২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২ কার্তিক ১৪৩১, ২৪ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

অনিয়মিত মাসিক যখন সমস্যা

-


হেনার বয়স ২০। কলেজছাত্রী। দুই বছর ধরে মাসিকের সমস্যায় ভুগছেন। দু-তিন মাস পার হয়ে যায়, মাসিক হয় না। এরপর মাসিক হলেও পরিমাণে খুবই কম। কোনো মাসে আবার পরিমাণ ঠিকই থাকে, কিন্তু ১০ দিন পার হয়ে যায়, মাসিক ভালো হয় না। বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয় হেনাকে। মাঝে মধ্যে তলপেট ব্যথা করে। মাসিকের এই সমস্যার সাথে মাঝে মধ্যে রক্তক্ষরণও হয়। চাকা চাকা রক্ত পড়ে। দু-একবার ডাক্তারের কাছেও গেছেন। ডাক্তার ওষুধ দিয়েছিলেন। বলেছিলেন তলপেটে আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে, আজকাল ভেবে আর করা হয়ে ওঠেনি। এর সাথে যোগ হয়েছে নতুন সমস্যা। শরীরের ওজন কেন জানি বেড়ে যাচ্ছে। হেনা খাওয়া-দাওয়া কখনোই বাড়ায়নি। কিন্তু তারপরও ওজন বেড়েছে প্রায় পাঁচ কেজি। মুখে দু-একটা করে ব্রণও উঠেছে। মাথার চুল পড়ছে। শরীরও মাঝে মধ্যে দুর্বল লাগে। কোনো কিছুতে মনোযোগ দিতে গেলে কষ্ট হয়। হেনা যে মাসিকের সমস্যায় ভুগছেনÑ এ রকম অনেকেই আছেন। কারো কারো মাসিক তিন-চার মাস অন্তর হয়। তাও পরিমাণে কম। কোনো রোগীর ওষুধ না খেলে মাসিকই হয় না। এ তো গেল এক রকম সমস্যা। অনেক রোগী বলেনÑ স্যার, মাসের মধ্যে দু-তিনবার অল্প অল্প রক্ত দেখি। মাঝখানে মাত্র সাত-আট দিন ভালো থাকি। একবার মাসিক হলে আর ভালো হতে চায় না। অল্প অল্প রক্ত যেতেই থাকে। সাথে কেউ কেউ তলপেটে ব্যথার কথা বলেন। কেউ বলেন, সারা দিনে খুব অল্প পরিমাণে খাওয়া-দাওয়া করি। তারপরও ওজন বেড়ে যাচ্ছে। সুইটি নামে ২৪ বছরের এক রোগী জানালেন, তার এই সমস্যাগুলোর সাথে মুখে বাড়তি লোম খুব ঝামেলা করছে। ছেলেদের মতো কিছুটা দাড়ির মতো স্টাইলে ওপরের ঠোঁটে ও চিবুকে লোম গজাচ্ছে। বন্ধুরা হাসাহাসি করে। ক’দিন আর পার্লারে যাওয়া যায়? এ ধরনের রোগীরা যে রোগে সাধারণত আক্রান্ত তার নাম পলিসিস্টিস ওভারিয়ান সিনড্রোম। এই রোগে মেয়েদের মাসিকের সমস্যা দেখা দেয়। দীর্ঘ দিন পর মাসিক হওয়া একটি প্রধানতম কারণ। দু-তিন মাস পর মাসিক হয়, কোনো কোনো সময় আবার একবার মাসিক হলেও আর ভালো হতে চায় না। সাথে সাথে ওজন বাড়ার সমস্যা। ছেলেদের মতো লোম দেখা দেয়। মেয়েরা স্বাভাবিকই অস্বস্তি বোধ করে। এ রকম সমস্যায় ভুগলে চিকিৎসার প্রয়োজন। মাসিক নিয়মিত করতে হবে। এ জন্য নানা রকম ওষুধ আছে। বাড়তি ওজন কমানো খুবই জরুরি। খাদ্যের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। নিয়মিত ব্যায়ামের দরকার হতে পারে। বাড়তি পশমের জন্যও ওষুধ লাগতে পারে। এ জন্য স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তবে এ সমস্যার সমাধান হওয়া জরুরি। তা না হলে কারো স্থায়ীভাবে মাসিক বন্ধ হয়ে যায়। কারো আবার অল্প বয়সেই ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ কিংবা হার্টের অসুখ দেখা দেয়। এ জন্য চিকিৎসা এবং নিয়মিত চেকআপ খুবই প্রয়োজন। মাসিকের যেকোনো সমস্যা হোক না কেন, অবশ্যই সেটিকে গুরুত্ব দিতে হবে। সামান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। যেমনÑ তলপেটে আল্ট্রাসনোগ্রাম, রক্তের দু-একটা পরীক্ষা ইত্যাদি। মাঝে মধ্যে হরমোন পরীক্ষারও দরকার হতে পারে। তবে নিরাময় নির্ভর করবে আপনি কতটা সচেতন হয়েছেন তার ওপর। মোট কথা, এ ধরনের সমস্যা হলে এড়িয়ে যাবেন না।


আরো সংবাদ



premium cement