সুষ্ঠু ভোট হলে ৭ আসন পেতে পারত আওয়ামী লীগ
- ইকবাল মজুমদার তৌহিদ
- ২৯ জুলাই ২০১৯, ০৮:১৫, আপডেট: ০১ আগস্ট ২০১৯, ১৪:২২
এখন বিএনপির মূল ফোকাস একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নতুন নির্বাচন নিশ্চিত করা। আর সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে যে পরিবেশ দরকার, প্রতিষ্ঠানগুলোকে যেভাবে শক্তিশালী করা দরকার সেই লক্ষ্যে সরকারের ওপর এক ধরনের চাপ তৈরি করতে হবে। বিএনপি এখন ওই কাজটিই করছে। আবার একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন কখনোই দেশনেত্রী, তিনবারের সফল প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়া হতে পারে না।
কথাগুলো বলছিলেন একাদশ জাতীয় সংসদে বিএনপির একমাত্র সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। টেলিভিশন টকশোর পরিচিত মুখ রুমিন ফারহানা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই ছিলেন আলোচনা। তার নিজ নির্বাচনী আসনের (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২) মানুষের কাছেও ওই সময় তেমন পরিচিতি না থাকলেও বিভিন্ন এলাকায় তার উদ্দীপ্ত বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় দ্রুত পরিচিতি পান।
অবশ্য, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে মনোনয়ন চেয়েও পাননি রুমিন ফারহানা। ওই আসনে উকিল আবদুস সাত্তারকে বিএনপি মনোনয়ন দেয় এবং তিনি বিজয়ী হন।
পেশায় আইনজীবী রুমিন ফারহানা বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক। তার বাবা অলি আহাদ বিখ্যাত ভাষা সৈনিক, মহান মুক্তিযোদ্ধা ও সুপরিচিত রাজনীতিবিদ। বর্তমান সমসাময়িকী রাজনীতি নিয়ে বৃহস্পতিবার নয়া দিগন্তের সাথে কথা বলেন ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। এখানে সাক্ষাতকারটি তুলে ধরা হলো।
নয়া দিগন্ত : বিএনপি এখন ছোট্ট একটি দল নিয়ে জাতীয় সংসদে। অথচ একসময় সরকারে না থাকলেও শতাধিক এমপি নিয়ে সংসদে যেত বিএনপি। এই পরিবর্তিত পরিস্থিতির কতটা মানিয়ে নিতে পেরেছে দলটি?
রুমিন ফারহানা : আমি তো মনে করি আমরা ভালোভাবেই মানিয়ে নিয়েছি। ২৯ ডিসেম্বর রাতে যে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বর্তমান সংসদ গঠিত হয়েছে সেটি কী ধরনের হয়েছে তা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রমাণিত। অর্থাৎ এখানে যে কোনো নির্বাচনই হয়নি, আসলে ব্যালটে সিল মারার একটি মহোৎসব হয়েছে এটা দেশের মানুষ দেখেছে। আপনি সুজনের রিপোর্ট দেখেন,আপনি টিআইবির রিপোর্ট দেখেন, আপনি বিদেশি গণমাধ্যমে রিপোর্ট দেখেন, পর্যবেক্ষকদের রিপোর্ট দেখেন, এমনকি নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার পর্যন্ত বলতে বাধ্য হয়েছেন যে নির্বাচনটি সুষ্ঠু হয়নি। একই কথা আমরা দেখেছি যে কিছু দিন আগে নির্বাচন ওপর যে রিসার্চগুলো হয়ে গেল তার প্রত্যেকটাতে একই রকম রিপোর্ট এসেছে। বাম মোর্চাও একই কথা বলেছে। এমনকি সরকারের ১৪ দলের শরিকও বলেছে। আমার মনে হয়, এই সংসদে আমাদের এই অংশগ্রহণ দেখে সরকারি দল বরং লজ্জিত হয়েছে। কারণ তারা জানে, যদি ন্যূনতম সুষ্ঠু ভোট হতো তাহলে এই ২৯৩টি আসনে বিএনপির বসত আর বাকি সাতটি আসন আওয়ামী লীগ পেলেও পেতে পারত। এরকম অবস্থায় দেশের মানুষ জানে কী ধরনের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এই সংসদ গঠিত হয়েছে এবং কী কারণে বিএনপি সাতটি মাত্র আসন নিয়ে সংসদে বসেছে। সুতরাং এখানে আমি অস্বস্তির কিছু দেখি না।
নয়া দিগন্ত : নির্বাচনের পর পার্লামেন্টে না যাওয়ার কথা বলেছিল বিএনপি। এরপর কৌশল পাল্টে তারা পার্লামেন্টে গেল। এই পরিবর্তিত কৌশল কতটা কার্যকর হবে বলে মনে করেন?
রুমিন ফারহানা : আমি তো মনে করি বিএনপির সফল। বিএনপির সফল এ কারণে যে নানা নিষেধের বেড়াজালে আমরা এখন একটি মানববন্ধনও করতে পারি না, আমাদের সভা সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয় না, এমনকি চার দেয়ালের মধ্যে আমরা মিটিং করব সেখানেও আমাদেরকে বাধা দেয়া হয়। এরকম অবস্থায় সংসদ একটি ভালো ফোরাম হতে পারে। যেখানে আমরা আমাদের দেশের কথা, আমাদের জনগণের কথা সর্বোপরি আমার দল, আমার নেত্রী কথা এবং আমার নির্বাসিত নেতার কথা যেখানে বলতে পারব। আপনারা দেখেছেন, এই সংসদে যোগ দেয়ার পর (সামান্য সাতটি আসনে যে প্রশ্নটি আপনি করেছিলেন) ওই সাত সদস্যের দুই-একজন আমরা একটু ভোকাল। এই আমরা যখনই কিছু বলতে গেছি, তখনই সরকারি দল আমাদের কিভাবে বাধা দিয়েছে। এমনকি সংসদের অভিভাবক ডেপুটি স্পিকারের কাছ থেকে আমি বারবার বাধাপ্রাপ্ত হয়েছি। তা প্রমাণ করে দীর্ঘদিন বিরোধী দলহীন থাকার ফলে সংসদ তার প্রাণবন্ততা হারিয়েছে, সংসদ যে একটি ডিবেটের জায়গা, এটা যে আইন প্রণয়নের জায়গা, সরকারি দলকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনবার জায়গা এই বিষয়টি যেন সরকার ভুলতে বসেছে। এরকম একটি সময় আমাদের সংসদে যাওয়া এবং আমি মনে করি সংসদে যাওয়ার কারণেই আমরা আমাদের দলের কথা, আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কথা এবং সর্বোপরি একটি নতুন নির্বাচন দেয়ার কথা আমরা বলতে পেরেছি।
নয়া দিগন্ত : মাঠের রাজনীতি ও সংসদে বিএনপির মূল ফোকাস কী? সেটি তুলে ধরতে আপনারা কতটা সফল হচ্ছেন?
রুমিন ফারহানা : আমি মনে করি আমাদের মূল ফোকাস এখন একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নতুন নির্বাচন এবং এই সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে যে পরিবেশ দরকার, প্রতিষ্ঠানগুলোকে যেভাবে শক্তিশালী করা দরকার সেই লক্ষ্যে সরকারের ওপর এক ধরনের চাপ তৈরি করা। একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন যদি আপনি চান সেই নির্বাচন কখনোই দেশনেত্রী, তিনবারের সফল প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়া হতে পারে না। সেই নির্বাচন কখনই দেশনায়ক তারেক রহমানকে দেশের বাইরে রেখে হতে পারে না। সুতরাং এ জায়গাগুলোতেই আমাদের প্রধান ফোকাস এবং এই লক্ষ্যেই বিএনপি মাঠে ও মাঠের বাইরে সংসদে কাজ করে যাচ্ছে।
নয়া দিগন্ত : বেগম জিয়ার মুক্তির বিষয়ে সংসদে আপনাদের অবস্থান কতটা ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে করেন?
রুমিন ফারহানা : আমি একটা বিষয় খুব স্পষ্টভাবে বলতে চাই, যতক্ষণ পর্যন্ত সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ আছে ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি ১৪৯টি আসনও লাভ করেন আপনি কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারবেন না। আমি বিশ্বাস করি, এ রকম একটি ফ্যাসিস্ট সরকারের যে সংসদ, সে সংসদে গিয়ে সর্বোচ্চ আমরা যা করতে পারি সেটা হচ্ছে জনমত তৈরী করা। আমরা সেখানে যে কথাগুলো বলছি এবং যে যৌক্তিক কারণগুলো দেখাচ্ছি, তাতে অন্তত দেশের মানুষ বুঝতে পারছে যে কিভাবে অবৈধ, অন্যায্য ও অনৈতিক কায়দায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে প্রায় দেড় বছর কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। আমি আপনার মাধ্যমে জানাতে চাই ওনার (খালেদা জিয়ার) শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। উনার পরিবারের সদস্যদের সাথে আমার নিয়মিত যোগাযোগ আছে। উনারা আমাকে জানিয়েছেন, উনি এখন এক মিনিটও আর ঠিকমতো দাঁড়াতে পারেন না, ওনার সাহায্য লাগে, ওনার ডায়েবেটিস অত্যন্ত হাই এবং ওনার আর্থরাইটিসের যে সমস্যা আছে সেটাও মারাত্মক রূপ নিয়েছে। ওনার শারীরিক অবস্থা ভীষণ খারাপ। আপনারা দেখেছেন, উনি হেঁটে গাড়িতে উঠেছেন এবং কারাগারে গেছেন, অথচ সেই উনি এখন এক মিনিট দাঁড়াতে পারছেন না। আমরা তো মনে করছি, সরকার পরিকল্পিতভাবে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এর সম্পূর্ণ দায়ভার সরকারকে বহন করতে হবে।
নয়া দিগন্ত : চেয়ারপারসন কারাবন্দী, কো-চেয়ারম্যান বিদেশে। এই সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে বিএনপি সংগঠন হিসেবে কতটা গুছিয়ে চলতে পারছে?
রুমিন ফারহানা : কিছু তো সমস্যা হচ্ছে এটা অস্বীকার করবার কোনো উপায় নেই। কিন্তু তারপরও আমি বলবো আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রাণান্তকর পরিশ্রম করছেন, উনি আমাদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। স্থায়ী কমিটিতে আমাদের শ্রদ্ধেয় সদস্যবৃন্দ আছেন, অত্যন্ত দ্ক্ষ ও কার্যকর সেন্ট্রাল কমিটি আছে আমাদের এবং জেলা উপজেলা পর্যায়ে আমাদের ধারাবাহিক কমিটি আছে। সুতরাং আমাদের চেইন অব কমান্ড আছে। আমরা দেশনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে ও স্থায়ী কমিটির নির্দেশনায় আমরা কাজ করছি।
নয়া দিগন্ত : টকশো দিয়েই রাজনৈতিক অঙ্গনে আপনি পরিচিতি পেয়েছেন। যখন বিএনপির অনেক নেতাই বিভিন্ন কারণে টকশোতে অংশ নিতেন না তখন আপনাকে নিয়মিত দেখা যেত টকশোতে। এই বিষয়টি কতটা কিভাবে দেখছেন?
রুমিন ফারহানা : টকশোতে এসেছি আমি এমন একটি সময় যখন এই ফ্যাসিস্ট সরকার তার নির্যাতনের স্টিমরোলার চালাচ্ছে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই এক ধরনের ভীতি সঞ্চার হয়েছিল চার পাশে এবং সেই সময়ে মানুষ বিএনপি যারা করতেন বিএনপি নেতাকর্মীরা অনেকেই হয়তো টকশোতে আসেননি বা সামনা-সামনি হননি। আমি পারিবারিকভাবেই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অত্যন্ত স্নেহভাজন ছিলাম, আছি এবং আমার আজকের এই অবস্থান পুরোপুরিই তাদের আশীর্বাদে। সেইসময় আমার মনে হয়েছে আমি যদি দেশের পক্ষে,মানুষের পক্ষে, আমার দলের পক্ষে এবং আমার নেত্রী পক্ষে না দাঁড়াই তাহলে সেটা আমার নিজের কাছে আর জবাব দেয়ার সুযোগ থাকবে না। সেই ব্যক্তিগত বিবেকের দায়বোধ থেকেই ওই সময় টকশোতে আমার সত্য উচ্চারণ।
নয়া দিগন্ত : টকশোর মতো সংসদেও আপনার বক্তব্য জনগণের কাছে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। সোস্যাল মিডিয়ায় আপনার বক্তব্যের ভিডিও ভাইরাল হচ্ছে। অনেকে বলছে, সংসদ অধিবেশন জমিয়ে তুলেছেন আপনি। বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?
রুমিন ফারহানা : দেখুন ভিডিও ভাইরাল হওয়া বা সংসদ জমিয়ে তোলা আমার উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য নয়। আমি যা বিশ্বাস করি, আমি যা দেখি, আমি যা সত্য বলে মনে করি এবং মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি সেটিই আমি বলি। হয়তো সেটিই দেশের মানুষ গ্রহণ করে এবং দেশের মানুষের মনের যে কথাগুলো এবং দুঃখ ও বঞ্চনার যে জায়গাগুলো সে জায়গাগুলো থেকে আমার কথাগুলো হয়তো মিলে যায় সে কারণেই মানুষ আমার কথাগুলো গ্রহণ করে। এটা আমি বলব দেশের মানুষের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ যে আমি তাদের ভালোবাসা পেয়েছি।
নয়া দিগন্ত : রাজনীতিতে নিয়মিত হবেন এই ভাবনাটা কবে ও কিভাবে মাথায় এসেছে আপনার?
রুমিন ফারহানা : একদম শৈশবের যখন আমি একেবারেই ছোট মানে স্কুলের একেবারে শুরুর দিকে। ছোটবেলা থেকেই জানতাম আমি রাজনীতি করব। রাজনীতি করব বলেই একদম অল্প বয়সে আমার পেশাও ঠিক করি যে আমি একটি পেশায় যাব এবং এমন একটি পেশায় যাব যে পেশা থেকে উপমহাদেশের প্রখ্যাত সব রাজনীতিবিদ এসেছেন। আমি সারাজীবন সাইন্সের স্টুডেন্ট ছিলাম। স্কুল জীবনে ফাইভ সিক্সে পড়া অবস্থায় আমি ঠিক করে ফেলি আমি রাজনীতি করব এবং সেজন্যই আমি আইন পেশা বেছে নেই। এটা স্বাধীন পেশা, সম্মানজনক পেশা।
নয়া দিগন্ত : আপনার বাবা প্রখ্যাত ভাষা সৈনিক অলি আহাদ একটি সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখতেন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে কতটুক কাজ করতে পারছেন বলে আপনার মনে হয়?
রুমিন ফারহানা : আমার রাজনীতিতে আসা হয়েছে অত্যন্ত কঠিন একটা সময়ে। আমি যখন রাজনীতিতে আসছি তখন এই ফ্যাসিস্ট সরকার তার সবরকম রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে দেশের সাধারণ মানুষের ওপরে একটা ভয়ের সংস্কৃতি চালু করেছে। একটা অত্যাচারের স্টিমরোলার চলছে। গুম বিচারবহির্ভূত হত্যা, মানুষের বাক স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ, মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার উপর হস্তক্ষেপ ঘটছে। মানুষ সর্বক্ষণ একটা ভয়ের মধ্যে থাকে। এরকম একটা সময় আমার রাজনীতিতে আসা ও অত্যন্ত সোচ্চারভাবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ। সুতরাং আমি মনে করি যে আমি যা হতে চেয়েছি যেভাবে চেয়েছি বিষয়টি সেভাবে হয়েছে এবং আমার বাবার একটা শিক্ষা সারা জীবনের পাথেয় যে শিক্ষাটা আমার মধ্যে আমৃত্যু থাকবে। বাবা সবসময় বলতেন আমি ভীরু মেয়ে দেখতে চাই না, আমি সাহসী মেয়ে চাই। বাবা কখনোই পছন্দ করতেন না আমি কোনো বিষয় ভেঙে পড়ছি বা কাঁদছি। এরকম বিষয়গুলো উনি একদম অপছন্দ করতেন। যতটুকু সাহস তার পুরোটাই আমার বাবার কাছ থেকে পাওয়া। আমার ভয় লাগে না, সত্যিই কোনো কিছুতেই আমার ভয় লাগে না। আর একটা বিষয় বাবা শিখিয়েছেন, রাজনীতি যদি করতে চাও তাহলে তোমার সেই ত্যাগের মানসিকতা থাকতে হবে, দেশের মানুষের প্রতি সেই ভালোবাসা থাকতে হবে, ডেডিকেশন থাকতে হবে এবং সর্বোপরি পড়াশোনার সাথে একটি সম্পর্ক রাখতে হবে। দেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়ের উপর কিছু তো দখল থাকতে হবে এবং আমি সে চেষ্টা আমি করি।
নয়া দিগন্ত : রাজনৈতিক দীক্ষাটা কি পরিবার থেকেই পেয়েছেন নাকি দলীয় পরিবেশ থেকে?
রুমিন ফারহানা : আমি বলব দুটিই। কারণ এমন এক রাজনৈতিক পরিবারে আমার জন্ম আমার বাবা ছিল ভাষা আন্দোলনের সিপাহসালার ১৫৪ ধারা ভঙ্গের প্রধান নায়ক। অলি আহাদ সাহেব ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। এ কারণে উনি স্বাধীনতা পুরস্কার পান। তার জীবনের দীর্ঘ ১৯ বছর তিনি কারাগারে কাটিয়েছেন। রাজনীতি করেছেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি,শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, মাওলানা ভাসানী ও শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে। আমার বাবা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। এমন এক রাজনৈতিক পরিবার থেকে আসার ফলে কিছুটা রাজনৈতিক শিক্ষা তো আমার জন্মগতভাবে আছেই। তারপর আমার দল থেকে নিশ্চয় আমি শিখেছি।
নয়াদিগন্ত : রাজনৈতিক মাঠে এসে আপনি আপনার পরিবারকে ঠিকমতো সময় দিতে পারছেন কিনা এবং আপনার ব্যস্ততা নিয়ে পরিবারে কোনো অভিযোগ আছে কিনা?
রুমিন ফারহানা : অভিযোগ নয় বাস্তব সত্য হলো আমাদের ২৬ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ১ লাখ মামলা আছে। সত্য হলো গত এক বছরে ৪৫০ জন মানুষ গুম হয়ে গেছে,আমাদের বহু নেতাকর্মী গুম হয়ে গেছে, বহু নেতাকর্মী বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন। আপনি জানেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের কালো থাবা আমাদের মাথার উপর ঘুরছে। এরকম একটা অবস্থায় আমার রাজনীতি করা। আমার পরিবার বলতে আমার মা। আমার রাজনীতি করাতে উনি কখনই খুব যে খুশি হয়েছেন তা নয় কিন্তু উনি মেনে নিয়েছেন। আমাদের পরিবারটা ভীষণভাবে ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। আমার মা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ছিলেন আর আমার বাবাকে তো আপনারা চিনেন। ওনাদের ইচ্ছা ছিল আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করি। অথচ আমি পড়লাম আইনে। উনারা চেয়েছিলেন ঠিক আছে আইন যেহেতু পড়ছে জাস্টিস হবে। সেটাও করলাম না এলাম রাজনীতিতে। ওনারা হয়তো খুব খুশি হননি কিন্তু বাধাও কখনো আমাকে দেননি। সুতরাং আমি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পেরেছি, স্বাধীনভাবে আমি আমার সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছি। আমি আমার পরিবারের কাছে কৃতজ্ঞ। পরিবারকে সময় আমি খুব বেশি দিতে পারি না।
নয়া দিগন্ত : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের বাইরে। সর্বোপরি এই মুহূর্তে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য বিএনপির কি করণীয়?
রুমিন ফারহানা : আমি মনে করি বিএনপি সঠিক পথেই এগোচ্ছে। যদিও এই বিচার ব্যবস্থা নিয়ে বহু প্রশ্ন আছে। আমাদের সাবেক প্রধান বিচারপতি বলে গেছেন, দেশে আইনের শাসন নেই। সরকার নিম্ন আদালতকে কব্জা করার পর এখন উচ্চ আদালতের দিকে হাত বাড়াচ্ছে। এবং শেষ পর্যন্ত তাকে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে এখন মামলা করা হয়েছে এবং তিনি এখন কানাডার আশ্রয়প্রার্থী। যে দেশের প্রধান বিচারপতির উপর এরকম অমানবিক নির্যাতন চলে সে দেশের বিচার ব্যবস্থা নিয়ে আর কী বলবো?তারপরও রাষ্ট্রকাঠামো সেটা যতই ভঙ্গুর এবং অকার্যকর হোক তারপর তো আমরা একটা কাঠামোর মধ্যে আছি। সুতরাং আমরা আইনি লড়াই চালাচ্ছি একই সঙ্গে সরকারকে আমি বলবো আজকে যেভাবে তারা আদালতকে কব্জা করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে একটার পর একটা রাজনৈতিক মামলা দিয়ে তাকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। একদিন এই সরকারকে ইতিহাসের কাছে এর জবাব দিতে হবে। আর বিএনপি সংগঠিত হচ্ছে। বিএনপি আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে এবং একইসাথে আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বিএনপির এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটাবে বলে আমি মনে করি।