০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

ভেনাস সাইনাস থ্রোম্বোসিস

-

মস্তিষ্কের আর্টারিতে রক্ত চলাচল ব্যাহত হলে স্ট্রোক হয়ে থাকে, যাকে বলে ইস্কেমিক স্ট্রোক। আর ভেইন বা ভেনাস সাইনাসে রক্ত চলাচল ব্যাহত হলেও স্ট্রোক হতে পারে। একে বলে ভেনাস স্ট্রোক

কিছু দিন আগে নাফিস ইকবালের স্ট্রোকের খবরে ক্রীড়াঙ্গন স্তম্ভিত হয়ে যায়। সাবেক এ ক্রিকেটার এখন জাতীয় দলের লজিস্টিক ম্যানেজার। মাত্র ৩৯ বছর বয়সে স্ট্রোকে আক্রান্ত হন তিনি। তিনি যে স্ট্রোকের আক্রান্ত হয়েছেন তার নাম ভেনাস সাইনাস থ্রোম্বোসিস। যাকে বলা হয় ভেনাস স্ট্রোক। আমরা সচরাচার যে স্ট্রোক সম্বন্ধে শুনি তা থেকে এটি আলাদা। আজকে আলোচনা করব বিরল এ স্ট্রোক নিয়ে।
মস্তিষ্কের সুস্থতার জন্য রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকা জরুরি। রক্তনালীর তিনটি অংশ থাকে। আর্টারি বা ধমনী, ক্যাপিলারি ও ভেইন বা শিরা। মানে অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত হৃদপিণ্ড থেকে আর্টারি দিয়ে আসে তারপর ক্যাপিলারি হয়ে কার্বন-ডাই অক্সাইডযুক্ত ভেইনে যায়।
মস্তিষ্কের রক্তনালীর প্যাটার্ন একটু ভিন্ন। মস্তিষ্কের আবরণী ডুরা ম্যাটারের এন্ডোস্টিয়াল ও ম্যানিনজিয়াল দিয়ে রক্ত জমা থাকার মতো স্থান তৈরি হয়। একে বলে ভেনাস সাইনাস। এগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। এদের সাথে মস্তিষ্কের ভেনাস চ্যানেল যুক্ত থাকে। রক্ত এ সাইনাসগুলো থেকে পরে জুগুলার ভেইন হয়ে হার্টে চলে যায়।
মস্তিষ্কের আর্টারিতে রক্ত চলাচল ব্যাহত হলে স্ট্রোক হয়ে থাকে, যাকে বলে ইস্কেমিক স্ট্রোক। আর ভেইন বা ভেনাস সাইনাসে রক্ত চলাচল ব্যাহত হলেও স্ট্রোক হতে পারে। একে বলে ভেনাস স্ট্রোক।
ভেনাস সাইনাস থ্রোম্বোসিস এক ধরনের স্ট্রোক। স্ট্রোকের মাত্র ১ শতাংশ জায়গা জুড়ে আছে এটি। সাধারণত খুব কম মানুষের হয়। ১ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে চার-পাঁচজনের।

কাদের হয়?
ভেনাস সাইনাস থ্রোম্বোসিস কিন্তু বেশ কম দেখা যায়। যেকোনো বয়সে হতে পারে। শিশুদেরও হতে পারে। তবে তা খুবই কম। সাধারণত নারীরা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। যেসব নারী জন্মনিরোধক পিল খান তাদের ঝুঁকি বেশি থাকে। গর্ভাবস্থায় ও সন্তান প্রসবের পর ঝুঁকি বাড়ে।

কেন হয়?
ঠিক কী কারণে ভেনাস স্ট্রোক হয় তা জানা যায় না। তবে বেশ কিছু ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা আছে যাতে এ স্ট্রোক হতে পারে।
১. গর্ভাবস্থায় ও সন্তান প্রসবের প্রথম কয়েক সপ্তাহে রক্ত জমাট বাধার প্রবণতা বেশি থাকে। এ রক্ত জমাট বাধার প্রবণতা থেকে হতে পারে ভেনাস স্ট্রোক।
২. কিছু কিছু রক্তের উপাদানের ঘাটতির জন্য ভেনাস সাইনাস থ্রোম্বোসিস হতে পারে। যেমন প্রোটিন সি, প্রোটিন এস, ফ্যাক্টর ফাইভ ল্যাইডেন, এন্টিথ্রোম্বিন থ্রি, হোমোসিস্টিন লেভেল আধিক্য ইত্যাদি।
৩. ক্যান্সার থাকলে রক্ত জমাট বাধার প্রবণতা বাড়ে। ফলে হতে পারে ভেনাস স্ট্রোক। ক্যান্সারের চিকিৎসা কেমোথেরাপি দিলেও বাড়তে পারে ঝুঁকি।
৪. রক্তের রোগ-সিকেল সেল এনিমিয়া, লিউকেমিয়া, থ্যালাসেমিয়াতে ঝুঁকি বাড়ে।
৫. কিডনির রোগ নেফ্রোটিক সিন্ড্রোমে বাড়ে ঝুঁকি।
৬. কোলাজেন ভাস্কুলার ডিজিজ যেমন লুপাস, বেচেটস ডিজিজ ইত্যাদি থাকলে ঝুঁকি বাড়ে।
৭. অন্ত্রের রোগ ক্রোন্স ডিজিজ ও আলসারেটিভ কোলাইটিসে দেখা দিতে পারে ভেনাস সাইনাস থ্রোম্বোসিস।
৮. মারাত্মক পানিস্বল্পতা
৯. ইনকেকশন বিশেষ করে মস্তিষ্কের ইনফেকশন ও নাক এবং উপরের ঠোঁটের ইনফেকশন থেকে ভেনাস স্ট্রোক হতে পারে।

উপসর্গ
উপসর্গ নির্ভর করে দুটো বিষয়ের ওপর। শুধু যদি ভেনাস সাইনাস থ্রোম্বোসিস হয় তাহলে মাথাব্যথা, বমি, চোখে দেখার সমস্যা বিশেষ করে একটি জিনিস দুটো দেখা বা ঝাপসা দেখার সমস্যা হতে পারে। এক্ষেত্রে মাথাব্যথা প্রচুর হয়। মাথাব্যথা হাঁচি-কাশি দিলে বা মলত্যাগে বেশি হয়। সকালে ঘুম থেকে উঠলে বাড়ে।
ভেনাস সাইনাসের সাথে যদি মস্তিষ্কের কর্টিকেল ভেইন ইনভলভ হয় তাহলে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হতে পারে। সেই সাথে একপাশ অবশ হতে পারে। খিঁচুনি খুব কমন একটি লক্ষণ।
রোগ নির্ণয় কিভাবে?
নিউরোলজিস্টরা এমন রোগী আসলে প্রথমে রোগের হিস্ট্রি ভালোভাবে নিয়ে থাকেন। ভেনাস স্ট্রোকের কোনো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা আছে কিনা তা বের করেন। শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। ভেনাস স্ট্রোকে মস্তিষ্কের প্রেসার বাড়ে। এটি বোঝা যায় অপথ্যালমোস্কোপ নামক একটি যন্ত্র দিয়ে চোখের নার্ভের ডিক্স ফোলা কিনা দেখার মাধ্যমে।
চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হন। এ রোগ নির্ণয় করতে এমআরআই অব ব্রেন এবং এমআর ভেনোগ্রাম খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে এমআরআই হয় না সেখানে সিটিস্ক্যান করে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে কিনা তা বুঝা যায়। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের প্যাটার্ন দেখেও অনুমান করা যায় ভেনাস স্ট্রোক।
রক্তের ডি-ডাইমার পরীক্ষাও বেশ জরুরি। ভেনাস স্ট্রোক নিশ্চিত হলে কেন স্ট্রোক হলো তা খুঁজে বের করার জন্য বেশ পরীক্ষা নিরীক্ষার দরকার পড়ে।

চিকিৎসা কী?
ভেনাস স্ট্রোক ধরা পড়লে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। স্যালাইন, এন্টিবায়োটিক ইনজেকশন দেয়ার পাশাপাশি ভেনাস সাইনাসে জমাট বাঁধা রক্ত গলিয়ে দেয়ার জন্য এন্টিকোয়াগুলেন্ট ব্যবহার করা হয়। সাধারণত লো মলিকুলার ওয়েট হেপেরিন যেটি এনোক্সাপেরিন ইঞ্জেকশন নামে পাওয়া যায় তা দেয়া হয়। পরে মুখে খাওয়ার ওষুধ যেমন রিভারক্স দেয়া হয়। কতদিন চিকিৎসা নিতে হবে তা চিকিৎসক ঠিক করবেন। এছাড়া কোনো জটিলতা দেখা দিলে তার চিকিৎসা করতে হয়।

জটিলতা কী?
ভেনাস স্ট্রোকে বেশির ভাগ রোগী সুস্থ হয়ে যান। তবে কিছু রোগীর মৃত্যু হতে পারে। এছাড়া শরীরের কোনো পাশ অবশ, চোখে দেখার সমস্যা, কথায় জড়তা, মাথাব্যথা থাকতে পারে।

আধুনিক চিকিৎসা কী?
বিশ্বব্যাপী ভেনাস স্ট্রোকের আধুনিক চিকিৎসা শুরু হয়েছে। ইস্কেমিক স্ট্রোকের আক্রান্ত রোগী ৬ ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে এলে ক্যাথল্যাবে নিয়ে গিয়ে ক্যাথেটার ও স্ট্যান্টের মাধ্যমে জমাট বাঁধা রক্তনালী বের করে আনা হয়। একে বলে মেকানিক্যাল থ্রোম্বেক্টমি। ভেনাস স্ট্রোকেও জমাট বাঁধা রক্ত বের করে আনা যায়। দেশে এখনো এটি সহজলভ্য হয়নি। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালের ইন্টারভেনশনাল নিউরোলজি বিভাগে দু’জন রোগীর এটি করা হয়েছে। আশা করা যায় দেশেও একসময় আধুনিক চিকিৎসা হবে।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ডিপার্টমেন্ট অব ইন্টারভেনশনাল নিউরোলজি, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস

 

 


আরো সংবাদ



premium cement
এ সরকার জনপ্রত্যাশার কী করবে? আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন : তাজুল ইসলাম চিফ প্রসিকিউটর আবুধাবির কারাগার থেকে দেশে ফিরেছেন ১৪ বীর কোনাবাড়ীতে কলেজছাত্রকে গুলি করে হত্যা : কনস্টেবল গ্রেফতার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সিদ্ধান্তগুলো যৌক্তিক : ফখরুল ‘একটি চক্র জামায়াত আমিরের বক্তব্য নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে’ অস্ত্র জমা দেয়নি শামীম ওসমান ও গাজী পরিবার এবি পার্টির উপদেষ্টার পদ ছাড়লেন ব্যারিস্টার রাজ্জাক কর্মকর্তাদের তালিকা চাওয়া নিয়ে বিতর্কে মন্ত্রণালয়ের দুঃখ প্রকাশ আশুলিয়ায় শ্রমিক দলের সমাবেশে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ৫ রূপগঞ্জে পরকীয়া সন্দেহে স্ত্রীকে হত্যা

সকল