২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১০ কার্তিক ১৪৩১, ২২ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

শিশুর হাঁপানি চিকিৎসায় সিরাপ, নেবুলাইজেশন না ইনহেলার?

-

শিশু চিকিৎসক হিসেবে হাঁপানি চিকিৎসা করতে গিয়ে আমরা কয়েকটি সমস্যার মুখোমুখি হই। অনেক অভিভাবক জানেনই না কিংবা মানতেই চান না, শিশুদেরও হাঁপানি হতে পারে। ঘনঘন কাশি লেগে থাকা, ঘুমের সময় কাশি হয়ে ঘুম ভেঙে যাওয়া, নেবুলাইজেশন কিংবা মুখে খাওয়ার কাশির ওষুধে (বিশেষ করে সালবিউটামল) দ্রুত উপশম হওয়া হাঁপানির ইঙ্গিত করে। এই শিশুদের অনেকেই ক’দিন পরপর নাকে চোখে জলপড়া, চামড়ায় চুলকানি, মাথায় খুশকির মতো ঘা, পরিবারে অন্য সদস্যের হাঁপানির ইতিহাস থাকতে পারে।
আরেকটি সমস্যা হচ্ছে- এসব শিশু একটির পর একটি এন্টিবায়োটিক, স্টেরয়েড (প্রেডনিসলোন) যথেচ্ছ মাত্রায়, মাত্রারিক্ত পরিমাণে সেবন করে হাসপাতালে আসে।
আর সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে- হাঁপানির ওষুধ কী প্রিপারেশনে দিতে হবে সেটি ঠিক করা। মায়েদের প্রথম পছন্দ মুখের ওষুধ। অন্তত আপৎকালে নেবুলাইজেশন নেয়া। কিন্তু ইনহেলার ব্যাপারে প্রচণ্ড অনীহা আর ভীতি কাজ করে। তাহলে আগে আমাদের জানতে হবে আধুনিক বিজ্ঞান কী বলে।
শিশুদের হাঁপানির চিকিৎসার গাইডলাইন ঠিক করে দেয় ‘গিনা’ (গ্লে­াবাল ইনিশিয়েটিভ ফর অ্যাজমা) নামের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া থেকে ভারত, সিঙ্গাপুর, বাংলাদেশের চিকিৎসক এ সংস্থার অভিন্ন গাইডলাইন অনুসরণ করেন। সারা পৃথিবীর চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা শিশুদের হাঁপানির ক্ষেত্রে মুখের ওষুধ, নেবুলাইজেশন নিরুৎসাহিত করছে এবং ইনহেলারকে প্রথম পছন্দ বলছে। এর কিছু কারণ আছে।
১. একটি নির্দিষ্ট ওজনের শিশুর ক্ষেত্রে একই ওষুধের ডোজ (ধরি সালবিউটামল) মুখে খেলে (সিরাপ বা বড়ি) সবচেয়ে বেশি লাগে, নেবুলাইজেশনে তার চেয়ে কম এবং ইনহেলারে খুবই কম লাগে। অর্থাৎ, ইনহেলারে নেয়া ওষুধে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সবচেয়ে কম।
২. মুখের খাওয়া ওষুধ ফুসফুসের পাশাপাশি হৃৎপিণ্ড, যকৃত, বৃক্কে প্রভাব ফেল। তুলনায় ইনহেলারে নেয়া ওষুধ সরাসরি ফুসফুসে কাজ করে।
৩. হাঁপানির চিকিৎসায় স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ লেগে থাকে। মুখে সেবন করা এই ওষুধে প্রচুর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়। দীর্ঘদিন এই ওষুধ খেলে শিশুদের উচ্চতা বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়ে এরা খর্বকায় হয়। অথচ স্টেরয়েড ইনহেলারে নিলে এসব সমস্যা থাকে না। শুধু স্টেরয়েড ইনহেলারে ব্যবহারের পর কুলি করলে মুখে ঘা, গলার স্বর পরিবর্তন এসব সমস্যাও হয় না।
৪. ইনহেলার ব্যবহারে হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই অন্যান্য ওষুধ লাগে না। এসব শিশুর এন্টিবায়োটিক লাগে না বললেই চলে।
৫. চিকিৎসা খরচ একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। প্রথমবার স্পেসারসহ ইনহেলার কিনতে গেলে কিছু টাকা লাগে। কিন্তু সারা বছরে বারবার আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসা ব্যয়ের তুলনায় এই খরচ খুবই কম। অর্থাৎ ইনহেলারই আপনার জন্য অর্থ সাশ্রয়ী।
এসব বুঝিয়ে বলার পরও অভিভাবকের মনে কিছু কুসংস্কার ও প্রশ্ন থেকেই যায়। এগুলোর উত্তরও জানতে হবে।
১. নেবুলাইজেশন, ইনহেলার নিলে হৃৎপিণ্ডের ক্ষতি হয় কি?
না, সাধারণত ডোজ ঠিক থাকলে কোনো ক্ষতি হয় না। তবে ভুল নিয়মে অতিরিক্ত সালবিউটামল নিলে বুক ধড়ফড়, হাত কাঁপা হতে পারে। ইনহেলারে এই আশঙ্কা নেই বললেই চলে।
২.ইনহেলার একবার নিলে সারা জীবন নেয়া লাগে?
এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে আগে হাঁপানি সম্পর্কে জানতে হবে। শিশু বয়সে হাঁপানি হলেই বয়স হলে হাঁপানি হবে এমন নয়। সাধারণত জন্মগত অ্যালার্জির সাথে হাঁপানি নির্ভর করে। বেশির ভাগ শিশুর ১২-১৫ বছর হলে অসুখের মাত্রা অনেকটাই সেরে যায়। কিন্তু যত দিন না সারে, ততদিন ইনহেলার ব্যবহার করতে হয়। অবশ্য দু’টি ব্যাপার গুরুত্বপূর্ণ। শিশু চিকিৎসক পরীক্ষা করে নিশ্চিত হবেন অসুখটি আসলেই হাঁপানি নাকি অন্য কিছু। আর কমপক্ষে তিন মাস পরপর লক্ষণ দেখে ঠিক করতে হবে ওষুধের মাত্রা বাড়বে না কমবে। ওষুধের পাশাপাশি হাঁপানি নিয়ন্ত্রণের নিয়ম মানলে অসুখ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৩. ইনহেলার কি বয়স্কদের জন্য?
ইনহেলার শুধু ওষুধ গ্রহণের একটি পদ্ধতি। শিশুদের জন্য নির্দিষ্ট ডোজ মেনেই ইনহেলার ব্যবস্থাপত্র দেয়া হয়।
৪. ইনহেলার ব্যবহারের পরও হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে আসছে না কেন?
এটি খুব জরুরি প্রশ্ন। চিকিৎসককে দেখতে হবে রোগীর স্পেসার (শিশুদের এটি লাগবেই) ধরা ঠিকমতো হয়েছে কি না। অনেক ক্ষেত্রেই এই ভুলের জন্য চিকিৎসায় কাক্সিক্ষত ফল পাওয়া যায় না। এ ছাড়া সাথে অন্য অসুখ আছে কি না দেখতে হবে। এর পরও ‘ডিফিকাল্ট অ্যাজমা’ বলে একটি ব্যাপার আছে, যেটার উন্নতি সময়সাপেক্ষ।
এই লেখাটিতে আমি দু’টি তথ্যে জোর দিতে চেষ্টা করেছি। প্রথমত, শিশুদের হাঁপানিতে এখন পর্যন্ত ইনহেলার সবচেয়ে বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসাব্যবস্থা। দ্বিতীয়ত, হাঁপানি নিয়ন্ত্রণ ও স্পেসারসহ ইনহেলারের সঠিক নিয়ম সম্বন্ধে আরো সচেতনতার সুযোগ রয়ে গেছে। আমাদের মাতুয়াইল শিশু-মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট হাসপাতালের শিশু হাঁপানি কেন্দ্রে এই বিষয়গুলো অভিভাবককে আমরা হাতে-কলমে শিখিয়ে থাকি।
লেখক : রেজিস্ট্রার, শিশু-মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, মাতুয়াইল, ঢাকা


আরো সংবাদ



premium cement
ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে যারা নিষ্ঠুরতা দেখিয়েছে তাদের ছাড় নেই : আইজিপি গাজীপুরে যৌথ বাহিনীর অভিযানে দেশীয় অস্ত্রসহ গ্রেফতার ৮ আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে সমর্থন করায় ভারতের দুঃখপ্রকাশ করা উচিত : নুর অসমাপ্ত ও অপরিহার্য বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে সংস্কারের আহ্বান দেবপ্রিয়র ডেঙ্গুতে আরো ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৯৬১ মধ্যপ্রাচ্য সংঘাত শেষ হবে কিভাবে? ক্যান্টন ফেয়ারে ওয়ালটনের ব্যাপক সাফল্য বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথ আউয়াল ইসরাইলে পাল্টা হামলা চালাবে ইরান ‘ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে ছাত্রশিবির বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে’ সম্পত্তির ভাগ পেতে কসাই আনিয়ে বাবাকে গলা কেটে হত্যা, ছেলেসহ গ্রেফতার ৪

সকল