কণ্ঠস্বর সুস্থ রাখতে...
- ডা: মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
- ০৮ মে ২০২৪, ০০:০৫
কণ্ঠের ব্যবহার, যতœ, রোগের চিকিৎসা ইত্যাদি বিষয়ে মানুষের সচেতনতা বাড়ানোই দিবস পালনের উদ্দেশ্য।
কণ্ঠকে শুধু যোগাযোগের প্রধান উপায় ভাবলে ভুল হবে। বাক্যের ভাব প্রকাশের ক্ষেত্রে কণ্ঠের ওঠানামা আমাদের ব্যবহার করা শব্দের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আপনার কথা কী প্রভাব সৃষ্টি করবে তার ৩৮ শতাংশ নির্ভর করে কণ্ঠের ওঠানামার অপর। আর তাই দৈনন্দিন সাংসারিক বা কর্মক্ষেত্রে কথাবার্তার জন্য ভালো কণ্ঠের গুরুত্ব অনেক বেশি। পেশাগত কণ্ঠ ব্যবহারকারী মানুষের জন্য কণ্ঠই সব কিছু। পেশাগত কণ্ঠ ব্যবহারকারী বলতে আমরা বুঝি যাদের পেশার জন্য কণ্ঠ প্রধান বা গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। যেমন- গায়ক, অভিনেতা, শিক্ষক, উকিল, ধারাভাষ্যকার, সেলসম্যান, কলসেন্টারের কর্মী ইত্যাদি।
আমেরিকাতে ২৯% মানুষ জীবনে কোনো না কোনো সময় কণ্ঠের সমস্যায় ভুগে থাকেন এবং এতে যে কর্মক্ষমতা নষ্ট হয় তার অর্থ মূল্য প্রায় দুই বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশী ২০০ কোটি টাকা,বছরে প্রতি ১৩ জনে একজন এই সমস্যায় পড়েন। বয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে মহিলা এবং শিশুদের ক্ষেত্রে ছেলেরা এই সমস্যায় বেশি আক্রান্ত হয়। আমেরিকাতে পেশাগত কণ্ঠ ব্যবহারকারীদের মাঝে এই বিষয়ে চালানো জরিপ অনুযায়ী শিক্ষকদের ১১% কণ্ঠের সমস্যায় ভুগছেন। শিক্ষক ছাড়া অন্য পেশার জন্য এই হার ৬.২%। কণ্ঠের সমস্যায় চাকরি হারিয়েছেন এমন সংখ্যা শিক্ষক ২০% এবং অন্য পেশাজীবী ৪%। অন্যান্য জরিপে দেখা যায় যে ৪৬.০৯% কণ্ঠশিল্পী, ৪৫% কলসেন্টারের কর্মী কণ্ঠের সমস্যার কারণে কর্মক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হন।
সমস্যার কারণ কী
কণ্ঠনালীর প্রদাহ : এ প্রদাহ দুই ধরনের। যেমন- তীব্র ও দীর্ঘমেয়াদি ল্যারিনজাইটিস। কণ্ঠনালীর ভাইরাসজনিত, আবহাওয়া পরিবর্তন, পরিবেশ দূষণেও কণ্ঠনালীর প্রদাহ হতে পারে। যদি ব্যাকটেরিয়ার কারণে কণ্ঠনালীতে ইনফেকশন ও শ্বাসকষ্ট হয়, তখন চিকিৎসা দরকার। পাকস্থলীর অ্যাসিড রিফলাক্সের জন্য দীর্ঘমেয়াদি কণ্ঠনালীর প্রদাহ হতে পারে। ধূমপান, অতিরিক্ত চা বা পানীয় পান করলে, হাঁপানির জন্য ইনহেলার ব্যবহার বা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের দীর্ঘমেয়াদি ল্যারিনজাইটিস হতে পারে।
কণ্ঠস্বরের অতিব্যবহার : অতিরিক্ত চিৎকারের কারণে যেমন স্বর ভেঙে যায়, তেমনি আবার মৌসুম বদলের সময়ও অনেককে এমন সমস্যায় ভুগতে দেখা যায়। তাপমাত্রার তারতম্যের সময় কণ্ঠনালী কিংবা টনসিলের প্রদাহের উপসর্গ হিসেবে স্বর ভেঙে যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন।
তবে কিছু ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে রোগী স্বর ভেঙে যাওয়ার সমস্যায় ভোগেন
কণ্ঠস্বরের ওপর যাদের খুব বেশি চাপ পড়ে, (যেমন গায়ক, আবৃত্তিকার, শিশুদের শিক্ষক) তাদের স্বরতন্ত্রীতে (ভোকাল কর্ড) ছোট ছোট গোটা হতে পারে (নডিউল)। এ রকম হলে স্বর অস্বাভাবিক রয়ে যায় দীর্ঘদিন।
ষ থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি।
ষ ফুসফুস বা শ্বাসতন্ত্রের ক্যান্সার।
ষ স্টেরয়েড ইনহেলার ব্যবহারে স্বর ভেঙে যেতে পারে।
আনুষঙ্গিক উপসর্গ
মৌসুমজনিত কারণ হলে গলাব্যথা, জ্বর, কাশি ও সর্দির মতো উপসর্গ থাকে।
থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতিতে ওজন বৃদ্ধি, ঠাণ্ডা সহ্য করতে না পারা, দুর্বলতা, বিষণœতা, চিন্তায় ও কাজে অস্বাভাবিক ধীরতা, চুল পড়া প্রভৃতি সমস্যা দেখা দেয়।
ফুসফুস বা শ্বাসতন্ত্রের ক্যান্সারে ওজন হ্রাস, বুকে ব্যথা বা শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
কণ্ঠস্বর যতেœ কিছু কৌশল
- সবার আগে দরকার সচেতনতা। অনেকেই জানে না যে, তাদের পেশার জন্য সুস্থ ও সুন্দর কণ্ঠ কতটা জরুরি।
- নিজের কণ্ঠ নিজে শুনতে হবে, যেন কোনো সমস্যা তাড়াতাড়ি আন্দাজ করা যায়। সমস্যা তিন সপ্তাহের বেশি থাকলে নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
- আর্দ্রতা কণ্ঠের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত জরুরি, তাই প্রতিদিন অন্তত ২ লিটার পানি পান করতে হবে।
- কণ্ঠ ব্যবহারে সাবধানী হোন। অতিউচ্চ বা পরিবর্তিত স্বরে কথা বলবেন না।
- ধূমপান, অ্যালকোহল, তামাক, গাঁজা ও অন্যান্য নেশা সম্পূর্ণ পরিহার করুন।
- ঘুমাতে যাওয়ার কমপক্ষে ২ ঘণ্টা আগে খাওয়া শেষ করুন এবং অল্প আহার করুন।
- অতিরিক্ত টেলিফোন ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
- অপ্রয়োজনে বারবার গলা পরিষ্কার/কাশি দেয়া থেকে বিরত থাকুন।
- শুষ্ক আবহাওয়া কণ্ঠের জন্য ক্ষতিকর। শীতাতপ যন্ত্রের বাতাস যাতে জলীয়বাষ্প কম, কণ্ঠের আর্দ্রতা কমিয়ে দেয়। রাতে আর্দ্রতাকরণ যন্ত্র ব্যয়ভার করুন।
- গলা শুকনা থাকলে অথবা মিউকাস জমে থাকলে জোরে কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করার চেষ্টা করি যা ক্ষতিকর। যা করবেন- বুক ভরে শ্বাস নিন, কিছুক্ষণ ধরে রাখুন, এবারে শ্বাস ছাড়ার সময় আস্তে শব্দ করুন।
- যখন বেশি মিউকাস উৎপন্ন হয় তখন মিউকাস তরলকারী ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন।
- স্থানীয় চেতনানাশক যথেচ্ছ ব্যবহার করবেন না।
- নিয়মিত ব্যায়াম অভ্যাস করবেন। ব্যায়াম কর্মশক্তি যেমন বৃদ্ধি করে, বাড়ায় মাংসপেশির দৃঢ়তা। ব্যায়াম জোগায় নিঃশ্বাসের প্রাচুর্য, যাতে করে শুদ্ধভাবে কথা বলা সম্ভব হয়।
- বিশ্রাম নিতে হবে যথেষ্ট। শারীরিক ক্লান্তি কণ্ঠস্বরের ওপর মন্দ প্রভাব বিস্তার করে।
- ঝাল খাবার বর্জন করতে হবে। ঝাল থেকে বেড়ে যায় পাকস্থলীর অ্যাসিড। আর তা উঠে আসতে পারে খাদ্যনালী বেয়ে, যাকে বলা হয় রিফ্লাক্স।
- নিজের হাত দুটো প্রায় সময় ধুয়ে নেয়ার অভ্যাস করুন। এতে সর্দিজ্বর আর ইনফ্লুয়েঞ্জা কাবু করতে পারবে কম।
প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা