২৭ অক্টোবর ২০২৪, ১১ কার্তিক ১৪৩১, ২৩ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

গিটে বাত ও প্রতিকার

-


ওসটিওআর্থ্রাইটিস বা গিটে বাত শরীরের যেকোনো জোড়ায় হতে পারে। তবে ওজন বহনকারী বড় জোড়ায় বেশি হয়। হাত ও পায়ের আঙুলের জোড়া, মেরুদণ্ডের জোড়া এবং হাঁটু ও কটির জোড়ায় বেশি হয়। ওসটিওআর্থ্রাইটিস এমন একটি রোগ যেখানে জোড়ার তরুণাস্থি ও হাড়ের ক্ষয় হয় বেশি কিন্তু প্রদাহ হয় কিঞ্চিত। একে স্বাভাবিক বাংলায় গিটে বাত বলে। ওসটিওআর্থ্রাইটিস শুধু তরুণাস্থি ও হাড়ের ক্ষয় করে না এটি জোড়ার লাইনিং (সাইনোভিয়াম), জোড়ার কভার (ক্যাপসুল) ও জোড়ার পেশিকে আক্রান্ত করে। গিটে বাত হলে জোড়া মসৃণ ও লুব্রিকেন্ট থাকে না এবং তরুণাস্থি ও তরুণাস্থির নিচের হাড় ক্ষয় হতে থাকে। জোড়ার পেশির খিঁচুনি হয় ও পেশি শুকিয়ে যায় এবং লিগামেন্ট লাক্সিটি হয়। ফলে জোড়া আনস্ট্যাবল হয়। মধ্য বয়সী ও বয়স্কদের ওসটিওআর্থ্রাইটিস বা গিটে বাত হয়। ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে এক-তৃতীয়াংশ লোক এবং ৭০ বছরের ঊর্ধ্বে ৭০ শতাংশ লোক ওসটিওআর্থ্রাইটিস বা গিটে বাতে ভুগে। ৫০ বছরের আগে মহিলাদের তুলনায় পুরুষরা এবং ৫০ বছরের পর পুরুষদের তুলনায় মহিলারা গিটে বাত বা ওসটিওআর্থ্রাইটিসে বেশি ভুগে।
কারণসমূহ :
ষ জেনেটিক (বংশগত)।
ষ ওবেসিটি (অতিরিক্ত ওজন)।
ষ গ্রন্থি সমস্যা-ডায়াবেটিস, এক্রোমেগালি এবং হাইপো ও হাইপারথাইরোডিজম।
ষ আর্থ্রাইটিস-সেপটিক, রিউমাটয়েড ও গাউটি আর্থ্রাইটিস।
ষ মেটাবোলিক (বিপাকীয়)-পেজেটস ও উইলসন ডিজিজ।
ষ জন্মগত বা অস্বাভাবিক হাড়ের বৃদ্ধি।
ষ স্নায়ু রোগ।
ষ আঘাতের কারণে জোড়া ডিসপ্লেসমেন্ট, হাড় ফ্র্যাক্সার, লিগামেন্ট ও তরুণাস্থি ইনজুরি হলে অল্প বয়সে গিটে বাত শুরু হয়।

লক্ষণসমূহ :
কটির জোড়া :
ষ কটির জোড়ায় ওসটিওআর্থ্রাইটিস বা গিটে বাত হলে কুঁচকি, নিতম্ব, উরুর ভেতর পাশে এবং এমনকি হাঁটুতে ব্যথা হয়।
ষ জোড়া জমে যাওয়ার জন্য পায়ে মোজা পরতে অসুবিধা হয়।
ষ বিভিন্ন মুভমেন্ট সীমিত হয়।
ষ খুঁড়িয়ে হাঁটতে হয়।
ষ রাতে এবং বিশ্রামে ব্যথা হলে বুঝতে হবে রোগ গুরুতর।
ঘাড় ও কোমর :
ষ মেরুদণ্ডের মধ্যে ঘাড়ের নিচের দিকের এবং কোমরের হাড়ে (কশেরুকা) ওসটিওআর্থ্রাইটিস হয়।
ষ ঘাড়, বাহু, হাত, কোমর, লেগ ও পায়ে ব্যথা হয় এবং দুর্বলতা ও অবস ভাব হতে পারে।
হাঁটু :
ষ ফুলা ও ব্যথার জন্য হাঁটুর মুভমেন্ট করা যায় না।
ষ মুভমেন্টের সময় ক্র্যাকিং (ক্রিপিটাস) শব্দ শুনতে বা বুঝতে পারা যাবে।
ষ রোগী বেশিক্ষণ বসলে হাঁটু সোজা করতে কষ্ট হয়।
ষ অনেক সময় হাঁটু আটকিয়ে যায়, রোগী হাঁটুকে বিভিন্ন মুভমেন্ট করিয়ে সোজা করে।
ষ হাঁটুর পেশি শুকিয়ে যায় এবং হাঁটুতে শক্তি কমে যায়।
ষ উঁচু-নিচু জায়গায় হাঁটা যায় না, সিঁড়ি দিয়ে উঠানামা করতে এবং বসলে উঠতে কষ্ট হয়।
ষ হাঁটু ইনসিকিউর বা আনস্ট্যাবল মনে হবেÑ দাঁড়াতে বা হাঁটতে চেষ্টা করলে মনে হবে হাঁটু ছুটে যাচ্ছে বা বেঁকে যাচ্ছে।
আঙুল :
ষ হাতের আঙুলের শেষের (ডিসটাল) জোড়ায় ব্যথা হয়।
ষ জোড়া জমে যায়।
ষ নতুন হাড় (হেবেরডেন নোডস) হয়ে জোড়া ফুলে যায়।

ল্যাবরেটরি পরীক্ষা :
ষ রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা।
ষ এক্স-রে : জয়েন্ট স্পেস কম, তরুণাস্থির নিচে হাড়ের মধ্যে সিস্ট ও ওসটিওফাইট (নতুন হাড়)।
ষ এমআরআই।

চিকিৎসা বা প্রতিকার :
ষ চিকিৎসার শুরুতেই ওসটিওআর্থ্রাইটিস বা গিটে বাতের কারণ এবং রোগের তীব্রতা নির্ণয় করা একান্ত প্রয়োজন। এ রোগ একবার শুরু হলে প্রকৃতির নিয়মে বাড়তে থাকে। তবে দৈনন্দিন জীবনব্যবস্থা পরিবর্তন ও সুষ্ঠু কিছু নিয়মের মাধ্যমে ওসটিওআর্থ্রাইটিসের তীব্রতা নিয়ন্ত্রণ এবং উপসর্গ লাঘব করা যায়।
কনজারভেটিভ বা মেডিক্যাল ব্যবস্থা
ষ ওবেসিটি বা অতিরিক্ত ওজন কমাতে হবে। ফল, শাকসবজি, কম ক্যালোরি, কম সুগার ও কম চর্বিযুক্ত খাবার, শিম, মটরশুঁটি, চর্বিবিহীন গোশত, বাদাম ও অক্ষত খাদ্যশস্য ইত্যাদি খেতে হবে।
ষ স্ট্রেসিং ও পেশি শক্তিশালী হওয়ার ব্যায়াম জোড়ার মুভমেন্ট বজায় রাখে এবং জোড়া জমে যাওয়া লাঘব করে। ভুল ব্যায়াম জোড়ার ক্ষতি করে এবং রোগকে অতিরঞ্জিত করে। জোড়ার চারপাশের পেশি ও টিসু সঙ্কুুচিত হলে স্বাভাবিক মুভমেন্ট পুনরুদ্ধার করা বড়ই কঠিন।
ষ ওয়াকিং স্টিক, উঁচু চেয়ার, ব্রেচ বা হাঁটু সাপোর্ট ও কুশন যুক্ত জুতা ব্যবহার করলে কোমর, কটি ও হাঁটুর ব্যথা কম হবে।
ষ গরম ও ঠাণ্ডা সেক ব্যবহারে পেশির সঙ্কোচন কমবে, রক্ত চলাচল বাড়বে এবং ব্যথা কমবে।
ষ বেদনানাশক ওষুধ সেবন।
ষ কনড্রিওটিন সালফট/ক্লোরাইড সেবনে তরুণাস্থি ক্ষয় নিবারণ হবে।
ষ ভিটামিন সি, ই ও ডি এবং ক্যালসিয়াম নিয়মিত সেবনে রোগের তীব্রতা কমে আসবে।
ষ ফিজিক্যাল থেরাপি-এসডব্লিউডি, ইউএসটি ও টিইএনএস ব্যবহারে পেশির সঙ্কোচন, জমে যাওয়া ও ব্যথা উপশম হবে।
ষ ইনজেকশন-স্টেরয়েড ও হায়ালুরোনিক এসিড জয়েন্টে পুশ করলে রোগের উপসর্গ সাময়িক উপশম হবে। ইনজেকশন এক বছরে তিন বা চারের অধিকবার দেয়া নিষেধ।

সার্জিক্যাল পদ্ধতি : কনজারভেটিভ চিকিৎসায় ভালো না হলে সার্জিক্যাল চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবেÑ
ষ আর্থ্রোস্কোপিক জয়েন্ট ল্যাভেজ।
ষ আর্থ্রোস্কোপিক ডেব্রাইডমেন্ট।
ষ রোটেশনাল ওসটিওটোমি।
ষ জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট।
ষ আর্থ্রোস্কোপিক বা জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট চিকিৎসায় রোগের উপসর্গ দ্রুত উপশম হবে।

লেখক : ফেলোÑ ট্রমা ও স্পোর্টস সার্জারি- ভারত
ফেলো- আর্থ্রােস্কোপি ও জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট- ফ্রান্স
কনসালটেন্ট- হাড় , জোড়া, ট্রমা ও আর্থ্রােস্কোপিক সার্জারি
ডিজিল্যাব মেডিক্যাল সার্ভিসেস (ইনডোর
স্টেডিয়ামের সামনে), মিরপুর, ঢাকা


আরো সংবাদ



premium cement
আমার উপদেষ্টা হওয়ার পেছনে নয়া দিগন্তের অবদান আছে : আ ফ ম খালিদ হোসেন সৈয়দপুরে নয়া দিগন্তের ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত চুয়াডাঙ্গায় ট্রাকে চাকায় পিষ্ট হয়ে কলেজছাত্র নিহত জমজমাট অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নয়া দিগন্তের ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী শুরু জামায়াতের হিন্দু শাখা নয়, অমুসলিম নাগরিক সেবা কমিটি গঠন রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে কোনো হটকারি সিদ্ধান্ত না নেয়ার আহ্বান মির্জা ফখরুলের সাবেক ডিএমপি কমিশনার ফারুককে বিমানবন্দরে আটকে দিলো পুলিশ ছাত্র-জনতা উপর গুলি : আজমেরী ওসমানের ক্যাডার শিপলু গ্রেফতার ইসরাইলের হামলায় ক্ষয়ক্ষতির যে তথ্য দিলো ইরান রিমান্ড শেষে কারাগারে ব্যারিস্টার সুমন মোহাম্মদপুরে যৌথবাহিনীর অভিযানে গ্রেফতার ৪৫

সকল