০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ অগ্রহায়ন ১৪৩১,
`

চোখে আঘাত মানেই ইমার্জেন্সি দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন

-

চোখ খুবই সংবেদনশীল এবং নরম একটি অঙ্গ। দেহে আরও অনেক অঙ্গ আছে নরম তবে সেগুলো দেহাভ্যন্তরে থাকে বিধায় প্রাকৃতিকভাবেই এক ধরনের নিরাপত্তা বলয়ে থাকে। তবে চোখের বেলায় সম্পূর্ণ নিরাপত্তা বলয় সম্ভব নয়। এটি দেখার কাজে নিয়োজিত বলে দেহের বাইরের দিকে আলোর সংস্পর্শে থাকে। বাইরের আঘাত থেকে যেন নিরাপদে থাকে তার জন্য এটি শক্ত হাড় নির্মিত চক্ষুকোঠরে এর অবস্থান। এর চারদিক এবং পিছন দিকে ছোট ছোট হাড় পরিবেষ্টিত হলেও সামনের দিকটা খোলা। আর এটিই চোখকে আঘাতপ্রবণ করে রেখেছে যদিও চোখের পাতা এটিকে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দেয়ারই চেষ্টা করে থাকে।
বিভিন্নভাবে চোখ আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয় খেলাধুলা সামগ্রী যেমন বেডমিন্টন খেলার কর্ক, ওয়েল্ডিং বা গ্রিন্ডিং মেশিনে কাজ করার সময় পাথর বা লোহার কণা ছিটকে এসে আঘাত করা, পড়াশোনার সামগ্রীর মধ্যে পেন্সিল, স্কেল, কম্পাস ইত্যাদির আঘাত, দুর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া ইত্যাদি। এ ছাড়া ছরা গুলিতে চোখ আঘাতপ্রাপ্ত হওয়াটা আমাদের দেশে প্রায়ই দেখা যায়। আগে এটি পাখি শিকারের সময় দেখা যেত। স্ট্রিট এজিটেশন নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত ছরা গুলিতে প্রায়ই চোখ আঘাতপ্রাপ্ত হতে দেখা যায়। স্প্রিন্টারজনিত চোখের আঘাতও নেহায়েত কম নয়।
ধরন বিবেচনায় চোখের আঘাতকে দুইভাবে ভাগ করা যেতে পারে। ব্লান্ট ট্রমা বা ভোঁতা কোনো বস্তুর আঘাত এবং পেনিট্রেটিং বা ধারালো বস্তুর আঘাত। অন্যভাবেও চোখের আঘাতকে বর্ণনা করা যায়। যেমন চোখের আবরণ ভেদ করা আঘাত বা পেনিট্রেটিং ইনজুরি এবং চোখের আবরণ অক্ষত বা ব্লান্ট ইনজুরি। পেনিট্রেটিং ইনজুরি অধিকতর ক্ষতিকর।
পেনিট্রেটিং ইনজুরি বা আবরণ ভেদ করা আঘাতে চোখের ভিতরের বস্তু যেমন খুব সহজেই বাইরে চলে আসতে পারে তেমনি চোখের বাহির থেকেও বস্তু বা ইনফেকশন চোখের ভিতরে ঢোকে যেতে পারে। সাথে চোখের ভিতরে রক্তক্ষরণ ঘটতে পারে। চোখের ভিতর কোনো বস্তু ঢোকে গেলে অর্থাৎ ইন্ট্রা অকুলার ফরেন বডি থাকলে, এটি চোখের ভিতর রক্তক্ষরণ সাথে ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। রক্তক্ষরণ এবং ইনফেকশন দুটিই অন্ধত্বের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। আবার আঘাতজনিত কারণে চোখের অভ্যন্তরের বস্তুগুলো বাইরে চলে আসলেও অন্ধত্ব দেখা দিতে পারে।
চোখ আঘাতপ্রাপ্ত হলে যে বিষয়গুলো তাৎক্ষণিক বিবেচনায় আনতে হয় সেগুলো হলো আঘাতটি পেনিট্রেটিং ইনজুরি কি না, ভিতরে রক্তক্ষরণের মতো কিছু ঘটেছে কি না, চোখের ভিতরে কোনো বস্তু ঢোকে আছে কি না, চোখের কনটেন্ট বের হয়ে এসেছে কি না, সর্বোপরি আঘাতটি ইনফেকশনের জন্য ঝুঁকিপ্রবণ কি না ইত্যাদি। এটি নির্ণয় করার জন্য আল্ট্রাসনোগ্রাম, সিটি স্ক্যান, এক্স-রে ইত্যাদির সাহায্য নিতে হয়। যেমন ইট পাথরের কণার আঘাত, শস্যকণা বা কাঠের টুকরা ইত্যাদির আঘাত, গ্রিন্ডিং মেশিনের লোহা বা পাথরের কণার আঘাত, দুর্ঘটনাজনিত আঘাত ইত্যাদি খুবই ইনফেকশন প্রবণ। বিপরীতে ছরা গুলিতে তাৎক্ষণিক ইনফেকশন প্রবণতা খুবই কম। এ জন্য যে কোনো আঘাতজনিত ইনজুরিতে প্রথম কাজ হলো দ্রুত সময়ে ইনজুরি রিপেয়ার করা এবং ইনফেকশন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া। আর যদি চোখের ভিতরে কোনো বস্তু থেকে যায় তবে সেটি বের করে নিয়ে আসা। কারণ চোখের ভিতরে কোনো বস্তু রেখে দিলে এটি ইনফেকশনকে ত্বরান্বিত করবে। তবে ছরা গুলি অনেক সময় দীর্ঘদিন চোখে থাকলেও ইনফেকশনের মতো জটিলতা সৃষ্টি করে না বিধায় অন্ধত্বের ঝুঁকি অনেক সময় কম থাকে।
চোখে আঘাতপ্রাপ্ত হলে চোখে কোনো কিছু দিয়ে ধুয়া বা পরিষ্কার করার চেষ্টা না করাই ভালো। নিকটস্থ কোনো ফার্মেসি থেকে একটা স্টেরাইল কোনো গজ দিয়ে চোখ ঢাকা যেতে পারে। দ্রুত কোনো চক্ষু হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হবে। ইনফেকশন প্রতিরোধে মুখে বা ইনজেকশন ফর্মে তাৎক্ষণিক এন্টিবায়োটিক দেয়া যেতে পারে। তবে চোখে কোনো এন্টিবায়োটিক ড্রপ দেয়া যাবে না, বিশেষ করে যদি আবরণ ভেদ করা আঘাত মনে হয় এবং সেটি কোনো চিকিৎসকের পরামর্শে হতে হবে অবশ্যই।
চিকিৎসা চলাকালীন অবশ্যই মনে রাখতে হবে চোখের আঘাতজনিত সমস্যাটি একটি জটিল এবং অনিশ্চিত একটি অবস্থা। কয়েক ধাপে এর চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। চোখের আঘাতের চিকিৎসা যেমন একাধিক ধাপে সম্পন্ন হয়ে থাকে তেমনি একাধিক সার্জন বা সেন্টারে এর চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।
অভিজ্ঞতা বলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্বাভাবিক দৃষ্টি ধরে রাখা প্রায় অসম্ভব। ইনফেকশন প্রতিরোধ করতে না পারলে চোখ উঠিয়ে ফেলার মতো সিদ্বান্তও নিতে হতে পারে। ফলে অন্ধত্ব প্রতিরোধে আঘাত পরিহার করার বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।
লেখক : এমবিবিএস, এফসিপিএস (চক্ষু) এমএস (চক্ষু), চক্ষুবিশেষজ্ঞ ও সার্জন, সহযোগী অধ্যাপক (চক্ষু) এবং কনসাল্টেন্ট, আইডিয়াল আই কেয়ার সেন্টার, আদাবর, ঢাকা


আরো সংবাদ



premium cement
ভারতীয় আগ্রাসনের প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ উপদেষ্টা ফারুক ই আজমের সাথে জাতিসঙ্ঘের গোয়েন লুইসের সাক্ষাৎ বিপিএল থিম গ্রাফিতি ও থিম সং প্রকাশ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশের সিদ্ধান্ত সেনাসদস্যদের দেশপ্রেমকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে : সেনাপ্রধান এক বিজয় অর্জন করেছো, আরেক বিজয় আসবে : শিক্ষার্থীদের প্রধান উপদেষ্টা জবির ঐক্যের মঞ্চে থাকবেন হাসনাত-রাকিব-মঞ্জুরসহ ১২ সংগঠনের নেতা প্রধান উপদেষ্টার সংলাপে যাবেন বিএনপির পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল লেবাননে যুদ্ধ শেষ হয়নি : নেতানিয়াহু বরিশালে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্রিকেটার নিহত ঢাকায় তিন দিনব্যাপী ইরানি চলচ্চিত্র উৎসব শুরু

সকল