২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

প্রতিশ্রুত জীব-বৈচিত্র্যের লক্ষ্য অর্জনে চাপ বেড়েছে জাতিসঙ্ঘ সম্মেলনে

জার্মানির ফ্রাংকফুর্টের কাছে একটি হ্রদ - সংগৃহীত

জীব-বৈচিত্র্য বিষয়ে ঐতিহাসিক চুক্তিতে পৌঁছানোর দু’বছর পর আগামী সপ্তাহে দেশগুলো আবার মিলিত হবে। সেখানে তারা পৃথিবীর গাছপালা ও প্রাণী রক্ষা করার প্রচেষ্টায় অগ্রগতি করছে কিনা- প্রতিবেদন উপস্থাপন করবে।

জাতিসঙ্ঘের জীব-বৈচিত্র্যবিষয়ক সম্মেলনে ১৯৬টি দেশ সই করেছিল। তাতে ২০৩০ সাল নাগাদ ৩০ ভাগ ভূমি ও পানি রক্ষা করার আহ্বান জানানো হয়। চুক্তিটিকে ‘৩০ বাই ৩০’ চুক্তিও বলা হয়।

চুক্তিটি স্বাক্ষরের সময় ১৭ ভাগ স্থল এলাকা ও ১০ ভাগ সামুদ্রিক এলাকা সুরক্ষিত ছিল। তবে তাতে কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি।

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিওপি১৬ নামের এই সম্মেলনের আগামী অধিবেশনে দেশগুলো তাদের লক্ষ্য অর্জনের ব্যাপারে প্রতিবেদন উপস্থাপন করবে। আশা করা হচ্ছে, সেগুলোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার উপায় সম্পর্কে সম্মত হবে।

কলোম্বিয়ার ক্যালিতে দু’সপ্তাহব্যাপী এই বৈঠকে ২০৩০ সাল নাগাদ প্রকৃতির সুরক্ষার জন্য কোটি কোটি ডলার সংগ্রহের প্রচেষ্টার ওপরও আলোকপাত করা হবে। আগামী বছর নাগাদ উন্নয়নশীল দেশগুলোকে দু’কোটি ডলার প্রদান করা হবে। খাদ্যের অপচয় কমিয়ে আনা এবং সংক্রমণশীল প্রজাতিগুলোর প্রচলন বন্ধ করা এর লক্ষ্য।

অগ্রগতির লক্ষণ পাওয়া কঠিন
এই সম্মেলনের আগে প্রায় ২০০টি দেশের জাতীয় পরিকল্পনা পেশ করার কথা। তাতে উপস্থান করতে হবে যে ‘৩০ বাই ৩০’-এর লক্ষ্য অর্জনের জন্য তারা কী রকমের ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিন্তু চলতি সপ্তাহে প্রায় ৪৬ ভাগ দেশ তাদের লক্ষ্যের কথা জানিয়েছে। এছাড়া ১৫ ভাগেরও কম দেশ এই লক্ষ্য অর্জনে তাদের পরিকল্পনা জমা দিয়েছে।

অস্ট্রেলিয়া এখনো তাদের লক্ষ্যের কথা জানায়নি। আর ভারত তাদের জাতীয় পরিকল্পনা জমা দেয়নি। ব্রাজিলে অ্যামাজন এলাকার বেশিভাগ রেইনফরেস্ট রয়েছে, তারা তাদের লক্ষ্য কিংবা পরিকল্পনা- কোনোটার কথাই জানায়নি।

যুক্তরাষ্ট্র জীব-বৈচিত্র্য সম্মেলনের অংশীদার নয় এবং তাকে কোনো পরিকল্পনা উপস্থাপন করতে হবে না। তবে বাইডেন প্রশাসন ২০৩০ সাল নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রের ভূমি ও পানির এক-তৃতীয়াংশ রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

আশা করা হচ্ছে, কিছু দেশ এই সম্মেলনে সুরক্ষিত এলাকা সৃষ্টি কিংবা সম্প্রসারিত করার ব্যাপারে এবং কিভাবে তারা জীব-বৈচিত্র্যবিষয়ক অর্থায়নে খরচ করবে সে সম্পর্কে তাদের পরিকল্পনা প্রকাশ করবে। উদাহরণস্বরূপ কানাডা চারটি স্থানীয় প্রকল্পের জন্য ৮০ কোটি ডলার খরচ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

আরো অনেক দেশ তাদের জীব-বৈচিত্র্যের লক্ষ্যার্জন এবং তা কিভাবে হবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানায়নি বলে উদ্বিগ্ন সুরক্ষা গোষ্ঠীগুলো।

ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ড (ডব্লিউডব্লিউএফ) ইন্টারন্যাশনালের আন্তর্জাতিক অ্যাডভোক্যাসির প্রধান বার্নাডেট ফিশলর হুপার এই প্রতিশ্রুতিকে এ নাগাদ ‘হতাশাব্যঞ্জক’ বলে অভিহিত করেছেন।

ডব্লিউডব্লিউএফ এ ব্যাপারে অগ্রগতিকে চিহ্নিত করছে। তারা দেখেছে যে কোন কোন পরিকল্পনায় জীব-বৈচিত্র্য হারানো বন্ধ করতে বাস্তব ব্যবস্থার অভাব রয়েছে এবং সরকারের তরফ থেকে সহযোগিতাপূর্ণ অর্থায়নেরও অভাব রয়েছে।

হুপার বলেন, ‘কোনো কোনো দেশ আছে যারা সহজেই তাদের পরিকল্পনা হালনাগাদ করতে পারে। কেন তারা সেটা করেনি, তার কোনো কারণ দেখি না। আবার এমন কিছু দেশও আছে যারা যে ধরনের সহযোগিতা তাদের প্রয়োজন তা পায়নি।’

এই কনভেনশনের সচিবালয় দেখেছে, ৯১টি দেশ তাদের লক্ষ্য জানিয়েছে। তার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশির লক্ষ্য তাদের নিজেদের স্থল এলাকার অন্তত ৩০ ভাগ সংরক্ষণ ও সুরক্ষিত করার এবং প্রায় এক-চতুর্থাংশের লক্ষ্য ছিল ৫ ভাগ থেকে ৩০ ভাগ সংরক্ষণ ও সুরক্ষিত করার। উপকূলীয় ও সামুদ্রিক অঞ্চলের জন্য এক তৃতীয়াংশেরও বেশির জাতীয় লক্ষ্য ছিল ৩০ ভাগ কিংবা তারও বেশি এবং এক তৃতীয়াংশের লক্ষ্য ছিল ৫ ভাগ থেকে ৩০ ভাগ।

তবে কনভেনশন অন বায়োলজিকাল ডাইভার্সিটির নির্বাহী সম্পাদক অ্যাস্ট্রিড শোমেকার বলেন, স্বল্প সংখ্যক দেশ যে পরিকল্পনা দিয়েছে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ সরকারকে প্রথমে লক্ষ্য স্থির করতে হবে, তারপর প্রয়োগের পরিকল্পনা দিতে হবে।

তিনি বলেন, ‘এগুলো হচ্ছে জটিল প্রক্রিয়া, সেটা রাতারাতি হওয়া সম্ভব নয়।’

এই লক্ষ্য অর্জন বিশেষত পরিযায়ী প্রাণীর ক্ষেত্রে খুব জরুরি। জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এদের ৪০ ভাগই কমে আসছে।

পূর্ব এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে পরিযায়ী পাখি বিষয়ে সিওল-ভিত্তিক একটি অলাভজনক ইস্ট এশিয়ান-অস্ট্রেলেশিয়ান ফ্লাইওয়ে পার্টানারশিপ প্রতিষ্ঠানের প্রধান জেনিফার জর্জ বলেন, ‘পাখিরা সংরক্ষিত এলাকার সীমানা চেনে না এবং তারা তাদের খাদ্য ও বসবাসের সুবিধা মতো উড়ে যায়।’

অর্থায়নের অভাব
জাতিসঙ্ঘর জলবায়ুবিষয়ক আলোচনার মতোই অনেকটা, এই জীব-বৈচিত্র্য সম্মেলনে বিতর্কের একটি বড় বিষয় হচ্ছে এর অর্থায়ন।

নির্দিষ্ট লক্ষ্যের প্রকল্পগুলোর জন্য বিভিন্ন সূত্র থেকে এই জীব-বৈচিত্র্যের জন্য ২০৩০ সাল নাগাদ দরিদ্র দেশগুলোর প্রয়োজন পড়বে ২০ হাজার কোটি ডলার। ধনী দেশগুলো উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোকে আগামী বছর থেকে দু’হাজার কোটি ডলার প্রদান করতে এবং ক্রমশই তা ২০৩০ সাল নাগাদ তিন হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা সেপ্টেম্বর মাসে জানায়, জীব-বৈচিত্র্যের উন্নয়নের জন্য অর্থায়ন ২০১৫ সাল থেকে ২০২২ সালে দ্বিগুণেরও বেশি করা হয়। কিন্তু যখন এই চুক্তির জন্য অর্থায়নের প্রশ্ন ওঠে তখন দেখা যায়, পৃথিবীতে দু’হাজার কোটির লক্ষ্যমাত্রার ২৩ ভাগ ঘাটতি রয়েছে।

এ বিষয়টির পক্ষে যারা তারা বলছে, এখানে অর্থ খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ জীব-বৈচিত্র্য রক্ষা করার জন্য আফ্রিকার মধ্যকার দেশগুলোর মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি।

‘৩০ বাই ৩০’-এর চেয়ে বেশি
জীব-বৈচিত্র্যের ওপরের দিকের লক্ষ্য ছাড়াও এই সম্মেলনে ২০৫০ সাল নাগাদ মানুষের কারণে কিছু প্রাণী নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার হুমকি সম্পর্কে এই চুক্তিতে একটি লক্ষ্য স্থির করার বিষয়েও আলোচনা করা হবে। যেন এই সব প্রাণীর বিলুপ্তি ১০ গুণ কমানো যায়। লক্ষ্য হচ্ছে, ‘স্থানীয় বন্য প্রাণী’ও যথেষ্ট সংখ্যক বৃদ্ধি করা।

তবে সংরক্ষণবাদীরা বলছেন, এই লক্ষ্যগুলো সুনির্দিষ্টভাবে দেয়া নেই এবং আশা করছেন, এই বৈঠকে এর বিস্তারিত বিষয়টি সম্পর্কে সকলেই সম্মত হবেন।

এই বৈঠকে উদ্ভিদ, পশুপাখি, ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস থেকে জেনেটিক বস্তু নিয়ে ডিজিটাল উপাত্ত ভাগ করার সুবিধার বিষয়ে একটি বৈশ্বিক পদ্ধতি নিয়েও বিবেচনা করা হবে। এগুলো প্রায়ই ওষুধের মতো বাণিজ্যিক পণ্য উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা হয়। আশা করা হচ্ছে, এই সমঝোতা এ ব্যাপারে নিশ্চয়তা দেবে যে লাভের অংশ সমানভাবে ভাগ করা হবে।
সূত্র : ভিওএ


আরো সংবাদ



premium cement
বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৭ কর্মকর্তাকে দুদকের তলব খালেদা জিয়াকে পরিকল্পিতভাবে সশস্ত্র বাহিনী থেকে দূরে রাখা হয়েছিল : ফখরুল নোয়াখালীতে ট্রাকচাপায় এক শিশু নিহত ইউক্রেনে প্রথমবারের মতো আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা রাশিয়ার রংপুরে ৩ দশমিক ১ মাত্রার ভূকম্পন অনুভূত প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়ন সকলের সামাজিক দায়িত্ব : উপদেষ্টা ৪টি সংস্কার করলেই অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন দিতে পারবে : মোস্তাফিজার রহমান গৌরনদীর সাবেক মেয়রকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ বাংলাদেশে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করতে চায় পাকিস্তান ডেঙ্গুতে আরো ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ১২১৪ বক্তৃতায় খালেদা জিয়াকে স্বাগত ও ধন্যবাদ জানালেন ড. ইউনূস

সকল