০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ন ১৪৩১,
`

শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে

-

বিগত কয়েক মাস ধরে সারা দেশেই শিশু ও বয়স্কদেরও ডায়রিয়া প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। যদিও আমাদের দেশে শিশুদের পায়খানার সমস্যা কম বেশি বছরজুড়েই দেখা দেয়। দূষিত পানি, অপ্রতুল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আর খাওয়া-দাওয়ায় ভুল অভ্যাস শিশুদের ডায়রিয়া বাড়িয়ে তুলে। উদ্বিগ্ন অভিভাবকের মনে প্রশ্ন দেখা দেয় এই অসুখের সময় বাবুকে কী খাওয়াতে হবে। এই লেখাতে তাদের প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করছি।

১। যেসব খাবার বেশি করে দেবেন
বুকের দুধ
জন্মের প্রথম ছয় মাস শুধু বুকের দুধ এবং দুই বছর পর্যন্ত পারিবারিক খাবারের সাথে বুকের দুধ নিশ্চিত করুন। ডায়রিয়া চলাকালে বুকের দুধ পানিশূন্যতা পূরণ, পুষ্টি সরবরাহ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
পারিবারিক খাবার
ছয় মাস পরবর্তী শিশুদের ভাত, ভাতের মাড়, চিঁড়ার পানি, ঘরে তৈরি বিশুদ্ধ পানি দিয়ে বানানো ফলের রস দিতে পারেন। কলা (কাঁচা ও পাকা) দিবেন। এটি ডায়রিয়া সারানোর পাশাপাশি পটাসিয়াম লবণের জোগান দেয়। এই পটাসিয়ামের অভাবে ঘাড় ফেলে দেয়া, পেট ফেঁপে যাওয়া থেকে শুরু করে হৃৎপিণ্ডের সমস্যা পর্যন্ত হতে পারে। ডাবের পানিতেও প্রচুর পটাসিয়াম থাকে।
- বারবার ঘরে তৈরি টক দই দিন। এটি অন্ত্রের ক্ষতিকর জীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।

২। যেসব খাবার দিবেন না : যেকোনো বাইরের দুধ (গরু, ছাগল, কৌটা), সুজি, সেরেলাক, দোকানের খাবার/জুস দেবেন না।
৩। খাওয়ার স্যালাইন/রাইস স্যালাইন : স্যালাইনও একপ্রকার ওষুধ। এর কাজ পায়খানা কমানো নয়, পানি ও লবণশূন্যতা পূরণ করা। এর পরিমাণ চিকিৎসক ঠিক করে দিবেন। অতিরিক্ত কিংবা ভুল নিয়মে (মগে বা গ্লাসে আন্দাজমতো পানি নিলে যা হয়) বানানো স্যালাইন শিশুর মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
৪। অ্যান্টিবায়োটিক : বেশির ভাগ পানির মতো পাতলা পায়খানার অ্যান্টিবায়োটিকের ভূমিকা নেই। অধৈর্য হয়ে একটার পর একটা অ্যান্টিবায়েটিক দিবেন না।
৫। হাসপাতালে ভর্তি : শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা লাগতে পারে যদি, নিস্তেজ/ঘাড় ফেলে দিলে, পানিশূন্যতার লক্ষণ দেখা দিলে (চোখ বসে যাওয়া, অশ্রু শুকিয়ে যাওয়া, জিহ্বা শুষ্ক হওয়া, পেটের চামড়া ঢিলা হওয়া), প্রস্রাব কমে কিংবা বন্ধ হলে (৬-৮ ঘণ্টা করেনি, কিংবা ১২ ঘণ্টায় মাত্র ১-২ বার), একটানা বমি করলে (ঘণ্টায় তিনবারের বেশি), রক্ত পায়খানা কিংবা খিঁচুনি হলে।
ডায়রিয়া প্রতিরোধে হাত ধোয়ার অভ্যাস, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, বিশুদ্ধ পানি পান, রাস্তার খোলা খাবার পরিহার করার অভ্যাস করুন। এসব নিয়ম পরিচিত লোকদেরও জানান। ডায়রিয়া প্রতিরোধে সচেতন হোন।
লেখক : শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ, আইসিএমএইচ, মাতুয়াইল, ঢাকা


আরো সংবাদ



premium cement