১৮ অক্টোবর ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩০, ১৪ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

থাইরয়েডের হরমোনের সমস্যা

-

হরমোন নিঃসরণকারী গ্রন্থির মধ্যে থাইরয়েড একটি অতিগুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থি। এটি গলার সম্মুখভাগে ত্বক ও মাংসের গভীরে অবস্থান করলেও এ গ্রন্থিটির আকার বড় হলে গলগণ্ড নামক রোগ হয় যাকে স্থানীয় ভাষায় ঘ্যাগও বলা হয়ে থাকে। এই গ্রন্থিনিঃসৃত হরমোন শরীরের সব বিপাক প্রক্রিয়ার গতি নিয়ন্ত্রণ করে বিধায় চিকিৎসাবিজ্ঞানে এর গুরুত্ব অপরিসীম। থাইরয়েডজনিত রোগীর সংখ্যাও অনেক। চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে আমাদের দেশেও থাইরয়েডের রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসায় ক্রমাগত উন্নতি হচ্ছে।
একবিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে আয়োডিনের ঘাটতিজনিত থাইরয়েডের রোগের চেয়ে অন্যান্য থাইরয়েড রোগের হারই বেশি। এদের মধ্যে হাইপোথাইরয়েডিসম, থাইরটক্সিকসিস ও থাইরয়েডের ক্যান্সারজনিত রোগসগুলোই প্রধান। উল্লেখ্য, থাইরটক্সিকসিস জাতীয় রোগ হলে হরমোনের আধিক্যে রোগীর চঞ্চলতা বৃদ্ধি পায়, হাত-পা কাপে, বুক ধড়ফড় করে, যথেষ্ট খাওয়া সত্ত্বেও ওজন কমে যায়, শরীর ঘামে ও ক্ষেত্রবিশেষে মানসিক সমস্যাসহ নানাবিধ জটিলতা দেখা দেয়। হাইপোথাইরয়েডিসমে প্রায় উল্টো রকম সমস্যা দেখা যায়। হরমোনের মাত্রা কমে যাওয়ার কারণে রোগী অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে, ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, শরীর ব্যথা করে, মাসিক অনিয়মিত হয়, সন্তান ধারণক্ষমতা কমে যায়, স্মৃতিশক্তি কমে যায়, চুল পড়ে যেতে থাকে এবং নানাবিধ মানসিক উপসর্গও দেখা দেয়।
আজকাল ল্যাবরেটরি মেডিসিন, রেডিওলজি ও নিউক্লিয়ার মেডিসিনের উন্নতির ফলে আমাদের দেশেও থাইরয়েড রোগ বেশ আগেই শনাক্ত করা যায়। রোগের উপসর্গ দেখা দেয়ার আগেই প্রায় ১০ শতাংশ লোকের রক্ত পরীক্ষায় থাইরয়েড হরমোনের মাত্রায় তারতম্য পাওয়া যায় যা এতকাল কারো জানার সুযোগ ছিল না। এসব রোগীকে সাব-ক্লিনিক্যাল বা সুপ্ত থাইরয়েডজনিত রোগ বলা যেতে পারে। এসব রোগীদেরও চিকিৎসাসেবার আওতায় রাখা প্রয়োজন, যদিও অধিকাংশেরই কোনো ওষুধের প্রয়োজন হয় না। এ সব সুপ্ত রোগী ও পরিপূর্ণ উপসর্গসহ থাইরয়েডের রোগী মিলিয়ে অনুমান করা যায়, ১০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ লোকের কোনো না কোনো থাইরয়েডের রোগ আছে। এদের মধ্যে বেশ কিছু রোগী থাইরয়েডাইটিস ও থাইরয়েড ক্যান্সারে আক্রান্ত।
থাইরয়েড চিকিৎসায় ব্যাপক উন্নতির ফলে আজকাল আগের মতো অতিমাত্রার হাইপো বা হাইপারথাইরয়েড রোগী কম দেখা যায়। অন্য কোনো রোগ চিকিৎসার জন্য পরীক্ষা করার সময় অনেকের থাইরয়েডজনিত রোগ প্রথমবারের মতো শনাক্ত হতে দেখা যায়। চিকিৎসা আপাতদৃষ্টিতে সহজ মনে হওয়ায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই অনেক রোগী চিকিৎসা চালিয়ে যান। ফলে কখনো কখনো মারাত্মক জটিলতা দেখা দেয়।
থাইরয়েড হরমোন পরীক্ষা আগের থেকে বেশি সহজপ্রাপ্য হওয়ায় অনেকেই টেস্টগুলো কারণে-অকারণে করে থাকেন এবং অনেকেই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়াই শুধু টেস্টের সামান্য তারতম্য দেখেই প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে থাইরয়েডের ওষুধ দিনের পর দিন সেবন করে যাচ্ছেন। এটি অপ্রত্যাশিত এবং রোগীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এর ফলে রোগীরা হার্টের অসুখ ও অস্টিওপরোসিস নামে অস্থি রোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছেন। যথাযথ চিকিৎসার অভাবে থাইরটক্সিক ক্রাইসিস নামক জটিলতায় আক্রান্ত হলে মৃত্যুঝুঁকি প্রায় শতভাগ। থাইরয়েড রোগের চিকিৎসায় প্রভুত উন্নতি হওয়া সত্ত্বে¡ও অজ্ঞতা ও অবহেলার কারণে প্রাণহানি ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরো যতœবান হতে হবে।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কাউন্সিল চিকিৎসকদের কে কোন রোগের বিশেষজ্ঞ তা সার্টিফিকেট যাচাই করে নির্ধারণ করে, যা সাধারণ জনগণ ভালোভাবে অবহিত নন। এই সুযোগেই অপচিকিৎসার ক্ষেত্র সৃষ্টি হয় যা থাইরয়েডের রোগের বেলায়ও দেখা যায়। কাউন্সিল কর্তৃক স্বীকৃত নয় এমন কারো চিকিৎসার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে প্রাক্টিস করা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।
লেখক : বিভাগীয় প্রধান (অব:), ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ


আরো সংবাদ



premium cement
‘ক্ষমতায় থাকার জন্য হাসিনা এত মানুষ হত্যা করেছে, যা ইতিহাসে নেই’ আমি রেজাল্ট চাই না, আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই : শহিদ সবুজ মিয়ার মা ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে জয়খরা ঘুচাল পাকিস্তান যেভাবে শহিদ হন ইয়াহিয়া সিনওয়ার অন্তর্বর্তী সরকারে যোগ হতে পারে নতুন মুখ! শুক্রবার ঢাকার বাতাসের মান ‘অস্বাস্থ্যকর’ ছাত্র অসন্তোষের জেরে পাঞ্জাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাশিয়াকে সমর্থন প্রশ্নে বেইজিংকে ‘চ্যালেঞ্জ’ করতে চীনে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেয়া মানে অপরাধকে প্রশ্রয় দেয়া : ভারতকে রিজভী রিপাবলিকান-সমর্থিত নির্বাচনী বিধি বাতিলের রায় জর্জিয়ার বিচারকের ইইউ বৈঠকে জয়ের পরিকল্পনা পেশ জেলেনস্কির

সকল