লাখ লাখ বছরের পুরনো ভাইরাস ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৬ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৩১
লাখ লাখ বছর ধরে মানবদেহের ডিএনএয়ের ভেতরে লুকিয়ে আছে এমন একটি প্রাচীন ভাইরাসের ধ্বংসাবশেষ, যেটি ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শরীরকে সাহায্য করে বলে জানিয়েছে বিজ্ঞানীরা।
ফ্রান্সিক ক্রিক ইন্সটিটিউটের এক গবেষণায় বলা হয়েছে শরীরে ক্যান্সার কোষগুলো যখন ছড়িয়ে পড়ছে তখন পুরনো এ ভাইরাসের সুপ্ত থাকা অবশিষ্টাংশ জেগে উঠছে। এটা অবচেতনেই টিউমারকে টার্গেট বানিয়ে আক্রমণ করতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়াকে সহায়তা করে।
গবেষক দল তাদের এই উদ্ভাবনকে এখন ক্যান্সার চিকিৎসা বা প্রতিরোধের জন্য ভ্যাকসিন তৈরির কাজে লাগাতে চান।
গবেষণায় তারা দেখেছেন যে ফুসফুস ক্যান্সার থেকে সেরে ওঠা এবং রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়ার একটি অংশ যাকে বি-সেল বলা হয় ও এটি টিউমারকে ঘিরে গুচ্ছ আকারে থাকে- এর মধ্যে যোগসূত্র আছে।
বি-সেল শরীরের একটি অংশ যা এন্টিবডি তৈরি করে। এটি বিশেষভাবে পরিচিত কোভিডের মতো ইনফেকশনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভূমিকার জন্য। এরা ফুসফুস ক্যান্সারে কী করে তা রহস্য। কিন্তু মানুষ ও প্রাণির স্যাম্পল নিয়ে অনেকগুলো পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে তারা এখনো ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে উদগ্রীব।
ফ্রান্সিস ক্রিক ইন্সটিটিউটের অ্যাসোসিয়েট রিসার্চ ডিরেক্টর প্রফেসর জুলিয়ান ডাউনওয়ার্ড বলছিলেন, ‘অ্যান্টিবডি যেসব ভাইরাসকে শনাক্ত করছে সেগুলোর মাত্রা হ্রাস করতে সহায়তা করছে সুপ্ত থাকা রেট্রোভাইরাস।’
রেট্রোভাইরাসের তাদের ভেতরেই তাদের নিজস্ব জেনেটিক নির্দেশনার কপি রেখে দেয়ার এক ধরনের কৌশল আছে। এর আট ভাগের বেশি যাকে আমরা হিউম্যান ডিএনএ মনে করি, সেটি আসলে এ ধরনের ভাইরাসের উৎস। কিছু রেট্রোভাইরাস কোটি বছর আগে জেনেটিক কোডের ফিক্সচারে পরিণত হয়েছিল এবং আমাদের বিবর্তনের সাথে সম্পৃক্ত বিষয়গুলো ধারণ করেছে।
অন্য রেট্রোভাইরাসগুলো হয়ত কয়েক হাজার বছর আগে আমাদের ডিএনএতে প্রবেশ করেছে। সময়ের আবর্তে বাইরের নির্দেশনাগুলো কো-অপ্ট হয়েছে এবং শরীরের কোষের মধ্যে কাজ করেছে। কিন্তু অন্যগুলো সেটি ছড়াতে শক্তভাবে বাধা দিয়েছে।
তবে ক্যান্সারে আক্রান্ত কোষগুলোর মধ্যে তখন গণ্ডগোল লেগে যায় যখন এটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় আর যখন প্রাচীন ভাইরাসগুলোর নিয়ন্ত্রণ কমে যায়।
প্রাচীন জেনেটিক নির্দেশনাগুলো আর নতুন করে ভাইরাসের পুনরুত্থান ঘটাতে পারে না কিন্তু ভাইরাসকে খণ্ড খণ্ড করতে পারে। আর সেটাই শরীরের ভেতরে ভাইরাল থ্রেটকে বা রোগের হুমকিকে চিহ্নিত করতে রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়ার জন্য যথেষ্ট।
বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের রেট্রোভাইরাল ইমিওনলিজির প্রধান জর্জ ক্যাসিওটিস বলছেন, ‘রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়াটি একটি কৌশল যা বিশ্বাস করে যে টিউমার কোষগুলো আক্রান্ত হয়েছে এবং এটা চেষ্টা করে ভাইরাসকে দূর করতে। সুতরাং এটা হলো একটা সতর্কীকরণ প্রক্রিয়া।’
অ্যান্টিবডিগুলো রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়ার অন্য অংশগুলো ডেকে তোলে আক্রান্ত কোষকে মেরে ফেলার জন্য। আর রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়া ভাইরাসটিকে ঠেকাতে চেষ্টা করে কিন্তু এই গবেষণায় দেখা গেছে ক্যান্সারে আক্রান্ত কোষগুলোকে বের করে দিয়েছে।
প্রফেসর জর্জ ক্যাসিওটিস বলছেন, রেট্রোভাইরাসের ভূমিকার এমন পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একটা সময় হয়ত এ ভাইরাসই ক্যান্সারের জন্য দায়ী ছিল, কিন্তু সেটিই এখন ক্যান্সার থেকে সুরক্ষা দিচ্ছে।
‘ন্যাচার’ জার্নালে এ গবেষণা সম্পর্কিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে কিভাবে শরীরে এটা স্বাভাবিকভাবে ঘটে।
কিন্তু গবেষকরা এটাকে আরো এগিয়ে নিতে চায় ভ্যাকসিন তৈরির মাধ্যমে।
প্রফেসর ক্যাসিওটিস বলেছেন, ‘এটা যদি আমরা করতে পারি তাহলে হয়ত চিকিৎসার জন্যই ভ্যাকসিন নয় বরং আগেই প্রতিরোধের জন্যও ভ্যাকসিন তৈরি করতে পারব।’
যুক্তরাজ্যের ক্যান্সার গবেষক ড. ক্লেয়ার ব্রমলে বলছেন, ‘আমাদের সবার জিনের মধ্যে প্রাচীন ভাইরাসের ডিএনএ আছে, যা পূর্বতনদের কাছ থেকে এসেছে এবং এ চমৎকার গবেষণায় সেটিই উঠে এসেছে যে কিভাবে রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়া সেটিকে চিহ্নিত করে এবং ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করতে সহায়তা করে।’
তিনি বলেন, ভ্যাকসিনের জন্য হয়ত আরো গবেষণার প্রয়োজন। কিন্তু এ গবেষণা শরীর ভিত্তিক গবেষণা এক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে, যার মাধ্যমে হয়ত একদিন ক্যান্সার চিকিৎসা বাস্তবতায় পরিণত হবে।
সূত্র : বিবিসি