বুঝেই নিতে হবে দাঁতের যত্ন
- ২২ এপ্রিল ২০২৪, ২২:২৩
কথায় বলে, ‘দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বোঝা যায় না।’ দাঁতের প্রকৃত যত্ন না নিলে মুখের মধ্যে কী ঘটে, সে বিষয়ে অনেকের কোনো ধারণা নেই। দাঁত সম্পর্কে মৌলিক জ্ঞান থাকলে ঠিক সময়ে অনেক সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
মানুষ ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময়ে তার দেখা পাওয়া যায় না। কিন্তু মাড়ির নিচেই দাঁত আসলে সুপ্ত অবস্থায় থাকে। প্রায় ছয় মাস পর সেই দাঁত জেগে ওঠে। প্রথম দুধের দাঁতগুলো বেরিয়ে আসে। তারপর দাঁতের সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং সবশেষে ২০টি ছোট দাঁত সব কিছু চিবিয়ে খায়।
কিন্তু চোয়াল বেড়ে ওঠা সত্ত্বেও দুধের দাঁত ছোটই থেকে যায়। ছয় বছর বয়স থেকে সেগুলো একে একে পড়ে গিয়ে শেষে ৩২ পাটি দাঁত সৃষ্টি হয়।
চোয়ালের মধ্যে স্থায়ী দাঁতগুলো বাড়তে থাকে। একই সাথে দুধের দাঁতের রুট বা শিকড় লোপ পায়। সারাজীবন ধরে দাঁতগুলোকে বিপুল পরিমাণ খাদ্য চিবোতে হয়। সেই প্রক্রিয়ার সময়ে কিছু অবশিষ্ট খাদ্য দাঁতের ওপর আটকে থাকে। ফলে অণুজীবের খোরাকের অভাব হয় না।
দাঁত অত্যন্ত স্থিতিশীল হওয়ায় তার ফলে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। দাঁতের বাইরের স্তর হিসেবে এনামেল আমাদের শরীরের সবচেয়ে শক্ত টিস্যু দিয়ে তৈরি।
তবে স্ট্রেপটোককাস মিউটান্সের মতো ব্যাকটিরিয়া বিপাকের মাধ্যমে মূলত চিনি এবং অন্যান্য শর্করাগুলোকে অ্যাসিডে রূপান্তরিত করে। সেটাই অত্যন্ত স্থিতিশীল দাঁতের এনামেলের দুর্বলতার জায়গা।
সেই সব অ্যাসিড খনিজ দ্রবিভূত করে এবং এনামেলের ওপরের অংশে ছিদ্র সৃষ্টি করে। ক্ষুদ্র অণুজীব দাঁতের ওপর হামলা চালাতে পারে। তখন দাঁতের এনামেলের ওপর গর্ত সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দেয়।
দাঁত নিজেই ছোটখাটো ক্ষতি মেরামত করে নিতে পারে। বিশেষ করে লালার মাধ্যমে ক্যালসিয়াম, ফসফেট ও ফ্লোরাইড দাঁতের ওপরে গিয়ে আবার মিনারেল ভরিয়ে দিতে পারে। তাছাড়া লালা মুখের মধ্যে অ্যাসিডও নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারে। কিন্তু ক্যারিস বা ক্ষয় যদি এনামেলের মধ্য দিয়ে তার নিচের ডেন্টিন পর্যন্ত পৌঁছে যায়, তখন আর তাকে থামানো যায় না।
তবে বেশিভাগ ক্ষেত্রে সেই পর্যায়ে এসে আমরা প্রথম এ সমস্যা টের পাই। কারণ এনামেলের তুলনায় ডেন্টিনের মধ্যে স্নায়ুর অগ্রভাগ রয়েছে। দাঁতের ভেতরে স্নায়বিক টিস্যুর মধ্যে প্রদাহ দেখা দিলে প্রচণ্ড ব্যথা হয়।
দূর্ভাগ্যবশত অ্যাডভান্সড ক্যারিস থেকে মুক্তি পেতে একমাত্র সরাসরি হস্তক্ষেপ সাহায্য করে। ক্ষতিগ্রস্ত দাঁতের টিস্যু তখন দূর করতে হয়। সাহসি সেই দাঁতে তখন ফিলিং বা ক্রাউন বসানো হয়। সেগুলোর উপাদান হতে পারে সোনা, কম্পোজিট উপাদান অথবা পোর্সেলিন।
কিন্তু রুট টিস্যু মরে গেলে দাঁতে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সেই দাঁতেরও মৃত্যু ঘটে। কিন্তু সেটাই অন্তিম অবস্থা নাও হতে পারে। রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে প্রদাহে ক্ষতিগ্রস্ত স্নায়বিক টিস্যু দূর করে দাঁত সিল করে দেয়া হয়। এভাবে মৃত দাঁতও কাজ চালিয়ে যেতে পারে। তাতেও কাজ না হলে সেই দাঁতকে বিদায় জানাতে হয়। কৃত্রিম দাঁত সেই শূন্যস্থান পূরণ করে।
দাঁতের ভালো যত্ন, নিয়মিত দাঁতের ডাক্তার দেখানো এবং কম চিনি খাওয়ার মাধ্যমে বেশি বয়স পর্যন্তও দাঁত মজবুত রাখা যায়।
সূত্র : ডয়চে ভেলে