লবণ হোক পরিমিত
- ডা: সুরাইয়া সেহেলী
- ০৮ জুন ২০২২, ০০:০০
লবণ ছাড়া আমরা কি চিন্তা করতে পারি? কোনো খাবারে লবণের পরিমাণ কম হলে তা কি মুখে নিতে চাই? খাবার মুখরোচক করতে লবণের বিকল্প নেই। মুখরোচক হলেই কি তা ভালো? আসলে তা নয়। যত বেশি মুখরোচক তত স্বাস্থ্যক্ষতি। বলা হয়, খাবার মুখরোচক করতে দরকার লবণ, চিনি ও চর্বি বা তেল। কিন্তু এ তিনটিই কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি।
লবণে স্বাস্থ্যঝুঁঁকি অপরিসীম। তাই তো বিশ্বব্যাপী চলছে লবণ ব্যবহারের হার কমানোর প্রচারণা।
লবণ ব্যবহার নিয়ে কেন এত আলোচনা। এর কারণ হলো অতিরিক্ত লবণ খেলে শরীরে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া করে। অতিরিক্ত লবণ খেলে বাড়ে উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক এমনকি ক্যান্সারের ঝুঁঁকিও। মারাত্মক এ রোগগুলোতে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষ মারা যায়। গবেষকরা দেখেছেন, এ রোগগুলো প্রতিরোধ করার অন্যতম উপায়গুলোর একটি লবণ খাওয়া কমানো।
নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে বলা হয়েছে- প্রায় অর্ধেক আমেরিকান মাত্রা তুলনায় বেশি লবণ খায়। এ গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রায় ৪৪ হাজার মৃত্যুরোধ করা সম্ভব শুধু দিনে তিন গ্রাম লবণ কম খেয়ে। আমেরিকান মৃত্যু সংক্রান্ত ডাটা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, যারা বেশি পরিমাণে লবণ খেয়েছে তারা তাড়াতাড়ি মৃত্যুর মুখে পতিত হয়েছে। আমেরিকার তৃতীয় ন্যাশনাল হেলথ অ্যান্ড নিউট্রিশন একজামিনেশন সার্ভেতে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক অংশগ্রহণ করেন। এতে দেখা যায়- প্রতি এক গ্রাম লবণ খাওয়া বাড়ানোর কারণে ২০ শতাংশ মৃত্যুঝুঁঁকি বাড়ে।
অন্যদিকে ইংল্যান্ডে ২০০৬ সাল থেকে লবণের ব্যবহার কমানোর জন্য প্রচারণা চলছে। সেখানের বেশ কয়েকটি গবেষণা থেকে জানা গেছে- লবণ ব্যবহার কমানোর মাধ্যমে ৪০ শতাংশ মৃত্যুরোধ করা সম্ভব।
লবণ ব্যবহার কমানোর মাধ্যমে স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের হারও কমানো সম্ভব। ইনস্টিটিউট অব প্রিভেনটিভ মেডিসিন ৩২ হাজার ব্রিটিশেরও একটি গবেষণা পরিচালনা করে। তারা ১০ বছর ধরে তাদের ফলোআপ করে। ফলাফল দেখা যায়, এদের মধ্যে যারা লবণ কম খেয়েছেন তাদের স্ট্রোকে আক্রান্তের হার ৪২ শতাংশ কম ও হার্ট অ্যাটাকের হার ৪০ শতাংশ। লবণ বেশি খেলে উচ্চ রক্তচাপও বাড়ে। গবেষকরা দেখেছেন, দিনে এক গ্রাম লবণ কম খেলে রক্তচাপ পাঁচ মিলিমিটার মার্কারি কমে।
লবণ বেশি পরিমাণে খেলে স্টমাক বা পাকস্থলীর ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ে। এ হার প্রায় দ্বিগুণ। জাপানিরা সরচেয়ে বেশি লবণ খায়। প্রায় ৪০ হাজার জাপানিকে নিয়ে ১১ বছর ধরে পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে- যারা দিনে ১২-১৫ গ্রাম লবণ খেয়েছেন তাদের মধ্যে পাকস্থলী ক্যান্সারের হার অনেক বেশি। ব্রিটিশ জার্নাল অব ক্যান্সারে এ প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
প্রায় ৭০ শতাংশ ব্রিটিশ লবণ বেশি পরিমাণে খায়। আমাদের দেশে এ হার কত বেশি তা সহজেই অনুমেয়। কাজেই লবণের ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে লবণ খাওয়ার পরিমাণ কমাতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, দিনে ছয় গ্রাম লবণ খাওয়া যেতে পারে। এক চা-চামচ পরিমাণ খেলে স্বাস্থ্যঝুঁঁকি থাকে না। এ ছয় গ্রাম কিন্তু সারা দিনের জন্য। তরকারি, সালাদ সব খাবার মিলিয়ে এক চা-চামচ লবণের বেশি নয়।
লবণ বেশি পরিমাণে থাকে প্রিজার্ভড খাবার, বোতলজাত খাবার, স্যুপ, বোতলজাত জুস, ফাস্টফুড, চিজ, ব্রেড, চাইনিজ খাবার। এ খাবারগুলো খাওয়া কমিয়ে দিন। কোনো খাবার খাওয়ার আগে মোড়কে দেখে নিন কী পরিমাণ লবণ আছে। প্রাকৃতিক খাবার বেশি পরিমাণে খান। খাওয়ার সময় অনেকে অতিরিক্ত লবণ খান। এটি একেবারেই পরিহার করুন। লবণ খাওয়া বাদ দিলেও কিন্তু বিপদ। কারণ শরীরের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান এ লবণ। তাই লবণ খাওয়া হোক পরিমিত, নয় অতিরিক্ত।
লেখক : কনসালটেন্ট, আহছানিয়া ক্যান্সার হাসপাতাল ও জেনারেল হাসপাতাল, উত্তরা
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা