২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২ কার্তিক ১৪৩১, ২৪ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

অণ্ডকোষে ব্যথা

-

অণ্ডকোষে ব্যথা হলে কিংবা অণ্ডথলির (যে থলির মধ্যে অণ্ডকোষ থাকে) এক পাশে বা দুই পাশে ব্যথা হলে সেটাকে
অবশ্যই গুরুত্বের সাথে নিতে হবে। যেকোনো বয়সের পুরুষের, এমনকি নবজাতকেরও অণ্ডথলিতে ব্যথা করতে পারে। অণ্ডকোষ হলো পুরুষদের প্রজনন অঙ্গ। শরীরে দু’টি অণ্ডকোষ থাকে। এই অঙ্গ বা গ্রন্থিগুলো খুবই সংবেদনশীল।
খুব সামান্য আঘাতেও ব্যথা হতে পারে। লিখেছেনডা: মিজানুর রহমান কল্লোল

অণ্ডকোষ বা অণ্ডথলিতে যেকোনো ধরনের ব্যথা হলেই চিকিৎসাগত সতর্কতা অবল ম্বন করা প্রয়োজন।

অণ্ডকোষ বা অণ্ডথলিতে ব্যথা হঠাৎ করে হতে পারে অথবা তীব্র হতে পারে। এ ব্যথা আঘাতের কারণে হতে পারে, ব্যথার সাথে অণ্ডকোষ ফুলে যেতে পারে। রোগীর বমি বমি ভাব কিংবা বমি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
অণ্ডথলিতে ব্যথার সাথে রোগীর অণ্ডথলিতে চাকা, জ্বর, অণ্ডথলির ত্বক লাল, প্রস্রাবে রক্ত, মূত্রনালীপথে অস্বাভাবিক নিঃসরণ, গলা ফুলে যাওয়া প্রভৃতি উপসর্গ থাকলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। যদি সময়মতো চিকিৎসা করা না হয় তাহলে বন্ধ্যত্ব ও পুরুষত্বহীনতা ঘটতে পারে। রোগীর তীব্র বা দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা থাকবে। অনেক সময় অপারেশন করে অণ্ডকোষ ফেলে দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে অণ্ডকোষের ব্যথার উৎস অণ্ডকোষ নয়, ব্যথা শুরু হয় অণ্ডথলিতে। অণ্ডকোষের কাজ হলো শুক্রাণু তৈরি করা। তাই অণ্ডকোষকে সুস্থ রাখা অপরিহার্য। প্রতিটি অণ্ডকোষের ওপরে থাকে এপিডিডাইমিস। এই এপিডিডাইমিসে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ হয়। অণ্ডথলি হচ্ছে এমন একটি থলি যা অণ্ডকোষ ও এপিডিডাইমিসকে সুরক্ষা দেয়।
অণ্ডকোষে ব্যথার কারণ
অণ্ডকোষ কিংবা অণ্ডথলির ব্যথার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে :
সংক্রমণ বা প্রদাহ
অণ্ডকোষের প্রদাহ বা সংক্রমণের সাথে সবচেয়ে যে সাধারণ অবস্থাটি সম্পৃক্ত তা হলো এপিডিডাইমাইটিস। এপিডিডাইমাইটিস হলো একটি বা দু’টি এপিডিডাইমিসের প্রদাহ। এপিডিডাইমিসে সংক্রমণ হলে সেই সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে অণ্ডকোষে। এটা যেকোনো বয়সে হতে পারে এবং হঠাৎ করে হতে পারে।
সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ হয় তরুণ ও যুবকদের। এ সংক্রমণের প্রধান কারণ হলো যৌনবাহিত ব্যাকটেরিয়া, বিশেষ করে ক্ল্যামাইডিয়া ও গনোরিয়া।
আঘাত
অণ্ডকোষের আঘাতজনিত ব্যথার সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো স্পোর্টস ইনজুরি বা খেলাধুলাজনিত আঘাত।
যদি আঘাত পাওয়ার পর ব্যথা এক ঘণ্টার বেশি স্থায়ী থাকে তাহলে জরুরি চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
আঘাত পাওয়ার পর একটা চাকা দেখা দিতে পারে। আবার না-ও পারে। আঘাত পাওয়ার পর অবশ্যই অণ্ডকোষ পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
অণ্ডকোষে টরসন বা প্যাঁচ খাওয়া
অণ্ডকোষে প্যাঁচ খাওয়া একটি জরুরি অবস্থা। এ ক্ষেত্রে অণ্ডকোষে রক্ত সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়। অণ্ডকোষে প্যাঁচ খেলে অণ্ডথলিতে ব্যথা করে ও ফুলে যায়। যদি ৫-৬ ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসা করা না হয় তাহলে আক্রান্ত অণ্ডকোষের টিস্যু মরে যেতে পারে। যদিও এ সমস্যা নবজাতক ও বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেদের (১৮ বছরের নিচে) বেশি হয়। তবে এটা যেকোনো বয়সে হতে পারে।
অণ্ডকোষের উপাঙ্গে প্যাঁচ খেলেও অণ্ডকোষে প্যাঁচ খাওয়ার মতো একই অনুভূতি হতে পারে। অণ্ডকোষে প্যাঁচ খেলে জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন হয়, কিন্তু অণ্ডকোষের উপাঙ্গে প্যাঁচ খেলে সেটা জরুরি অবস্থা নয়। কোনো জটিলতা ছাড়াই ব্যথা সাধারণত এক সপ্তাহ স্থায়ী থাকে।
অন্য যেসব কারণে অণ্ডথলিতে ব্যথা হয়
অণ্ডকোষে টিউমার
অণ্ডকোষের টিউমারগুলো সাধারণত ব্যথা ঘটায় না, তবে এটা সম্ভব। যেহেতু অণ্ডকোষের ব্যথা অল্পবয়সী পুরুষদের (১৮ থেকে ৩২ বছর বয়সের মধ্যে) বেশি হয় তাই অণ্ডকোষে কোনো চাকা বা দলা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ইনগুইনাল হার্নিয়া
এ ক্ষেত্রে অন্ত্রের কিছু অংশ কুঁচকির মাঝামাঝি এক-দুই ইঞ্চি ওপরে চলে আসে। কুঁচকির ওপরটা গোল হয়ে ফুলে ওঠে, মাঝে মাঝে শক্ত হয় ও ব্যথা হয়। কিছু দিন পর গোলাকার ফোলাটি অণ্ডথলিতে নেমে আসে। হার্নিয়া চিকিৎসা করা না হলে মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। অপারেশনের মাধ্যমে হার্নিয়ার চিকিৎসা করা হয়।
পুডেনডাল নার্ভের ক্ষতি
পুডেনডাল নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হলে অসাড় অনুভূতি কিংবা ব্যথা হতে পারে। যারা অতিরিক্ত বাইসাইকেল চালান, চাপের কারণে তাদের পুডেনডাল নার্ভ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পুডেনডাল নার্ভ যৌনাঙ্গ, মূত্রনালী, মলদ্বার এবং অণ্ডথলি ও মলদ্বারের মধ্যবর্তী অংশে অনুভূতি জোগায়। তাই এসবের যেকোনো স্থানে ব্যথা হতে পারে।
শল্য চিকিৎসা
তলপেটের যেকোনো অপারেশনের কারণে (যেমন হার্নিয়া রিপেয়ার ও ভ্যাসেকটমি) অণ্ডকোষে সাময়িক ব্যথা হতে পারে ও অণ্ডকোষ ফুলে যেতে পারে। অপারেশনের পরে এ ধরনের কোনো ব্যথা হলে সাথে সাথে চিকিৎসককে অবহিত করবেন। ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হলে কিংবা বারবার ব্যথা হলে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
কিডনিতে পাথর
কিডনিতে পাথরের কারণে সাধারণত পেটে ব্যথা হয়। তবে ব্যথা অণ্ডকোষে ছড়িয়ে পড়তে পারে। যদি অণ্ডথলিতে তীব্র ব্যথা হয় এবং হঠাৎ করে ব্যথা হয় তাহলে ভালো করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে ব্যথার উৎস কিডনিতে পাথর কি না।
ফোলা ও অস্বস্তি
অণ্ডথলিতে বিভিন্ন কারণে ফোলা থেকে অস্বস্তি হতে পারে। এসব কারণের মধ্যে রয়েছে ভ্যারিকোসিল, হাইড্রোসিল ও স্পারম্যাটোসিল। যদি হাইড্রোসিল (অণ্ডকোষের দুই আবরণের মধ্যে অস্বাভাবিক পানি জমা) সংক্রমিত হয় তাহলে সেখান থেকে এপিডিডাইমিসের প্রদাহ হতে পারে এবং এর ফলে অণ্ডকোষে ব্যথা হতে পারে।
পুরুষাঙ্গ শক্ত হওয়া
যদি পুরুষাঙ্গ শক্ত হয়ে ওঠে, কিন্তু বীর্যপাত না ঘটে তাহলে কখনো কখনো অণ্ডকোষে ভোঁতা ধরনের ব্যথা হতে পারে। সাধারণত কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কিংবা বীর্যপাত ঘটালে ব্যথা চলে যায়।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, অর্থোপেডিকস ও ট্রমা বিভাগ, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল।
চেম্বার-১ : পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লি., ২ ইংলিশ রোড, ঢাকা।
ফোন: ০৯৬১৩৭৮৭৮০২
চেম্বার-২ : আজগর আলী হসপিটাল, ১১১/১/এ ডিস্টিলারি রোড, গেন্ডারিয়া, ঢাকা।
ফোন : ০১৭৮৭৬৮৩৩৩৩, ১০৬০২


আরো সংবাদ



premium cement
পাকিস্তানের নতুন অধিনায়ক রিজওয়ান, সাথে আছেন আগা সালমান ইউএস-বাংলার ফ্লাইটে মিলল ৭ কেজি স্বর্ণ কমলাপুরের ডিসপ্লে বোর্ডে ‘আওয়ামী লীগ জিন্দাবাদ’ স্ক্রল : ব্যবস্থা নিতে তদন্ত কমিটি সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর ভাই গ্রেফতার সাবেক ডিএমপি কমিশনারকে বিমানবন্দরে আটকে দিলো পুলিশ নিম্ন আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা কেন অবৈধ নয় : হাইকোর্ট সাংবিধানিক সঙ্কট সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে : সালাহউদ্দীন আহমেদ খিলগাঁওয়ে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ আটক ২ ছাত্রলীগের শামসুন্নাহার হলের ঊর্মি ও সূর্যসেন হলের রাকিব গ্রেফতার গোয়ালন্দে যুবদলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত শিবচরে যুবদ‌লের প্রতিষ্ঠাবা‌র্ষিকী পালিত

সকল