২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

আইসিসি কেন ইসরাইল ও হামাস নেতাদের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির কথা ভাবছে

আইসিসি কেন ইসরাইল ও হামাস নেতাদের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির কথা ভাবছে - সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) শিগগিরই ইসরাইল প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুসহ ইসরাইলি এবং হামাস নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে পারে। দু’পক্ষের মধ্যে যুদ্ধের সাত মাসেরও বেশি সময় পার হবার পর আদালতের প্রধান কৌঁসুলি এই অনুরোধ জানিয়েছেন।

করিম খান জানিয়েছেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে- নেতানিয়াহু ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্ট এবং হামাসের তিন নেতা- ইয়াহিয়া সিনওয়ার, মোহাম্মদ দেইফ ও ইসমাইল হানিয়েহ গাজা উপত্যকা এবং ইসরাইলে যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দায়ী।

আইসিসি ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশ্বের সবচেয়ে জঘন্যতম নৃশংসতা, যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, গণহত্যা এবং আগ্রাসনের অপরাধের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের সর্বশেষ ব্যবস্থা হিসাবে এই আদালতটি প্রতিষ্টিত হয়।

রোম স্টাট্যুটের মাধ্যমে আইসিসি তৈরির পরিকল্পনা ১৯৯৮ সালে গৃহীত হয়েছিল এবং ২০০২ সালের ১ জুলাই ৬০টি দেশ থেকে অনুমোদন লাভ করে একে কার্যকর করা হয়। জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদ আইসিসিকে অনুমোদন দিয়েছে কিন্তু এটা একটি স্বাধীন আদালত।

পুলিশ বাহিনী ছাড়া আইসিসি সন্দেহভাজনদের গ্রেফতারের জন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোর উপর নির্ভর করে যা বিচারের ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে।

নেতানিয়াহু গত মাসে বলেন, ইসরাইল তাদের ‘আত্মরক্ষার মৌলিক অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করার আইসিসির যেকোনো প্রচেষ্টাকে কখনোই মেনে নেবে না।’

তিনি বলেন, আইসিসি ইসরাইলের পদক্ষেপের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে না তবে এটি ‘একটি বিপজ্জনক নজির স্থাপন করবে।’

আইসিসি কী?
আইসিসির ১২৪ সদস্যভুক্ত দেশ রোম স্ট্যাচিউট বা রোম সংবিধিতে স্বাক্ষর করেছে। কয়েক ডজন দেশ যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা এবং অন্যান্য অপরাধের বিষয়ে আদালতের এখতিয়ার স্বীকার করেনি এবং তাতে স্বাক্ষর করেনি। ওই সব দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন।

আন্তর্জাতিক আদালত তখনই জড়িত হয় যখন দেশগুলো তাদের ভূখণ্ডে কোনো অপরাধের বিচার করতে অক্ষম বা অনিচ্ছুক হয়। ইসাইলের যুক্তি যে তাদের একটি কার্যকরী আদালত রয়েছে যা কর্মক্ষম।

অতীতে দেখা গেছে, বিচার করতে কোনো দেশের সক্ষমতা বা সদিচ্ছা নিয়ে যখন মতবিরোধ হয়েছে, তখন সেই দেশের সাথে আইসিসির বিরোধ হয়েছে।

তৎকালীন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২০ সালে আইসিসির প্রসিকিউটর এবং প্রসিকিউশন অফিসের আরেক শীর্ষ কর্মীর ওপর অর্থনৈতিক ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। আইসিসি কর্মীরা আফগানিস্তানে সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র সেনাদের ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের তদন্ত করছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো-বাইডেন, যার প্রশাসন গাজা অভিযানের জন্য ইসরাইলকে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও রাজনৈতিক সমর্থন সরবরাহ করেছে, ২০২১ সালে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে।

আন্তর্জাতিক আদালতে ১৭টি তদন্ত চলছে, মোট ৪২টি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে এবং ২১ জন সন্দেহভাজনকে হেফাজতে নেয়া হয়েছে। আইসিসির বিচারকরা ১০ জন সন্দেহভাজনকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন এবং চারজনকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন।

এই আদালতকে শুরু দিকের বছরগুলোতে আফ্রিকার অপরাধের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করার জন্য সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। তবে বর্তমানে তারা এশিয়া, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও লাতিন আমেরিকায় তদন্ত চালাচ্ছে।

ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের সাথে আইসিসির সম্পর্ক
জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদ ২০১২ সালে ফিলিস্তিনিদের মর্যাদা একটি সাধারণ পর্যবেক্ষক থেকে সদস্য নয়, কিন্তু পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রে উন্নীত করে। এর ফলে আইসিসিসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের যোগদানের দ্বার উন্মুক্ত হয়।

আইসিসি ২০১৫ সালে ‘দ্য স্টেট অব প্যালেস্টাইন’কে সদস্য হিসেবে গ্রহণ করে, যেটা ছিল ফিলিস্তিন আদালতের এখতিয়ার মেনে নেয়ার এক বছর পর।

আদালতের তৎকালীন প্রধান কৌঁসুলি ২০২১ সালে, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে সম্ভাব্য অপরাধের তদন্ত শুরু করছেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। ইসরাইল প্রায়ই জাতিসঙ্ঘ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো পক্ষপাতিত্ব করছে বলে অভিযোগ করে থাকে এবং নেতানিয়াহু ওই সিদ্ধান্তকে ভণ্ডমি এবং ইহুদি বিদ্বেষী বলে নিন্দা জানান।

আইসিসির বর্তমান প্রধান কৌঁসুলি খান ডিসেম্বর মাসে রামাল্লা এবং ইসরাইল সফর করেন। সেখানে তিনি ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা এবং ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় নিহত বা বন্দী হওয়া ইসরাইলি পরিবারগুলোর সাথে সাক্ষাৎ করেন।

খান হামাসের অভিযানকে ‘সবচাইতে গুরুতর আন্তর্জাতিক অপরাধ যা মানুষের মানবিকবোধকে কষাঘাত করে’ বলে অভিহিত করেন এবং সমস্ত বন্দীদের অতিসত্বর এবং নিঃশর্ত মুক্তির আহ্বান জানান।

খান বলেন, ইসরাইল-হামাস যুদ্ধে ‘আন্তর্জাতিক মানবিক আইন প্রয়োগ এখনো বহাল রাখা অপরিহার্য্য’ এবং ‘ইসরাইলি সামরিক বাহিনী জানে যে- আইন অবশ্যই প্রয়োগ করা হবে।’

সফর শেষে খান বলেন, হামাস ও ইসরাইলি বাহিনীর সম্ভাব্য অপরাধের বিষয়ে আইসিসির পক্ষে তদন্ত করা ‘আমার অফিসের জন্য অগ্রাধিকার হবে।’

আইসিসি আর কাকে অভিযুক্ত করেছে?
গত বছর আইসিসি ইউক্রেন থেকে শিশুদের অপহরণের অভিযোগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। রাশিয়া এর প্রতিক্রিয়ায় খান এবং আইসিসির বিচারকদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।

এই আদালত আরো অন্যান্য শীর্ষ নেতাসহ সুদানের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে তার দেশের দারফুর অঞ্চলে গণহত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে।

আইসিসি ২০১১ সালে লিবিয়ার সাবেক নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ নির্মমভাবে দমনের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল এবং এর পরপরই বিদ্রোহীরা তাকে আটক এবং হত্যা করে।
সূত্র : ভয়েস অফ আমেরিকা


আরো সংবাদ



premium cement
ফিটনেসবিহীন যানবাহনের কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ২৪ ঘণ্টায়ও মহাসড়ক ছাড়েনি ডিইপিজেডের লেনী ফ্যাশনের শ্রমিকরা বুধবার সকালে ঢাকার বাতাসের মান ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ চীন সীমান্তের কাছে গুরুত্বপূর্ণ শহরের দখল নিল মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা সুদানে গৃহযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা আগের হিসাবকে বহুগুনে ছাড়িয়ে গেছে, বলছে গবেষণা চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যা : যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটক ২০ শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ‘গণহত্যার’ অভিযোগ নিহত আইনজীবীকে নিয়ে অপপ্রচার করছে ভারতীয় গণমাধ্যম : প্রেস উইং হিজবুল্লাহ-ইসরাইল অস্ত্র-বিরতি চুক্তি জয় দিয়ে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ শুরু করতে চায় টাইগ্রেসরা সহজ জয়ে সিরিজে সমতা পাকিস্তানের

সকল