অপটিক নিউরাইটিস- হঠাৎ অন্ধত্ব
- ডা: মো: ছায়েদুল হক
- ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০৫
অপটিক নিউরাইটিস বা অপটিক নিউরোপ্যাথি হলো অপটিক নার্ভের এক ধরনের প্রদাহ। অপটিক নার্ভ হলো চোখের সাথে মস্তিষ্কের প্রধান এবং একমাত্র স্নায়ু সংযোগ, যা দৃষ্টিতে সহযোগিতা করে থাকে। চোখ থেকে দৃষ্টির সঙ্কেত মস্তিষ্কে পরিবাহিত হওয়ার একমাত্র বাহন হলো এই অপটিক নার্ভ। ফলে কোনো কারণে অপটিক নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হলে দৃষ্টি সমস্যা দেখা দেয়।
যে সমস্ত কারণে অপটিক নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়-
অপটিক নিউরাইটিস বা অপটিক নার্ভের প্রদাহ, টিউমার, আঘাত, জন্মগত ত্রুটি, টক্সিক নিউরোপ্যাথি ও নিউট্রিশনাল (পুষ্টিজনিত) নিউরোপ্যাথি। প্রদাহের মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণ, ব্যাক্টেরিয়া ও ফাঙ্গাসের সংক্রমণ, অটোইমিউন ডিজিজ যেমন এসএলই, পলিআর্টারাইটিস নডোসা ইত্যাদি। এ ছাড়াও ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, টেম্পোরাল আরটারাইটিস ও মাল্টিপল সেক্লরোসিসেও অপটিক নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে।
উপসর্গ-
হঠাৎ করেই এক চোখে বা দুই চোখে দৃষ্টি কমে য়ায়। এর সাথে অন্য কোনো উপসর্গ প্রায় সময় অনুপস্থিত থাকে। দৃষ্টি সমস্যার পাশাপাশি কালারভিশন সমস্যা বা রঙ চিনতে অসুবিধা হয়ে থাকে।
অপটিক নিউরাইটিসে দ্রুত চিকিৎসা না হলে স্থায়ী অন্ধত্ব দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে টক্সিক কারণ যেমন- মিথিলেটেড স্পিরিট বা ঘরে বানানো মদ যেটি চুলাই মদ বলে পরিচিত তাতে খুব দ্রুত অন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বিদ্যমান।
এ ছাড়া কিছু ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াতেও এই দ্রুত অন্ধত্বের সমস্যা হতে পারে। মেথিলেটেড স্পিরিট জনিত অপটিক নিউরাইটিসে জীবন হানির ঝুঁকির সাথে অতিরিক্ত উপসর্গ হিসেবে পেটে ব্যথা, বমি, মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট, কনফিউশনের মতো উপসর্গ থাকে। এ ক্ষেত্রে যদিও প্রাথমিক ফোকাস থাকে জীবন বাঁচানো তবে পাশাপাশি অপটিক নার্ভের প্রদাহের দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।
চিকিৎসা-
কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এটি নিজে থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভালো হতে ছয় থেকে ১২ মাস সময় নিতে পারে। সাধারণত স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ও ভিটামিন বি-১২, ভিটামিন বি-৬, বি-১ ইত্যাদি দিয়ে চিকিৎসা করতে হয়। জরুরি ক্ষেত্রে ইনজেক্টেবল ফর্মে ব্যবহার করতে হয়।
আর যদি এটি সাইনাস ইত্যাদি ইনফেকশন থেকে হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করতে হবে এবং পাশাপাশি স্টেরয়েড ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
পূর্ব সতর্কতা- যদিও অনেক ক্ষেত্রেই এই সমস্যাটি আগে থেকে আঁচ করা যায় না। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পূর্ব সতর্কতার অবকাশ আছে। যেমন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও মেথিলেটেড স্পিরিট সেবনে অপটিক নার্ভ দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটিকে বলা হয় টক্সিক অপটিক নিউরোপ্যাথি। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ওষুধের কথা এখানে বর্ণনা করা যেতে পারে-
যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত কিছু ওষুধ যেমন- ইথামবিউটলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নির্ভর করে এর ডোজ ও মেয়াদের ওপর। ৩৫ মিলিগ্রাম/কেজি/প্রতিদিন মাত্রায় তিন থেকে ছয় মাসে ব্যবহারে অপটিক নিউরোপ্যাথি দেখা দিতে পারে। তবে অনেক সময় এর আগেও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। ইথামবিউটল যেহেতু কিডনির মাধ্যমে দেহ থেকে নিষ্ক্রান্ত হয় তাই দেখা যায়, যাদের কিডনির সমস্যা আছে তাদের বেলায় এর ডোজ খুব সাবধানে ব্যবহার করতে হয়। আইসোনায়াজাইড বা আইএনএইচ ব্যবহারেও অপটিক নিউরোপ্যাথি হতে পারে বিশেষ করে ইথামবিউটলের সাথে ব্যবহারের ক্ষেত্রে।
মৃগী রোগ বা এপিলেপ্সি চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ যেমন- ভিগাবাট্রিন-১ গ্রাম/কেজি/প্রতিদিন ডোজে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই কম; আবার ৩ গ্রাম/কেজি/প্রতিদিন ডোজে অপটিক নিউরোপ্যাথি হয়ে থাকে।
এন্টি ক্যান্সার বা ইমিউনো সাপ্রেসিভ ওষুধ যেমন- মিথোট্রেক্সেড ব্যবহারে বিশেষ করে দেহে ফলিক এসিড ঘাটতি বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ব্যবহারে অনেক সময় অপটিক নিউরোপ্যাথি দেখা দিতে পারে।
এ ক্ষেত্রে ফলিক এসিড ও ভিটামিন বি-১২ সাপ্লিমেন্ট দেয়া যেতে পারে। বি-১২ ইনজেকশন ভালো কাজ করে। মুখে সেবন করেও উপকার পাওয়া যায়। কখনো কখনো এসব ক্ষেত্রে সারা জীবন মাঝে মধ্যে বি-১২ বা বি কমপ্লেক্স সাপ্লিমেন্ট নেয়া ভালো।
টোব্যাকো সেবন, এলকোহল সেবন, পুষ্টি সমস্যা- বিশেষ করে বি-১২, বি-১ (থায়ামিন), বি-২ (রাইবোফ্লেবিন), বি-৬ (পাইরিডক্সিন) ও নিয়াসিন ঘাটতি, ফলিক এসিড, আমিষ ও খাদ্যে কপার জিঙ্ক উপাদানের ঘাটতি এটিকে ত্বরান্বিত করে। ফলে উল্লিøখিত বিষয়গুলো বিবেচনায় থাকলে অনেক সময় এই ভয়াবহ ক্ষতি এড়ানো সম্ভব। তবে মেথিলেটেড স্পিরিটজনিত দৃষ্টি সমস্যায় দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। এটি চোখের জন্য ইমারজেন্সি।
হঠাৎ এক চোখে বা উভয় চোখে দৃষ্টি একদম কমে গেলে সাথে অন্য কোনো উপসর্গ থাকুক বা না থাকুক দ্রুত একজন চক্ষুবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসা শুরু করতে বিলম্ব হলে অন্ধত্ব স্থায়ীরূপ লাভ করে।
লেখক : এমবিবিএস, এফসিপিএস (চক্ষু), এমএস (চক্ষু)
চক্ষুবিশেষজ্ঞ ও সার্জন, প্রাক্তন সহযোগী অধ্যাপক জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান
ও কনসালট্যান্ট, আইডিয়াল আই কেয়ার সেন্টার, আদাবর, ঢাকা
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা