০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

গরুর নেহারি খেলে কি শরীরের ক্যালসিয়াম বৃদ্ধি পায়?

-

গরুর নেহারি বাংলাদেশের খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার। দেশের আনাচে-কানাচে ফুটপাথে কিংবা নামীদামি রেস্তোরাঁয় এটি বিক্রি হয় প্রচুর পরিমাণে। এই খাবারটি অষ্টাদশ শতাব্দীতে ভারতীয় উপমহাদেশে মুঘল সাম্রাজ্যের মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে। এই খবরটি মূলত গরু, ভেড়া কিংবা ছাগলের পা প্রক্রিয়াজাত করে বিভিন্ন ধরনের মসলার সমন্বয়ে রান্না করে তৈরি করা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে নেহারি খুবই উচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে ফুটপাথের দোকানগুলোতে। কারণ বহু আগে থেকে আমাদের দেশের মানুষ বিশ্বাস করে যে নেহারি খেলে দেহে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। বস্তুত এ ধরনের বিশ্বাসের জন্যই নেহারি এত বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
তাই আজ এই লেখায় পূর্ণাঙ্গরূপে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করব নেহারি কি আসলেই ক্যালসিয়ামের উৎস কিনা। আমাদের দেশে নেহারি তৈরি করা হয় গরুর পা প্রক্রিয়াজাতকরণ করে। গরুর পায়ের যে হাড় সেটির মাঝখানে নরম তুলতুলে স্পঞ্জের মতো যে অংশ বিদ্যমান সেটিকে বোন ম্যারো বা অস্থিমজ্জা বলা হয়। মূলত গরুর অস্থিমজ্জা খাওয়ার জন্য এভাবে নেহারি রান্না করা হয়। গরুর অস্থিমজ্জা সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে একটি হলো লাল অস্থিমজ্জা (রেড বোন ম্যারো) আরেকটি হলো হলুদ অস্থিমজ্জা (ইয়োলো বোন ম্যারো)। আমাদের দেশে যেসব গরুর পায়ের হাড় সংগ্রহ করে নেহারি তৈরি করা হয় সেগুলো সাধারণত পূর্ণবয়স্ক হয়ে থাকে। আর পূর্ণবয়স্ক গরুর পায়ের হাড়ে সাধারণত হলুদ অস্থিমজ্জা থাকে এবং লাল অস্থিমজ্জার পরিমাণ খুবই কম থাকে।

হলুদ অস্থিমজ্জার মোট ওজনের অন্তত ৮০ শতাংশ অ্যাডিপোজ টিস্যু দিয়ে পরিপূর্ণ থাকে। এই টিস্যুতে রয়েছে ফ্যাট সেল বা অ্যাডিপোসাইটস যা সাধারণত ট্রাইগ্লিসারাইড হিসেবে শক্তি সঞ্চয় করে। মূলত এই কোষগুলোই অস্থিমজ্জাকে হলুদ রঙে রঞ্জিত করে। এছাড়া এই টিস্যুতে রয়েছে ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড (যেমন কনজুগেটেড লিনোলেয়িক অ্যাসিড) ও মনোআনসেচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড (যেমন অলেয়িক অ্যাসিড)। স্নেহে দ্রবণীয় ভিটামিন যেমন এ, ডি, ই, কে ইত্যাদি সঞ্চিত থাকে ও শোষিত হয় এই কোষের মাধ্যমে।
গরুর অস্থিমজ্জার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো কোলাজেন। কোলাজেন হলো এক ধরনের প্রোটিন বা আমিষ। গরুর অস্থিমজ্জায় সাধারণত টাইপ-১ এবং টাইপ-২ কোলাজেন পাওয়া যায়। রান্না করার পর সাধারণত কোলাজেন জিলাটিনে রূপান্তরিত হয়। জিলাটিনের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে যেমন গ্লাইসিন, প্রোলিন, হাইড্রোক্সিপ্রোলিন ও গ্লুটামিক এসিড ইত্যাদি।
গরুর অস্থিমজ্জার মধ্যে আরো রয়েছে আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, জিংক, গ্লুকোসামিন ও কনড্রয়টিন সালফেট। মজার ব্যাপার হলো গরুর অস্থিমজ্জায় ক্যালসিয়ামের মাত্রা খুবই কম। প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর অস্থিমজ্জায় মাত্র ১৭ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায় যা অন্যান্য ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারের তুলনায় খুবই কম। সুতরাং এটি থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে নেহারি খেলে দেহে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বৃদ্ধি পায় না বরং কিছু উপকারী স্নেহ (লিপিড) ও কোলাজেন এর মাত্রা বৃদ্ধি পায় যা আমাদের সুস্থ থাকতে সহায়তা করে।
তাই আমাদের দেশে প্রচলিত যে কুসংস্কারটি রয়েছে তা ভুল। সুতরাং নেহারি খাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের উচিত প্রয়োজনীয় পরিমাণ পরিমাণে গ্রহণ করা।
লেখক : প্রভাষক, খাদ্য প্রকৌশল ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগ, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ
ইমেইল : billalanftiu@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
এ সরকার জনপ্রত্যাশার কী করবে? আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন : তাজুল ইসলাম চিফ প্রসিকিউটর আবুধাবির কারাগার থেকে দেশে ফিরেছেন ১৪ বীর কোনাবাড়ীতে কলেজছাত্রকে গুলি করে হত্যা : কনস্টেবল গ্রেফতার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সিদ্ধান্তগুলো যৌক্তিক : ফখরুল ‘একটি চক্র জামায়াত আমিরের বক্তব্য নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে’ অস্ত্র জমা দেয়নি শামীম ওসমান ও গাজী পরিবার এবি পার্টির উপদেষ্টার পদ ছাড়লেন ব্যারিস্টার রাজ্জাক কর্মকর্তাদের তালিকা চাওয়া নিয়ে বিতর্কে মন্ত্রণালয়ের দুঃখ প্রকাশ আশুলিয়ায় শ্রমিক দলের সমাবেশে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ৫ রূপগঞ্জে পরকীয়া সন্দেহে স্ত্রীকে হত্যা

সকল