০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ন ১৪৩১,
`

ওষুধ থেকে কিডনি রোগ

-

কিডনি রোগের সাথে ওষুধের অনেকটা সংযোগ রয়েছে। এমনকি ওষুধ খেয়ে কিডনি তাৎক্ষণিকভাবে কাজ বন্ধ করে দিতে পারে যাকে একিউট রেনাল ফেইল্যুর সংক্ষেপে এআরএফ বলে। ওষুধ খেয়ে যেমন কিডনি রোগ হতে পারে ঠিক তেমনি কিডনি অকেজো হয়ে গেলে ওষুধ সেবনেও সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। সুতরাং ওষুধ সেবনের আগে ডাক্তার ও রোগীকে সতর্ক থাকা দরকার, যেমন ওষুধজনিত কিডনি রোগ হতে পারে তেমন কিডনি রোগে ওষুধের ব্যবহার স¤পর্কেও ধারণা থাকা প্রয়োজন।
ওষুধজনিত কিডনি রোগ : প্রকাশিত বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে জানা যায়, ওষুধে ৭ থেকে ১০ শতাংশ কিডনি তাৎক্ষণিকভাবে বিকল (এআরএফ) হয়ে যেতে পারে এবং ৫ থেকে ৭ শতাংশ ধীর গতিতে কিডনি বিকল হয়ে যেতে পারে- যাকে বলা হয় সিআরএফ। এর কারণ হচ্ছে বেশির ভাগ ওষুধই কিডনি দ্বারা বের হয়ে যায় আর সে জন্যই তারা কিডনিকে বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। ওষুধের জন্য বমি হয়ে রক্তচাপ কমেও কিডনির ক্ষতি হতে পারে।
এ ছাড়াও কিছু কিছু ওষুধের কারণে বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জি, কিডনির রক্ত প্রবাহ কমিয়ে, এমনকি শরীরের প্রতিরোগ ক্ষমতাকে ক্ষুণœ করে বা সরাসরি কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যেমন ব্যথার ওষুধ বা এনএসএআইডি গ্র“পের ওষুধ প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষ ব্যথা উপশমের জন্য ব্যবহার করে থাকে। অনেক সময় প্রস্রাব বেশি করার জন্য ফ্রুসেমাইড বা ডায়ইউরেটিকস অথবা পায়খানা করার জন্য ল্যাক্সেটিভ জাতীয় ওষুধ খেয়ে শরীরের পানি, লবণ, পটাশিয়াম ও ক্ষারের তারতম্য করে আকস্মিক কিডনি ফেইল্যুর করতে পারে। এ সব ওষুধের সাথে যখন ব্যথা উপশমের ওষুধ দেয়া হয় তখন কিডনির উপর আরো অতিরিক্ত চাপ পড়ে।
সচরাচর জীবাণুজনিত ইনফেকশনের জন্য যে সমস্ত এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয় তাদের মধ্যে সালফোনামাইড, কোট্রাইমোক্সাজল, পেনিসিলিন ইন্টারস্টিশিয়াল নেফ্রাইটিস করতে পারে। এমনকি ব্যথার জন্য ব্যবহৃত এসপিরিন, ডাইক্লোফেনাক, আইব্রপ্র“ফেন, নেপ্রোক্সেন ইত্যাদি ইন্টারস্টিশিয়াল নেফ্রাইটিস থেকে শুরু করে এআরএফ করতে পারে। কিডনির ছাঁকনিকে নষ্ট করে নেফ্রাইটিস করতে পারে যেমন- পেনিসিলামাইন, লেড, গোল্ড, মারকারি এবং আরসেনিক মিশ্রিত ওষুধসমূহ। জেন্টামাইসিন, কেনামাইসিন, সেফাললোসপরিন, রিফামপিসিন, এলুপিরিনল জাতীয় ওষুধ ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিডনিকে অকেজো করে ফেলতে পারে। আবার অনেকদিন প্রায় দুই-তিন বছর ধরে প্যারাসিটামল, এসপিরিন, ফেনাসিটিন, ক্যাফিন জাতীয় ওষুধ একনাগাড়ে খেলে অথবা ১০-১৫ বছরে এক থেকে দুই কেজি এনালজেসিক সেবন করলে এনালজেসিক নেফ্রোপ্যাথি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। উন্নত বিশ্বে ১০-৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে ধীর গতিতে কিডনি অকেজো হওয়ার এটি একটি অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হয়েছে। এতক্ষণে কিছুটা হলেও জানা গেল, ওষুধজনিত কিডনি রোগ সম্বন্ধে। এবার দেখা যাক যার কিডনি এরই মধ্যে অসুস্থ বা কিছুটা হলেও অকেজো হয়েছে তার জন্য ওষুধের প্রয়োগ এবং প্রভাব কী রকম।
কিডনি রোগে ওষুধের ব্যবহার : কিডনি অকেজো বা বিকল থাকলে ওষুধের ব্যবহার স¤পর্কে সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। কেননা, কিডনির কাজের মধ্যে অন্যতম কাজ হলো পরিপাকের পর শরীর থেকে ওষুধসহ অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় জিনিস প্রস্রাবের সাহায্যে নির্গত করা। কাজেই কিডনি যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন রক্তে ওষুধের অবস্থান স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় থাকতে পারে। এমনকি ওষুধ কিডনি থেকে বের হওয়ার পথে নানাবিধ বাধার সম্মুখীন হয় যার ফলে ওষুধ সেবনে, মাত্রায় এবং ব্যবহারে অনেক পরিবর্তন আনতে হয়। রক্তে ইউরিয়া, ত্রিয়েটিনিন বেশি থাকলে বা কিডনি অকেজো হলে যে সমস্ত ওষুধের ব্যবহার নিষিদ্ধ যেমন- টেট্রাসাইক্লিন, কোট্রিমাজল, সালফোনেমাইড, নালিডেক্সিক এসিড, নাইট্রোফুরানটয়িন, কেনামাইসিন, স্পাইরোনোল্যাকটন, স্ট্রেপটোমাইসিন, ডাইক্লোফেনাক, এসপিরিনি জাতীয় ওষুধ।
কিডনি অসুস্থ থাকলে অ্যান্টিবায়োটিক যেমন- অ্যাম্পিসিলিন, অ্যামোক্সাসিলিন, সেফালোসপোরিন, সেফ্রাডিন, সিপ্রোফ্লোক্সাসিন, জেন্টামাইসিন, কেনামাইসিন, যক্ষ্মার ওষুধ ইথামবুটল, এম্ফোটেরিসিন, উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ কেপ্টোপ্রিল, এটেনোলল, এনালাপ্রিল, লিসিনোপ্রিল, ক্যান্সারের ওসুধ মেথোট্রিক্সেট, সাইক্লোসপোরিন, সিসপ্লাটিন, কার্বোপ্লাটিন ইত্যাদি ওষুধ কম মাত্রায় ব্যবহার করতে হয়।
ওষুধ যেমন রোগ নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা হয় তেমনি ওষুধের ব্যবহারে কিডনিসহ যেকোনো অঙ্গের ক্ষতিও হতে পারে। কাজেই ডাক্তার ও রোগী উভয়কেই এ ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে যাতে করে ওষুধজনিত কিডনি রোগ না হয় এবং কিডনি রোগে ওষুধের ব্যবহারে অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে যাতে করে অসুস্থ কিডনি আরো বেশি অসুস্থ না হয়।
লেখক : নেফ্রোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ, ঢাকা।


আরো সংবাদ



premium cement