ্টা করা হচ্ছে৷ দেখা যাচ্ছে সম্প্রতি সংক্রমণ একটু বেড়ে যাচ্ছে৷ এটার একটা কারণ হলো আমরা যেহেতু পরীক্ষার সংখ্যা বাড়াচ্ছি, সেই কারণে সংক্রমিত মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে৷ যত বেশি পরীক্ষার সংখ্যা বাড়াবো, আরো বেশি সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা বাড়বে৷ ভয়ের কারণ এটা না৷ মানুষের মধ্যে যদি লক্ষণ না থাকে বা মৃদু লক্ষণ থাকে এবং তারা ভালো হয়ে যায় তাহলে একদিক থেকে এটা খারাপ না৷ আর যদি জটিল অবস্থায় চলে যায় এবং মৃত্যু বাড়ে তাহলে সেটা অবশ্যই কাম্য নয়৷ আমরা অভিজ্ঞতা থেকে শিখছি, চেষ্টা করছি যতটা মৃত্যু কমাতে পারি৷ সেটাই আমাদের সাফল্য হবে৷ এখন আমরা ওই দিকেই কাজ করছি৷
দেশের সব জায়গায় এখন কি স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে সুরক্ষা সামগ্রী ঠিকমতো পৌঁছানো যাচ্ছে?
অবশ্যই যাচ্ছে৷ প্রতিটি হাসপাতালকে বলা হয়েছে, তারা নিজেরাও যেন কিনে নেন৷ আমরা সবসময় চাই নার্স, চিকিৎসকসহ যারা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত তারা যেন অবশ্যই সুরক্ষা সামগ্রী পরেই চিকিৎসা দেন৷
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তো এগুলো নিজেরা কিনতে রাজি হয়নি?
দু'একজন ভয় পেয়েছেন৷ তারা বলেছেন, এগুলো অডিটে আপত্তি তোলে৷ আমি তাদের বলেছি, এটা একটা জরুরি পরিস্থিতি, আপনি যদি সৎ থাকেন আর সঠিকভাবে কাজটি করেন তাহলে ভয়ের কোনো কারণ নেই৷
প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে যে ব্রিফিং করেন, সেটা কতটা কষ্টসাধ্য?
অবশ্যই কষ্টসাধ্য৷ কিন্তু কাজটা আমরা করে যাচ্ছি৷ তবে একটা জিনিস খেয়াল রাখতে হবে, এটা আর এক মাস দুই মাসের বিষয় থাকছে না৷ যতদিন ভ্যাকসিন আবিস্কার না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত চলতেই থাকবে৷ এটা আরো লম্বা হতে পারে৷ এখন আমরা প্রতিদিন ব্রিফিং দেবো নাকি কী করব, সেটা নিয়ে আলাপ আলোচনা করছি৷ সাংবাদিকদের সঙ্গেও আলোচনা করব৷ এরপর একটা গ্রহণযোগ্য সমাধানে যাবো৷ অবশ্যই এটা একটা কষ্টসাধ্য কাজ৷ তবে এই কষ্ট তো আমরা করেই যবো৷
আগে যখন শুধু আইইডিসিআর নমুনা সংগ্রহ করতো, তখন কিভাবে চাপ সামলেছেন? কারণ অনেক ভিআইপির চাপ ছিল নিশ্চয়?
শুরুতে মানুষের চাহিদা এতটা বেশি ছিল না৷ প্রথম কেস শনাক্ত হওয়ার পর একটা আতঙ্ক সৃষ্টি হয় এবং মানুষের মধ্যে পরীক্ষার চাহিদা বেড়ে যায়৷ তখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বলল, যত বেশি টেস্ট করা যায় তত ভালো৷ আক্রান্তদের আইসোলেশনে রাখা যাবে, তারা রোগ ছড়াবে না৷ তখন আমরা দেখলাম যে, আইইডিসিআরের একার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়৷ তখন আমরা এটাকে সম্প্রসারণ করলাম৷ এখন আমাদের ৫৬টা ল্যাবরেটরি থেকে এটা পরীক্ষা হয়৷ জামালপুরের একটি মেশিন সমস্যা করছে, ফলে ওটাতে কাজটা বন্ধ আছে৷ ৫৫টি মেশিন কিন্তু সারাদেশে চলছে৷ এখন প্রতিদিন ১৩ থেকে ১৫ হাজার টেস্ট করছি৷ অল্প সময়ের মধ্যে আমরা আমাদের সক্ষমতাটাকে এতদূর নিয়ে গেলাম৷ এটা কিন্তু এত সোজা না, যে আপনি মেশিন কিনলেন আর সেবা দিলেন৷ এটা একটা হাইলি সফস্টিকেটেড টেস্ট৷
এখনো অনেক মানুষ টেস্ট করাতে পারছে না৷ টাকা দিয়েও সুযোগ পাচ্ছে না, ভোর থেকে লাইন দাঁড়াতে হচ্ছে? কিভাবে এই টেস্টের পরিধি বাড়ানো যায়?
অনেক মানুষ প্রয়োজন না থাকার পরও টেস্ট করছেন, আবার অনেকে একাধিকবার টেস্ট করছেন৷ আমরা চেষ্টা করেছিলাম তাদের টেলিফোন নম্বর বা এনআইডি দিয়ে তাদের সনাক্ত করব৷ যাতে কেউ অপ্রয়োজনীয় টেস্ট না করেন৷ কিন্তু অনেকেই ভিন্ন টেলিফোন নম্বর দিচ্ছেন৷ আবার এনআইডি নিয়ে আসেন না৷ তখন কি তাকে ফেরত দিয়ে দেবো? এখন নতুন ধরনের আরো অনেক টেস্ট পৃথিবীতে এসেছে, সেগুলো নিয়ে আমরা আলাপ করছি৷ এমনও হতে পারে দৈনিক লক্ষ টেস্ট করা হবে৷
র্যাপিড কিট নিয়ে আপনারা কিছু ভাবছেন?
এখনই সেটা নিয়ে ভাবছি না৷ তবে আমরা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলছি৷ তাদের মতামত পেলেই আমরা এগুলো শুরু করব৷
আপনারা যে প্রথম তিন মাস সময় পেয়েছেন, তখন তো অনেক কিছুই করা সম্ভব ছিলো? সেই কাজগুলো কি করেছেন?
আমরা চাই দেশে আরো যে সরকারি প্রতিষ্ঠান আছে সেখানে আমরা নতুন মেশিন বসাই৷ এখন পর্যন্ত যতগুলো বেসরকারি হাসপাতাল আমাদের কাছে পরীক্ষা করার অনুমতি চাইছে আমরা তাদের সবাইকে অনুমতি দিয়েছি৷ কিন্তু সমস্যা হলো, মেশিন কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না৷ সহজে বাংলাদেশে আনা যাচ্ছে না৷ কাজেই যেটা পারা সম্ভব ছিলো সেটা অবশ্যই আমরা করেছি৷ যেমন ধরেন এন-৯৫ মাস্ক বা কেএন-৯৫ মাস্ক সারা পৃথিবীতে এটার অপ্রতুলতা আছে৷ অনেকগুলো পিপিই আমরা কিন্তু আমাদের গার্মেস্টস থেকে বানিয়ে নিচ্ছি৷ আমরা চেষ্টা করছিলাম এন-৯৫ মাস্ক বা কেএন-৯৫ মাস্ক বা এর সমমানের মাস্ক বাংলাদেশে বানানো যায় কি-না৷ আমরা অন্যদের বলেছি, এই টেকনোলজিটা বাংলাদেশে ট্রান্সফার করেন৷ এটা আনার মতো এখনো বিদেশি কাউকে আমরা পাইনি৷ এই জিনিসগুলো কিন্তু বিবেচনা করতে হবে৷ যা করা সম্ভব ছিলো, তার সর্বোচ্চ চেষ্টা আমরা করেছি৷ পৃথিবীর অনেক দেশই কিন্তু সেটা করতে পারেনি৷
সর্বশেষ প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলুন?
আগের লকডাউনটা ছিল সবার জন্য৷ কোথাও কোভিড রোগী থাকুক আর না থাকুক সেখানেও লকডাউন হয়েছে৷ এখন যেটা হচ্ছে সেটা প্রয়োজন মাফিক৷ যেখানে দরকার সেখানেই করা হবে যাতে অন্য এলাকার লোকদের ভোগান্তি পোহাতে না হয়৷
সূত্র : ডয়চে ভেলে