০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ন ১৪৩১,
`

শিশুদের বিকাশে অটিজম অভিভাবকদের সচেতনতা

ইমন নাহার - ছবি : সংগ্রহ

অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার (এএসডি) এবং অন্যান্য নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল (এনডিডি) আক্রান্তদের উন্নয়নের মূল ধারায় আনার অঙ্গীকার নিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ১৩তম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস পালিত হচ্ছে। এই অটিজম বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন শিশু ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জীবন-মান উন্নয়নের সহায়তার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদ সর্বসম্মতিক্রমে ২ এপ্রিলকে বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে।

অটিজম একটি নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল বা স্নায়ুবিকাশজনিত প্রতিবন্ধকতা যা শিশুর জন্মের এক বছর থেকে তিন বছরের মধ্যে প্রকাশ পায়। অটিজমের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুদের মস্তিস্কের বিকাশ অন্য সব শিশুর তুলনায় ভিন্ন হয়। একই বয়সী শিশুদের তুলনায় এই শিশুরা আচার-আচরণে, যথাযথভাবে সামাজিক ভাব বিনিময় ও যোগাযোগে অসুবিধার মুখে পড়ে, নিজের ভিতর গুটিয়ে থাকে যা তাদের বন্ধুত ও পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধা দেয়। তবে অনেক ক্ষেত্রে এই ধরণের শিশুরা বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষ দক্ষ হয়ে থাকে।

অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডারের শিশু-কিশোরদের লালন পালনে বিশেষ যত্ন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। যোগাযোগ করতে না পারার কারণে এই শিশুরা নিজের চাহিদা বোঝাতে পারে না, সার্বিক উন্নতি ধীরগতির হয়, নেতিবাচক আচরণ দেখায়, সংবেদনশীল উদ্দীপনা বেড়ে অথবা কমে যায় এবং পুনরাবৃত্তিমূলক কাজ করে। এই শিশুদের জন্য সামাজিক, শিক্ষাগত চিকিৎসা, পারিবারিক সমর্থন, নীতি ও বিধিমালা সম্পর্কে সঠিক ধারনা, প্রশিক্ষণ, সমর্থন প্রদান করতে সমন্বয়মূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এদেরকে গ্রহণ করতে পারার মানসকিতা থাকতে হবে সমাজের সকল মানুষের।

এই শিশুদের সুন্দর জীবন যাপন ও অধিকার আদায়ের জন্য বাবা-মায়ের কিছু বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে যা তাদের সমাজে গ্রহণ যোগ্যতা বাড়াতে সাহায্য করবে। কোন কোন প্রতিষ্ঠান এদের নিয়ে কাজ করে তা সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। এছাড়াও, এসব শিশুদের উন্নয়নে নিজ নিজ এলাকায় স্থানীয় সমিতি কিংবা স্কুল রয়েছে কিনা তা জানতে হবে। পেশাগত ভাবে যারা সম্পৃক্ত এবং দক্ষতা সম্পন্ন যেমন ডাক্তার, থেরাপিস্ট, শিক্ষাবিদ, গবেষক, অটিজম বিশেষজ্ঞদের সাথে যোগাযোগ রাখা। অনলাইনে অটিজম-সম্পর্কিত কিছু গ্রুপ ও প্রশাসনিক সংস্থা আছে, যেখানে আপনি অন্যদের সাথে সংযুক্ত থাকতে পারেন। মূলত, তারা অটিজম ও অন্যান্য বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর অধিকার নিয়ে কাজ করে।

একইসাথে বাবা-মাকে অটিজম ব্যবস্থাপনায় কিছু বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। স্পিচ থেরাপি প্রতিবন্ধকতা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও, বাচ্চার সাথে ছবি বিনিময় করে যোগাযোগ ও ভাব বিনিময় করতে শিখুন। বাচ্চার মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেয়া খুবই জরুরি। এছাড়াও, নিয়মিতভাবে অপ্রত্যাশিত আচরণগুলো পর্যালোচনা করে প্রতিক্রিয়াগুলো পরিবর্তন করার চেষ্টা করা উচিত। সর্বোপরি অটিজিম ব্যবস্থাপনায় পারিবারিক ও সামাজিক সকলের সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা অতীব প্রয়োজনীয়।

লেখক 
চাইল্ড ডেভেলপমেন্টাল থেরাপিস্ট
চাইল্ড ডেভেলপমেন্টাল সেন্টার
এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা

 


আরো সংবাদ



premium cement