২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ব্যবহৃত মাস্ক-গ্লাভস যেখানে-সেখানে ফেলে যে ক্ষতি করছেন

ব্যবহৃত মাস্ক-গ্লাভস যেখানে-সেখানে ফেলে যে ক্ষতি করছেন - সংগৃহীত

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তি শনাক্ত হওয়ার পর থেকে তিন মাস হয়েছে। এই পুরো সময়ে মানুষজনকে নানা ধরনের অভ্যাস করতে হয়েছে।

তার একটি হল সুরক্ষা সামগ্রীর ব্যবহার। রাস্তায় বের হলেই দেখা যায় চারিদিকে প্রায় সবাই সার্জিক্যাল মাস্ক, পলিথিনের হ্যান্ড গ্লাভস, সার্জিক্যাল হ্যান্ড গ্লাভস, ফেস-শিল্ড, সার্জিক্যাল ক্যাপ, পিপিই এগুলো পরে আছেন।

সবাই এর সবগুলো না পরলেও অন্তত মাস্ক ও গ্লাভস পরতে দেখা যাচ্ছে। কয়েকটি ছাড়া এসব সামগ্রীর বেশিরভাগই একবার ব্যবহারযোগ্য।

এসব সামগ্রী ব্যাবহারের পর কিভাবে ফেলা উচিৎ তার নিয়ম আছে যা মেনে চলার উপরেও করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষা নির্ভর করে।

যত্রতত্র সুরক্ষা সামগ্রী ফেলার ঝুঁকি
বাংলাদেশ হেলথ সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের এপিডমলজির শিক্ষক মোসাম্মাত নাদিরা পারভীন।

তিনি বলছেন, "অনেক মাস্ক ও গ্লাভস রাস্তায় পরে থাকতে দেখছি। হয়ত অনেকে ভাবছেন বাড়িতে ঢোকার আগে এগুলো ফেলে দিয়ে যাই। পরিবারের লোকদের কথা ভাবেন। চারপাশে সাধারণ মানুষ যখন এসব সুরক্ষা সামগ্রী প্রতিদিন ব্যবহারের পর ফেলে দিচ্ছেন তারা সেগুলো জীবাণুমুক্ত করেন না। সাধারণ বর্জ্যের মতোই ফেলে দেন। কিন্তু এটা খুবই ভুল হচ্ছে।"

তিনি বলছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাতাসে ছড়াতে পারে তাই ব্যবহৃত সুরক্ষা সামগ্রী সঠিকভাবে ফেলা দরকার।

কাপড়, প্লাস্টিক ইত্যাদি নানা ধরনের সামগ্রীর উপর করোনাভাইরাস বিভিন্ন মেয়াদে বেঁচে থাকতে পারে।

বিশেষ করে প্লাস্টিকে এর স্থায়িত্বকাল ২৪ ঘণ্টা বা তারও বেশি। যদিও এই মেয়াদ নিয়ে গবেষকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এএসএম আলমগীর বলছেন, "গ্লাভস হাতে দিয়ে অনেকে ভাবে আমিতো গ্লাভস পরে আছি। কিন্তু সে হাত দিয়ে যেভাবে সবধরনের জিনিস ধরেন, মুখ স্পর্শ করেন তেমনি গ্লাভস পরা অবস্থাতেও সেটি করছেন। তারপর রাস্তাঘাটে মাস্ক বা গ্লাভস ফেলে দিচ্ছেন। অনেক ব্যক্তির করোনা সংক্রমণ থাকলেও কোন লক্ষণ থাকে না। সুরক্ষা বর্জ্য সঠিকভাবে না ফেলা মানে আমরা নিজেরাই একে অপরের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছি।"

মোসাম্মাত নাদিরা পারভীন আরো উল্লেখ করলেন, পরিবেশের ক্ষতির কথা। সম্প্রতি এনভায়রনমেন্ট এন্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন নামের একটি সংস্থা এক গবেষণার পর বলছে, ঢাকা শহরে ব্যাপকভাবে প্লাস্টিক বর্জ্য বৃদ্ধি পেয়েছে।

তাদের গবেষণায় দেখা গেছে ২৬ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ প্লাস্টিক বর্জ্য বৃদ্ধি পেয়েছে ১৪ হাজার ৫০০ টন। যার বেশিরভাগই করোনাভাইরাস সুরক্ষা সামগ্রী।

যেভাবে এসব সুরক্ষা সামগ্রী ফেলতে হবে
এএসএম আলমগীর বলছেন, সাধারণ মানুষ যেভাবে গ্লাভস, মাস্ক বাড়ির অন্যান্য আবর্জনার সাথে ফেলছেন বা রাস্তায় ফেলে দিচ্ছেন সেটা খুবই অবৈজ্ঞানিক।

তিনি বলছেন তারা নিজেরা যখন ল্যাবে কাজ করেন কিছুক্ষণ পরপর অ্যালকোহল দিয়ে গ্লাভস পরিষ্কার করেন যাতে কোন ধরনের জীবাণু না থাকে।

তিনি বলছেন, "যেহেতু বোঝার উপায় নেই কোন বাড়িতে কারো করোনাভাইরাস আছে কিনা তাই এসব সামগ্রী জীবাণুমুক্ত করে তারপর ব্যাগে ভরে ব্যাগের মুখ বন্ধ করে তারপর ফেলা উচিৎ।"

বাংলাদেশে প্রচুর মানুষ বর্জ্য থেকে পুনঃব্যবহার জন্য নানা সামগ্রী সংগ্রহ করেন। বর্জ্যের স্তূপ থেকে ব্যবহৃত পিপিই, মাস্ক ও গ্লাভস সংগ্রহ করছেন তারা, স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে এমন ছবি ছাপা হয়েছে।

বিশেষ করে পিপিই'র প্রতি তাদের বেশি আগ্রহ। মোসাম্মাত নাদিরা পারভীন ফেলে দেয়া সুরক্ষা সামগ্রী পরিষ্কার করে আবার বাজারে বিক্রি করার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে গ্লাভস পরিষ্কার করা সহজ।

তিনি পরামর্শ দিচ্ছেন, "গ্লাভস জীবাণুমুক্ত করার পর তা উল্টো করে খোলা উচিৎ। এরপর গ্লাভসগুলোকে যদি একটু কাঁচি দিয়ে কেটে দেয়া যায়, মাস্ক একটু আগুনে পুড়িয়ে ফেলা যায় তাহলে তা রিসাইকেল করে বিক্রি করা সম্ভব হবে না। কেউ যদি পিপিই বা সার্জিক্যাল ক্যাপ ব্যবহার করেন সেক্ষেত্রেও একই কাজ করা উচিৎ।"

এএসএম আলমগীর ব্যবহৃত সুরক্ষাসামগ্রী আলাদা ব্যাগে ভরার কথা বলছেন। এতে করে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা তা আলাদা করে চিহ্নিত করতে পারবে।

তিনি বলছেন, "বাড়িঘরে উৎপাদিত বর্জ্য ফেলতে প্রতিদিন নতুন ময়লার ব্যাগ ব্যবহার করা উচিৎ। বালতিতে রেখে সেটি ময়লার ভ্যানে তুলে না দিয়ে ব্যাগে ভরে, ব্যাগের মুখ গিট দিয়ে তবেই পাড়ার বর্জ্য সংগ্রহকারীকে দেয়া উচিৎ।"

বর্জ্য বিষয়ে সরকারি নির্দেশনা আসছে
করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর হাসপাতাল বর্জ্য কিভাবে ব্যবস্থাপনা হবে সেনিয়ে নির্দেশনা দেয়া হলেও আবাসিক ভবনে তৈরি বর্জ্য কিভাবে ফেলা হবে সেনিয়ে কোন নির্দেশনা দেয়া হয়নি।

তবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোঃ বদরুল আমিন বলছেন, নতুন যে জোনভিত্তিক লকডাউন ব্যবস্থা শুরু হবে তখন বর্জ্য বিষয়ে সরকারি নির্দেশনা থাকবে।

তিনি বলছেন, "বাসাবাড়ি থেকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ব্যবহৃত হচ্ছে এই সংক্রান্ত সকল সামগ্রী আলাদা করে প্যাকেট করে দেবেন। করোনা থাকুক বা না থাকুক। ব্যক্তি পর্যায়ে এইটুকু তাদের করতে হবে। প্রতিটা ওয়ার্ডে আলাদা কন্টেইনার ডেজিগনেট করে দেয়া হবে। যারা বাড়ি থেকে ওয়েস্ট কালেক্ট (বর্জ্য সংগ্রহ) করছেন তারা প্যাকেটগুলো সেখানে রাখবেন। সেগুলো নিয়ে আমাদের ল্যান্ডফিলে পুড়িয়ে ফেলা হবে।"

তিনি বলছেন, তারা এই বিষয়ে লিফলেট বিলি ও মাইকিং করবেন। লকডাউন এলাকাতে এর থেকে বাড়তি কিছু করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন তিনি।

তিনি বলছেন, "তবে যারা আবর্জনা সংগ্রহ করবেন তারা সুরক্ষার জন্য স্বাস্থ্যবিধি যতটুকু সম্ভব মেনে, সুরক্ষা সামগ্রী পরে সকল ব্যবস্থা নিয়েই আবর্জনা সংগ্রহ ও বাকি কাজগুলো করবেন।"
সূত্র : বিবিসি

 


আরো সংবাদ



premium cement
ইসরাইলে হামলা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইরাকি মিলিশিয়ারা সাভারে প্রশাসনের আশ্বাসে সাড়ে ৩ ঘণ্টা পর যান-চলাচল স্বাভাবিক নিয়োগে দুর্নীতি : লিয়াকত আলী লাকীসহ ২৪ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা হাসিনা ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন : সপু রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের সাথে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ দোহারে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু নিখোঁজের ৮ দিন পর পুকুর থেকে বৃদ্ধার ভাসমান লাশ উদ্ধার দেশে প্রথমবার পুরানো ল্যাপটপে ৫০ দিনের রিপ্লেসমেন্ট গ্যারান্টি মুন্সীগঞ্জে বিনামূল্যে চোখের চিকিৎসা ও লেন্স সংযোজন সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা সিরিয়ার পাশে থাকবে তুরস্ক : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিদান

সকল