২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
একান্ত সাক্ষাৎকারে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী

হাজীদের ভোগান্তি দূর করতে বন্ধ করতে হবে দালাল সিস্টেম

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আলহাজ শেখ মো: আব্দুল্লাহ - ছবি : সংগ্রহ

নয়া দিগন্তকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আলহাজ শেখ মো: আব্দুল্লাহ বলেছেন, হজব্যবস্থাপনায় দালালদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে না পারলে হাজীদের ভোগান্তি দূর হবে না। দালালবিহীন হজ যাতে করা যায় এবার আমরা সে ব্যবস্থা করব। এই দালালরা গ্রামের সহজ-সরল লোকদের কম রেটে হজে নেয়ার কথা বলে প্রতারণা করে থাকেন। এখন থেকে আমরা কঠিনভাবে দায়িত্ব নিচ্ছি, এই দালাল সিস্টেমটার যেকোনো উপায়ে অবসান ঘটাতে হবে। এজন্য আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সবার সাথে কথা বলছি, মতামত নিচ্ছি, কাজ করছি।

হজে অনিয়মের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি আগেই বলেছি আল্লাহর মেহমান হাজীদের চোখ দিয়ে যাতে পানি বের না হয়। হাজীরা ইহরামের কাপড় পরে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াবেন, তাদের যথাযোগ্য মর্যাদা পাবেন না- আল্লাহর রহমতে এ বছর আমরা এটা কিছুতেই হতে দেবো না। তিনি বলেন, হজব্যবস্থাপনায় শাস্তিযোগ্য কোনো কাজ যাতে না হয় এ ব্যাপারে আমরা প্রতিজ্ঞা করেছি। আমাদের কথা হচ্ছে- আমরা কোনো শাস্তিমূলক কাজ করতে দেবো না। হয়ে গেলে কঠিন শাস্তিতো হবেই। 

জঙ্গিবাদ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে শেখ আব্দুল্লাহ বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের অবস্থান নেই বললেই চলে। এ ব্যাপারে আমরা কঠিনভাবে সচেতন আছি। জঙ্গিবাদ বিরোধী আন্দোলন যাতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে সবসময় চালু থাকে এ ব্যাপারে শক্ত কমিটি এবং কর্মসূচি আছে এবং পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করা আছে। 


আওয়ামী লীগের ধর্ম সম্পাদকের পাশাপাশি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে শেখ আব্দুল্লাহ বলেন, রাজনৈতিক দায়িত্ব পালনের যে অভিজ্ঞতা তা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনেও যথেষ্ট কাজে লাগছে। কারণ হলো, দলের ধর্ম সম্পাদক হিসেবে যে কাজগুলো ছিল মন্ত্রণালয় হিসেবে ওই কাজগুলোকে সরকারি প্রচ্ছাদনের মধ্যে করছি। 
গত সোমবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে নয়া দিগন্তকে দেয়া ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহর সাক্ষাৎকারটি নিম্নরূপ :


নয়া দিগন্ত : আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বের পাশাপাশি এখন সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করছেন। কেমন লাগছে, কিভাবে দায়িত্ব পালন করছেন?
শেখ আব্দুল্লাহ : দলের ধর্ম সম্পাদক ও একাধারে ধর্মমন্ত্রী- এই দু’টির মধ্যে আমি কোনো পার্থক্য দেখি না। একই ধরনের দায়িত্বে যখন আমি আওয়ামী লীগের ধর্ম সম্পাদক ছিলাম তখন ছিলাম আওয়ামী লীগের। কিন্তু সৌভাগ্যবশত আওয়ামী লীগ তখনো কিন্তু সরকারি দল। সরকারি দলের ধর্ম সম্পাদকের দায়িত্ব নেচারালি অতীতের নিয়ম অনুযায়ী যারা রাজনৈতিক দলের যে মন্ত্রণালয়ে থাকেন মন্ত্রণালয় ভাগ করার সময় আগে আমরা জানতাম-দেখতাম তাদের সেই মন্ত্রণালয় দেয়া হতো। যেমন কৃষি সম্পাদক কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বেই থাকতেন, যিনি দলীয় শিক্ষাসচিব থাকতেন তাকে কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়েরই দায়িত্ব দেয়া হতো এবং এটা যথাযথ ছিল। যদিও মাঝে মাঝে কিছু ব্যত্যয় ঘটেছে। কারণ মন্ত্রণালয় চালানোর যে অভিজ্ঞতা যেকোনো রাজনৈতিক দলের বিভাগীয় সম্পাদকের কাজটা কোনো অংশেই কিন্তু ছোট না; অনেক বড় কাজ। সেখানে এই কাজের বিষয়ে তার একটা ট্রেনিং হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ আছে। পরে তাকে যদি ওই মন্ত্রণালয়ই দেয়া হয় তাহলে কাজটা সহজ হয়, ভালো হয় এবং সুন্দরভাবে করার সুযোগ থাকে। ওই দিক থেকেই আমি বলব, যেহেতু আমি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে কিছু জ্ঞানার্জন করার সুযোগ লাভ করেছি। একাধারে আমাকে যখন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, আমরা আগের অভিজ্ঞতা এবং যেটুকুন আমি শেখার সুযোগ পেয়েছি এটাকে পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগিয়ে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে যে দায়িত্ব সেই কাজটা সুন্দর ও সুচারুভাবে করার জন্য আমার পক্ষে খুব সহজ হচ্ছে এবং ইনশাআল্লাহ সবাইকে আকৃষ্ট করার মতো, সবাইকে খুশি করার মতো, মন্ত্রণালয়ের সুনামকে বর্ধিত করার মতো এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে প্রত্যেকটা মন্ত্রণালয়কে তদারকি করে যেভাবে নির্দেশ দিচ্ছেন আমি মনে করি এ মন্ত্রণালয়েও তিনি কতগুলো সুন্দর ও কঠিন নির্দেশনা প্রদান করেছেন। আমি তার নির্দেশনামতে এবং মন্ত্রণালয়সহ সার্বিক জনগণের জন্যে আমি কাজটা সুন্দরভাবে করার জন্য ভালো সুযোগ পাবো। 


নয়া দিগন্ত : তার মানে আপনার রাজনৈতিক দায়িত্ব্ পালনের যে অভিজ্ঞতা সেটা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনেও যথেষ্ট কাজে লাগছে?
শেখ আব্দুল্লাহ : কারণ হলো এটা যে, একই বিষয়ে যেমন আমি ধর্ম সম্পাদক হিসেবে যে কাজগুলো ছিল মন্ত্রণালয় হিসেবে ওই কাজগুলোকে সরকারি প্রচ্ছাদনের মধ্যে করা। কিন্তু এমনি কাজটা কিন্তু একই ধরনের এবং এই কাজটা করাতে মন্ত্রণালয়ের কাজগুলো করার জন্য আমার ওই দলীয় অভিজ্ঞতা সুন্দরভাবে কাজে লাগছে। কাজগুলো করার ক্ষেত্রে আমি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি এবং মনে করছি কাজগুলো কি ত্রুটিপূর্ণ হচ্ছে না ত্রুটিযুক্ত হচ্ছে- এটাও আমার পক্ষে বোঝা সম্ভব হচ্ছে। 
নয়া দিগন্ত : আপনি দায়িত্ব নেয়ার পরই তাবলিগের বিশ^ ইজতেমা অনুষ্ঠান নিয়ে একটি সাংঘর্ষিক অবস্থা চলছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আপনারা দু’পক্ষকে নিয়ে একই মাঠে ইজতেমা করাতে সক্ষম হন। এটা কিভাকে সম্ভবপর হয়েছিল? 
শেখ আব্দুল্লাহ : বিষয়টা হলো এ কথা আমি অনেকবার বলেছি, বোখারি শরিফের প্রথম হাদিস হচ্ছে- ‘ইন্নামাল আ’মালু বিননিয়্যাত।’ মানুষের কোনো কাজ করার সদিচ্ছাটাই ওই কাজটির শক্তি অর্জনের বড় উপায়। এক কথায় বলতে গেলে নিয়তগুণেই ফলাফল অর্জন করা যায়। নিয়ত যদি সঠিক থাকে এবং কাজ করার মধ্যে একাগ্রতা থাকে, যদি বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নেয়ার মতো সৎসাহস থাকে, ভালো কাজে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলকে খুশি করার কাজে অগ্রসর হওয়া যায় তাহলে আল্লাহ সাহায্য করেন। আমি অনেকবার প্রমাণ পেয়েছি। 

তাবলিগের বিষয়টা অত্যন্ত আপেক্ষিক। আমি যখন প্রথম মন্ত্রণালয় বসি তখন প্রথম যে ফাইলটি স্বাক্ষর করি সেটি ছিল তাবলিগ জামাতের ফাইল। আমি খুশি হলাম। আমি ফাইলটি আনন্দের সাথে সই করলাম। সেখানে দেখা গেল, তাবলিগে জামাতের দু’টি গ্রুপ। তাবলিগ জামাত অনিশ্চয়তার মধ্যে। এমন পরিস্থিতিতি সৃষ্টি হয়েছিল যে, তাবলিগ জামাতকে আমাদের মুসলমানরা নয়, অন্য ধর্মের লোকেরাও বাঁকা দৃষ্টিতে দেখা শুরু করল। অথচ তাবলিগের যে সুনামটা এত দিন পর্যন্ত অর্জিত হয়েছিল, অন্য ধর্মের লোকেরাও মনে করত তাবলিগ একটি পবিত্র জায়গা এবং ভালো অনুষ্ঠান। আমি দেখলাম কিছুদিন আগে তাবলিগের যে গোলমালটা এখানে অনুষ্ঠিত হয়েছে এটাতে একজন মারা গেছেন এবং বহুলোক আহত হয়েছেন। দুই গ্রুপকে একত্রকরণের জন্য প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে আমরা দেওবন্দ সফর করে মতামত নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এর আগে যখন মন্ত্রী ছিলাম না তখনও আমি দুই গ্রুপের বিরোধ মীমাংসায় সক্রিয় ছিলাম। আগের বছর যে ইজতেমা হয়েছিল সেটাতেও আমি ভূমিকা পালনের চেষ্টা করেছিলাম। যেকোনো কারণে দেওবন্দ যাওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে আমাদের সরে আসতে হয়। সেখানে গিয়ে সহজে কোনো ফলাফল পাওয়া যাবে না এমন একটি বিষয় আমাদের পররাষ্ট্র এবং ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কাছে মতামত আসার পর আমরা নেতৃত্বে সে জন্য যাওয়া হয়নি। যাওয়াটা বাদ দিয়ে আমরা কিন্তু তাবলিগ জামাতকে এক করতে হবে- এ আশাটা ছেড়ে দেইনি। বিকল্প রাস্তায় যেকোনোভাবে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবাই, আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে আমি আমাদের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সবাই মিলে রাতদিন কঠিন পরিশ্রম করে দেশের আলেম-ওলামা সবার সহযোগিতায় দুই পক্ষের যারা তাবলিগের তাদেরকে সম্পৃক্ত করে দুই পক্ষকে একত্রে বসানো আল্লাহর রহমতে সম্ভব হয়। এটা কারো একার কৃতিত্ব নয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব প্রধানসহ সবার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে এটা সম্ভব হয়। আমরা একবার গুছিয়ে আনি, আবার ভেঙে যায়। নতুন নতুন সঙ্কট সৃষ্টি হয়। যতবারই সঙ্কট সৃষ্টি হয় আমরা হতাশ হইনি ছেড়ে দেইনি। মাঝে মধ্যে আমরা এমন অবস্থায় এসে গিয়েছিলাম যে, আর যেন সম্ভব নয়। তারা এমন কঠিন কথা বলে যে, হতাশ হওয়ার মতো। কিন্তু আমি সবাইকে বলেছি, আমরা আল্লাহর কাজে নেমেছি, পেছানো যাবে না। দুই হাত তুলে মুনাজাতও করেছি। আল্লাহর কাছে বলেছি, এতে আমাদেরতো রাজনৈতিক কোনো ফায়দা নেই, সরকারেরও কোনো বেনিফিট নেই। এটাতো বিশ্ব ইজতেমা। এটা বিশ্বের মধ্যে আমাদের জন্য একটি গৌরবোজ্জ্বল কাজ। এই ইজতেমার গুরুত্ব অনুধাবন করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু তার জীবদ্দশায় টঙ্গীর এই বিশ্ব ইজতেমার জায়গাটি দান করে গিয়েছেন। সেখানে গোলমালটা হওয়ার আগে অত্যন্ত সুন্দরভাবে ইজতেমা হয়ে আসছিল।

আপনারা জানেন, এ দেশের মানুষ ধর্মপরায়ণ। যে যে ধর্মেরই হোক সে তার ধর্মকে মানতে ভালোবাসে। বিশেষ করে মুসলমানের ধর্ম ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম ধর্মকে প্রতিপালন করার জন্য বিশ্ব মুসলমান খুব ব্যস্ত। তারচেয়ে বাংলাদেশের মানুষও কম ব্যস্ত না। বাংলাদেশে ধর্মকর্ম যাতে অত্যন্ত সুন্দরভাবে প্রতিপালিত হয় এ ব্যাপারে খুবই যত্নবান। সর্বশেষ বিশ্ব ইজতেমার ব্যাপারে এতটুকু বলব, সর্বশেষ যখন একেবারে ভঙ্গুর অবস্থা, সর্বশেষ প্রচেষ্টা যখন ফেল করে যাচ্ছিল, আর বোধ হয় পারলাম না, ইজতেমা বোধ হয় হবে না। বিশেষ করে শেষের দিকে এসে দুই পক্ষের মধ্যে মিল করা সম্ভব ছিল না। জানি না কে কিভাবে নেবেন, আমি হতাশ হইনি, হাল ছাড়িনি। আমি তখন ব্যক্তিগত পর্যায়ে হোমওয়ার্কটাকে এত প্রসারিত করলাম যে, নিজের বাড়ি বাদ দিয়ে যে বাড়ি গেলে কাজটা সুন্দর হয় সে সব বাড়িতে যেতে আমি বাধ্য হয়েছি, তাদের মেহমান হয়েছি। স্বাভাবিকভাবে বাড়ি গেলে যে মানুষ নমনীয় হয়, আমি সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছি। মোটামুটি যেখানে গেলে আমার হোমওয়ার্ক সুন্দর ও সফল হয় আমি সে কাজটাও করেছি এবং শেষ দিনের আগের রাত পর্যন্ত আমি কিন্তু ঘুরে বেড়িয়েছি। সর্বশেষ আল্লাহর কাছে চেয়েছি আল্লাহর রহমত পেয়েছি। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা যিনি বঙ্গবন্ধুর মতো প্রজ্ঞাবান তিনি আমাকে বলেছেন, কখনো হাল ছাড়বেন না, এটাতে সফলতা আনতে হবে। কিছু লোক বলে বেড়াচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসেছে, এখন তাবলিগ হলো কী হলো না উনার খেয়াল থাকবে না। কথাটা সম্পূর্ণ ভুল। প্রধানমন্ত্রী কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়েছেন আমাদেরকে। আমাকে বলেছেন, আপনার এখানে ফেল করা চলবে না। আমি সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। বাস্তবভিত্তিক একটি পরিকল্পনা আমার মাথায় আসাতে কাজটা করা সহজ হয়েছে। সেটা হলো-সর্বশেষ যে বাধা ছিল তিন দিন বয়ান করা, আখেরি মুনাজাত নিয়ে, প্রাধান্য বিস্তার নিয়ে। কোনোমতেই তারা ঐকমত্যে আসতে পারছিল না। শেষ মুহূর্তে ভেঙে যাচ্ছিল। আমার ঘুম হচ্ছিল না। পরে আমার মাথায় বুদ্ধি এলো তিন দিনের জায়গায় চার দিন করা। দুই দিন দুই দিন ভাগ করে দিয়ে তাদেরকে অনেক বুঝিয়ে রাজি করালাম। শেষ পর্যন্ত সেভাবেই ইজতেমা হলো। তাবলিগের আলেম, পুলিশ প্রশাসন, স্থানীয় প্রশাসন, স্থানীয় এমপিসহ সবার সহযোগিতায় ইজতেমা সফল হয়। 

নয়া দিগন্ত : ইজতেমা শেষ পর্যন্ত দুই দিন করে ভাগ হয়ে আলাদাভাবে করার মধ্য দিয়ে তাবলিগের পরিষ্কার বিভাজন রয়েই গেছে। এই বিভাজন দূর করার জন্য আপনাদের প্রচেষ্টা কি এখনো আছে?
শেখ আব্দুল্লাহ : আমি দুই গ্রুপের ইজতেমায় গিয়েছি। দুই গ্রুপই আমাদের ওপর খুশি। উনারা বলেছিলেন, শেষতো হয়ে গেল। এরপর কী হবে। আমি বলেছিলাম দেখেন, আপনাদেরকে স্থায়ী একটা সমাধান দেয়ার জন্য চেষ্টা করব। আমাদেরকে কিছু দিন সময় দেন। আবার আমরা যাদেরকে নিয়ে এটা করা সম্ভব ধর্ম মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ আলেম-ওলামা দুই গ্রুপের লোকজন সবাইকে নিয়ে বসব। আমরাতো এখন অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। তাবলিগের মতো একটা ধর্মীয় উদ্যোগ ভাগ হয়ে যাক আমরা চাই না। এটাকে এক করার জন্য আমরা প্রয়াস চালাব। তবে মন্ত্রণালয়ের একটি বড় কাজ হলো হজ। তাবলিগের ইজতেমার পরেই হজের কাজ এসে পড়ে। ফলে আমাকে সেদিকে মনোযোগ দিতে হয়। আমি হজের কাজে সৌদি আরব যাই। এখন হজের কাজে আমাদের বেশি সময় দিতে হচ্ছে। 

নয়া দিগন্ত : আপনি দায়িত্ব গ্রহণের পর ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উল্লেখযোগ্য কী কী কাজ করতে পেরেছেন
শেখ আব্দুল্লাহ : আমি তাবলিগের পর পরই হজের কাজে হাত দিয়েছি। আমি কিন্তু এক ধর্মের মন্ত্রী না। আমি মনে করি বাংলাদেশের যতগুলো ধর্ম আছে সব ধর্মেরই প্রতিমন্ত্রী। আমার দায়িত্ব হলো সব ধর্মকে সমান চোখে দেখা এবং সুবিচার করা। পবিত্র কুরআনে আছে, লাকুম দ্বিনিকুম ওয়াল ইয়াদ্বিন। যার যার ধর্ম তাকে পালন করতে দিতে হবে। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর সংবিধানের যে চারটি মূলনীতি করেছিলেন তার একটি হলো ধর্মনিরপেক্ষতা। আজকে ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ অনেকে নানভাবে ব্যবহার করে। যারা বঙ্গবন্ধুর এ কথাটাকে ভালোভাবে দেখে তারা ভালোভাবে নেয়, যারা সমালোচনা দেখে তারা উল্টো পাল্টা কথাটা ব্যবহার করে। কিন্তু আমি বলতে চাই, ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থই হলো সব ধর্মের প্রতি সমানভাবে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে করে যার যার ধর্ম তাকে পালন করার সুযোগ দেয়া। আমি সার্বিক বিষয়গুলো সামনে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যেই আমি মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো নিয়ে বৈঠক করে পর্যালোচনা করেছি। সেখানে সব ধর্মের সাথে সম্পর্কিত প্রকল্প রয়েছে। 

নয়া দিগন্ত : হজের অনিয়ম রোধে আপনি শুরু থেকেই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আসছেন। কাউকে অনিয়ম করতে দেবেন না বলেছেন। সেই অনিয়ম রোধে আপনি কোন ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছেন? 
শেখ আব্দুল্লাহ : আমি আগেই বলেছি হজের বিষয়গুলো নিয়ে আমি সৌদি আরব গিয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধুকন্যা ক্ষমতায় আসার পর প্রতিবছরই হাজীর সংখ্যা বাড়ছে। হজের ব্যবস্থাপনাটাও আস্তে আস্তে অগ্রসর হচ্ছে। প্রতিবছরই সমস্যা একটু একটু কমছে। গত বছরও হজের ব্যবস্থাপনা অনেক সুন্দরভাবে হয়েছে। অনেক সমালোচনা কম হয়েছে। আমার দৃঢপ্রতিজ্ঞা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাকে সামনে রেখে, আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলকে খুশি করার জন্য আল্লাহর মেহমান হাজীদের চোখ দিয়ে যাতে পানি বের না হয়। হাজীরা ইহরামের কাপড় পরে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াবেন, তাদের যথাযোগ্য মর্যাদা পাবেন না- আল্লাহর রহমতে এ বছর আমরা এটা কিছুতেই হতে দেবো না। তাদের সার্বিক সমস্যার যাতে সমাধান করা যায় এ জন্য যা যা করার দরকার আমরা সকলে মিলে সেই কল্যাণমূলক কাজ করার জন্য কঠিনভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। 

নয়া দিগন্ত : সর্বশেষ ২০টি হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে সৌদি মোয়াচ্ছাছার অফিস থেকে অনিয়মের অভিযোগ এসেছে। আপনারা কিছু এজেন্সিকে শাস্তি দিয়েছেন। তার মানে অনিয়ম কিন্তু বন্ধ হয়নি। 
শেখ আব্দুল্লাহ : এবার আমি বিকল্প ধরনের কথা বলেছি। এবার অনিয়ম হতে দেয়া হবে না। কলেরা হওয়ার আগেই প্রতিরোধমূলক একটি টিকা দেবো, যাতে স্যালাইন দেয়া না লাগে। এবার আমার মানসিক প্রস্তুতি হলো, অনিয়ম হলেতো ক্ষমার প্রশ্নই ওঠে না। কঠিন শস্তি দেবো। ইতোমধ্যেই আমরা অনেকগুলো এজেন্সিকে বাদ দিয়ে দিয়েছি। বাদ দিলেই হচ্ছে না। বাদ দিলেই তারা কোর্টে গিয়ে হাজির হয়। হাইকোর্টের সুযোগ নেয়ায় তারা অনেক অন্যায় কাজের শাস্তি দেয়া হয় না। এ বছর ভালো খবর হলো, যারা মামলা করেছে বিজ্ঞ আদালতের তরফ থেকে ভালো অবজারভেশন দিয়েছেন যে, আপনাদের শাস্তির ব্যবস্থা এত কম কেন? আপনারা শাস্তিটা বৃদ্ধি করেন। এ বছর তাদের পক্ষে কোনো রায় হয়নি। আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে যাতে বের হতে না পারে সে জন্য তাতে আমরা আঠা লাগিয়ে দিয়েছি। ইনশাল্লাহ সেটা আর হবে না। 

নয়া দিগন্ত : দালাল ফড়িয়াদের কারণে হজযাত্রীদের ভোগান্তি বেশি হয়। এই দালালদের নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো পরিকল্পনা আছে কি না?
শেখ আব্দুল্লাহ : হজ ব্যবস্থাপনায় দালালদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে না পারলে হজযাত্রীদের ভোগান্তির শেষ হবে না। এটার শৃঙ্খলা অবশ্যই আনতে হবে। এটার শৃঙ্খলা যদি আনতে পারি তাহলে সমস্যার সমাধান হবে। সমাধান চাইলে শৃঙ্খলা আনতে হবে। এ ব্যাপারে আমরা গতকালও বিভিন্ন গোয়েন্দা বাহিনীর সাথে বসে আলাপ করেছি। আমরা এ বছর সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা বাহিনীসহ অন্য সব বাহিনীর সাথে যৌক্তিক পরামর্শ নিয়ে যাচ্ছি। বাস্তব পরিকল্পনা পাচ্ছি। সেগুলো বাস্তবায়ন করব। তাদেরও আলোচনার মধ্যে দালালদের বিষয় আছে। অনেকে বলছেন মধ্যস্বত্বভোগী। উনাদের একজন বলেছেন, মধ্যস্বত্বভোগী কথা বলে তাদের সম্মান দিয়ে দেয়া হয়। বলতে হবে এরা হজ-সংক্রান্ত দালাল। এটা বললে মনে তারা আঘাত পাবে। একজন বলেছেন, গরুর যেমন দালাল থাকে, হজে দালাল ঢুকে গেছে। এই গরুর দালালদের শায়েস্তা করতে হবে। আমরা বলেছি, আমরা আপনার সাথে একমত। এই দালালবিহীন হজ যাতে করা যায় এবার আমরা ব্যবস্থাটা করব। আমি যতবার সরকারি প্রতিনিধি দলের সাথে গিয়েছি আমার অভিজ্ঞতা লব্ধ কথা বলো এই দালাল-সংক্রান্ত বিষয়ে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় দালালদের দেখা যায়। এই দালালরা গ্রামের সহজ সরল লোকদের কম রেটে হজে নেয়ার কথা বলে, প্রতারণা করে। তবে তাদের মধ্যে সবাই খারাপ না। তাদের মধ্যে অনেকে ভালোও করে। কিছু সংখ্যক লোক খারাপ। তাদের কার্যকলাপে যখন লোকজন হজে যেতে চান না, তখন তারা একটা পলিসি গ্রহণ করে। তখন তারা দালাল বানায়। তারা মসজিদ-মক্তবে গিয়ে লম্বা জামা পরিধানকারী কিছু লোককে গিয়ে বলে, যে তুমি ১০ জন লোক দাও, তুমি ফ্রি যেতে পারবে। তোমার কাছ থেকে এত টাকা নেবো। এভাবে তারা গ্রামে গিয়ে হাজী সংগ্রহ করে। গ্রামের মানুষ মনে করে এজেন্সি বেশি টাকা নেয়। এই লোকতো কম টাকা নিচ্ছে। তাই তাকে টাকা দিয়ে দেয়। পরে দেখা যায় ওই লোকটি আর হাজীর চিন্তা করে না। টাকা মেরে দেয়। তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না। অথবা হজে নিলেও নানা ভোগান্তির মধ্যে রাখে। এখন থেকে আমরা কঠিনভাবে দায়িত্ব নিচ্ছি এই দালাল সিস্টেমটাকে যে কোনোভাবে অবসান ঘটাতে হবে। হাবের সাথে আমরা যুদ্ধে না গিয়ে যুক্ত হচ্ছি। এবার আমরা হজ সুন্দর করার জন্য হাবের নেতৃবৃন্দের সাথে সন্ধি করে ফেলেছি। সেটা হলো খারাপ দিকে যাবা না, ভালো দিকে যাবা। পয়সাকড়ি কম নিবে বলে লোক বাগাইয়া আনবা না এবং পরে হজে নিতে পারবে না। পরে কাজটা হবে না। এ ছাড়া আমরা মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছি। আমরা হাজীদের সচেতনতা সৃষ্টির জন্য ২ তারিখ থেকে ট্রেনিং শুরু করেছি। 

নয়া দিগন্ত : হজের প্যাকেজ মূল্য কমাতে ও সৌদি আরবে হাজীদের অবস্থানের সময় কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে হজযাত্রী পরিবহনে থার্ড ক্যারিয়ার চালুর দাবি বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে। এ বিষয়টি নিয়ে আপনি কী ভাবছেন?
শেখ আব্দুল্লাহ : আমি মন্ত্রী হওয়ার আগে এই বিষয়টি নিয়ে অনেক কঠিনভাবে বলেছি। আমি এবার বিমান মন্ত্রণালয়ের মিটিংয়ে বিমান ভাড়া কমানোর ব্যাপারে অনড় ছিলাম। শেষ পর্যন্ত বিমান ভাড়া কমানো হয়। তবে প্যাকেজ মূল্য আসলে বেড়েছে কথাটা ঠিক না। সৌদি আরবে এবার টেক্সসহ অন্যান্য মিলে ২৫ হাজার টাকার মতো বেড়েছে যা সব দেশের জন্য। শুধু আমাদের জন্য না। আর থার্ড ক্যারিয়ারের বিষয়টাও আমি সৌদি আরবে বৈঠকের সময় বলেছি। কিন্তু ওখানে সবকিছুরই কর্তৃত্ব ক্ষমতা তাদের। আমাদের ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করে না। আমি গিয়েও দেখলাম হজের পরিচালানা কঠিনভাবে নিয়ন্ত্রণ করে সৌদি আরব। তাদের নির্ধারিত ব্যবস্থাপনা ছাড়া অন্য কিছু করা কঠিন। আমাদে যে হজচুক্তি হয় সেখানে কথা আছে ৫০ ভাগ হজযাত্রী বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স নেবে, বাকি ৫০ ভাগ নেবে সৌদি এয়ারলাইন্স। এর বাইরে অন্য কিছু করার মতো কিছু এখনও সম্ভব হয়নি। এই পয়েন্টটা আমাদের মাথার মধ্যে আছে। এই বছর আমরা চেষ্টা করতে সৌদি গিয়েছিলাম। এবার আমি সেখানে কতগুলো পয়েন্ট তুলেছিলেন। তার মধ্যে হজযাত্রী পাঠানোর এজেন্সি কোটা ১৫০ জন থেকে ১০০ জনে নামিয়ে আনার ব্যাপারে আমরা তাদের রাজি করাতে সক্ষম হয়েছি। 

নয়া দিগন্ত : সরকারি ব্যবস্থাপনার হজ গাইড হিসেবে অদক্ষ লোকদের পাঠানেরার অভিযোগ ওঠে প্রায় প্রতিবছরই। এটি বন্ধে আপনার কোনো পদক্ষেপ থাকবে কি?
শেখ আব্দুল্লাহ : শাস্তি দেয়ার বিধান আমি রাখতে চাই না। শাস্তিযোগ্য কোনো কাজ যাতে না হয় এ ব্যাপারে আমরা প্রতিজ্ঞা করেছি। আগেই শাস্তি দেবো বলার মানে কি? শাস্তিমূলক কাজ করার সুযোগ দেবো? এর মানে হচ্ছে শাস্তিমূলক কাজকে এলাউ করব। আমাদের কথা হচ্ছে- আমরা কোনো শাস্তিমূলক কাজ করতে দেবো না। হয়ে গেলে কঠিন শাস্তিতো হবেই। আমি বলছি, হজ পালন করে আসার পরে সর্বশেষ ফ্লাইট আসার পরে আমি আপনাদের নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করব। সেখানে বলব এবং শুনব, কতটা সফলতা অর্জনা করতে পেরেছি ; কতটা ফেল করেছি। 

নয়া দিগন্ত : হজ ব্যবস্থাপনার জন্য একটি আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে একটি খসড়া আইনের ওপর মতামত নিচ্ছেন আপনারা। আইনটি কবে নাগাদ হতে পারে ?
শেখ আব্দুল্লাহ : হজ ব্যবস্থাপনা এখন নীতিমালার মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। আইনের যে উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। আইনের প্রক্রিয়া চলছে। আইনের খসড়া হয়েছে। এখন আইন প্রণয়নের নিয়মকানুন আছে প্রতিপালন হলে সেটি পাস হবে। তবে এই হজের আগেতো হচ্ছে না। আগামী হজের আগে দ্রুততম সময়ের মধ্যে যাতে হয় সেই চেষ্টা রয়েছে, যাতে আগামী হজ আমরা আইনের আলোকে করতে পারি। 

নয়া দিগন্ত : আপনারা হজের মতো ওমরাকেও প্রাক নিবন্ধনের আওতায় আনার বিধান নীতিামালায় যুক্ত করেছেন। সেটা কখন থেকে শুরু হতে পারে? 
শেখ আব্দুল্লাহ : ওমরাহতো সুর্নিষ্টভাবে এক দিনে হয় না। যখন যে কেউ ওমরাহ করতে যেতে পারে। সেই হিসাবের মধ্যে যতটুকু প্রচলিত আছে সেটা হচ্ছে। আস্তে আস্তে সেটাকেও নিয়মের মধ্যে আনার চেষ্টা আমাদের রয়েছে। 

নয়া দিগন্ত : ইসলামের নামে জঙ্গিবাদী তৎপরতাকে একটি বড় সমস্যা হিসেবে দেখা হয়। যদিও এখন সেই তৎপরতা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। ধর্মপ্রতিমন্ত্রী হিসেবে বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখেন?
শেখ আব্দুল্লাহ : দেখুন, আমরা কিছুদিন আগে কিন্তু ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী করার জন্য মক্কা ও মদিনার খতিবদের এখানে এনেছিলাম। সেই সময়টায় কিন্তু বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের বিষয়টি মাথাছাড়া দিয়ে উঠছিল। ইসলাম ধর্মে জঙ্গিবাদের কোনো জায়গা নেই। যারা ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ চালাচ্ছিল তাদের বক্তব্য ছিল এসব মানুষ মেরে তারা এক দৌড়ে বেহেশতে চলে যাবে। এটা যে একটি ভুয়া ঘটনা আমরাও কুরআন-হাদিসের দলিল দিয়ে মানুষের কাছে বুঝাতে সক্ষম হয়েছি। বিশেষ করে আমাদের ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ দেই, তখন আমি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্নর ছিলাম। ওই সময় ইসলামিক ফাউন্ডেশন আটটি বিভাগে আটটি দল সৃষ্টি করে। সেখানে বিভিন্ন লোক নিয়ে, সংশ্লিষ্ট জেলার ডিসি এসপি কর্মকর্তাদের নিয়ে, স্কুল কলেজ, মসজিদ মাদরাসা সবাইকে সম্পৃক্ত করে সভা-সমিতির মাধ্যমে সমস্ত জায়গায় সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে এটাকে যাতে সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত করা যায় সে জন্য আমরা কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলাম। এরপর থেকে বর্তমানে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের অবস্থান নেই বললেই চলে। একেবারে নাই করাতো সম্ভব না। এ ব্যাপারে আমরা কঠিনভাবে সচেতন আছি। জঙ্গিবাদ বিরোধী আন্দোলন যাতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে সব সময় চালু থাকে এ ব্যাপারে শক্ত কমিটি এবং কর্মসূচি আছে এবং পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করা আছে যাতে কোনো অবস্থাতেই কোনো সমস্যা দেখা না দেয়। ইনশাল্লাহ শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বে বাংলাদেশ জঙ্গিবাদমুক্ত সন্ত্রাসমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি সুন্দর বাংলাদেশ যাতে গড়ে ওঠে এ ব্যাপারে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে যা যা করার দরকার সব রকমের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। আশা করি আমরা সফলতা অর্জন করতে পারব।


আরো সংবাদ



premium cement