২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

তদন্তে বেরিয়ে এলো মা-মেয়ে হত্যার লোমহর্ষক কাহিনী

তদন্তে বেরিয়ে এলো মা-মেয়ে হত্যার লোমহর্ষক কাহিনী -

রাজধানীর একটি অপমৃত্যু মামলা তদন্ত করে পুলিশ মা-মেয়ে হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে। হত্যায় জড়িত ঘাতককে গ্রেফতার করা হয়েছে।

বুধবার ডিএমপি'র এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ৬ ডিসেম্বর সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ বক্সের ডিউটি অফিসার কোতোয়ালী থানায় ফোন করে জানান রাজধানীর সদরঘাট থেকে সালাউদ্দিন নামে এক ব্যক্তি অচেতন অবস্থায় এক নারী ও তার শিশু সন্তানকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেখে চলে যায়। কর্তব্যরত চিকিৎসক অজ্ঞাত পরিচয় নারীকে মৃত ঘোষণা করে এবং শিশু সন্তানটিকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করে। সংবাদ পেয়ে কোতোয়ালী থানা পুলিশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যায় এবং ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে ওই নারীর পরিচয় শনাক্ত করে। ওই নারীর স্থায়ী ঠিকানা বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাটে যোগাযোগ করা হলে তার ভাই হাসপাতালে এসে লাশ শনাক্ত করেন।

এরপর পুলিশ জানতে পারে, তার নাম মাধুরী বিশ্বাস (৩৬) ও চিকিৎসাধীন তার কন্যা শিশু শ্রেষ্ঠা (৭)। সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত শেষে লাশ ভিকটিমের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয় এবং চিকিৎসাধীন শ্রেষ্ঠাকে নিয়ে তারা হাসপাতাল ত্যাগ করে। ওই ঘটনায় ৬ ডিসেম্বর ভিকটিমের বড় ভাই নারায়ন বিশ্বাসের অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অপমৃত্যু মামলা দায়ের হওয়ার পর থানা পুলিশ ঘটনাটি গুরুত্বের সাথে তদন্ত করে এবং জানতে পারে আট বছর পূর্বে খুলনা জেলার তেরখাদা থানার পিংকু মজুমদারের সাথে মাধুরী বিশ্বাস বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় এবং তাদের সাত বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। মেয়ে শ্রেষ্ঠাসহ মাধুরী বিশ্বাস গত ২৮ নভেম্বর সকালে শশুর বাড়ি থেকে বাবার বাড়ি বাগেরহাট এর উদ্দেশে রওনা হয়। এরপর মাধুরী ও তার শিশু কন্যার আর কোনো খোঁজ মেলেনি।

অপমৃত্যু মামলা রুজু হবার পর তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় কোতোয়ালী থানা পুলিশ বিধান দাস নামক একজন সন্দেহভাজন ব্যক্তির সন্ধান পায়। এরই প্রেক্ষিতে পুলিশ ঘটনার রহস্য উদঘাটনে বিধান দাসকে গত ১৭ ডিসেম্বর রাতে মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়ার থ্রী এ্যাঙ্গেল ডক এলাকা হতে গ্রেফতার করে। এ সময় তার কাছ থেকে দুটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার বিধান দাস পুলিশকে জানায়, তার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার দশমিনা এলাকায়, তিনি একটি বাল্কহেড এর ইঞ্জিন শ্রমিক। ঘটনার ৪ থেকে ৫ মাস আগে তার জাহাজের একজন কর্মচারীর কাছ থেকে তিনি মাধুরীর মোবাইল নম্বর পায় এবং তাকে কল করেন। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে সখ্যতা গড়ে উঠে এবং সম্পর্ক পরকীয়ায় রুপ নেয়। একপর্যায়ে মাধুরী ও তার শিশু কন্যা শ্রেষ্ঠাসহ কালাইয়া লঞ্চঘাটে আসেন এবং বিধান লঞ্চের একটি কেবিন ভাড়া করেন। কেবিনে উঠার কিছু সময় পর মাধুরী শ্রেষ্ঠাকে নিয়ে বাথরুমে গেলে বিধান পূর্ব-পরিকল্পনা মোতাবেক তার পকেটে থাকা বিষ একটি পানির বোতলে ভরে কেবিনের বক্সে রেখে দেয়। লঞ্চ ছাড়ার পর খাওয়া-দাওয়া শেষে শ্রেষ্ঠা ঘুমিয়ে পড়লে বিধান মাধুরীকে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ বলে পূর্ব-পরিকল্পনা মোতাবেক বিষ মেশানো পানি পান করতে দেয়।

এ সময় মাধুরী জানান, শ্রেষ্ঠারও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে তাই ওকেও ঘুম থেকে ডেকে বিষ মেশানো পানি খাওয়ায়। ওষুধ খাওয়ার পর দু’জনই দু’বার বমি করেন। এতে মাধুরী ও শ্রেষ্ঠা কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েন। পরদিন ৫ ডিসেম্বর সকাল অনুমান ৫টায় সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে পৌঁছাতেই বিধান, মাধুরী ও শ্রেষ্ঠাকে নিয়ে টার্মিনালে আসেন। তাদের এক জায়গায় বসিয়ে খাবার আনার কথা বলে বিধান যাত্রবাড়ী তার জাহাজে চলে যান।

পরে এক ব্যক্তি সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের ৪ নম্বর গেইটের সামনে তাদেরকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক মাধুরীকে মৃত ঘোষণা করেন এবং তার শিশু কন্যা শ্রেষ্ঠাকে হাসপাতালে ভর্তি করান। পরে শিশু শ্রেষ্ঠাও চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
সূত্র : বাসস


আরো সংবাদ



premium cement