অস্টিওম্যালেসিয়া : কীভাবে বুঝবেন, কী করবেন?
- ডা: এম এ শাকুর
- ১৭ জানুয়ারি ২০১৯, ১২:৪২
অস্টিওম্যালেসিয়া বলতে মানব শরীরের হাড় নরম হওয়াকে বোঝায়। এর মূল কারণ হলো ভিটামিন-ডি’র স্বল্পতা। অর্থাৎ এ রোগটি ভিটামিন-ডি’র অভাবজনিত রোগ। ভিটামিন-ডি’র অভাবে শিশুদের যে রোগ হয় তাকে বলে রিকেট এবং এটা যখন বড়দের দেখা যায়, তখন একে বলে অস্টিওম্যালেসিয়া। ভিটামিন-ডি’র অভাবে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস ঠিকমতো শরীরের হাড় গঠন করতে পারে না। আর ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস হাড়ে কম থাকলে তা নরম হাড়ে পরিণত হয়।
কী কারণে রিকেট বা অস্টিওম্যালেসিয়া হয়?
ক) ভিটামিন-ডি’র অভাবে অস্টিওম্যালেসিয়া বা রিকেট হয়। এখন দেখা যাক, শরীরের ভিটামিন-ডি’র স্বল্পতা কেন ঘটে?
প্রধান কারণগুলো হলো খাদ্যে ভিটামিন-ডি না থাকা, শরীরের চামড়ায় নিয়মিত ভিটামিন-ডি তৈরি না হওয়া। অর্থাৎ রোদ না লাগা, কোনো কারণে অন্ত্র থেকে ভিটামিন-ডি শরীরে প্রবেশ না করা, যেমন- পাকস্থলীর অপারেশন, অন্ত্রের অপারেশন, যকৃতের অসুখ, সিলিয়াক ডিজিজ ইত্যাদি।
খ) শরীরের বিপাকক্রিয়ায় কোনো সমস্যা দেখা দিলে। যেমন- রেনাল ফেইলিউর, রেনাল অস্টিওডিস্টোপি ও কিছু ওষুধ যেমন- এন্টিকনভালসেন্ট, সিডেটিব বা ঘুমের ওষুধ এবং রিফামপিসিন সেবন করলে।
গ) রক্তে ফসফেটের পরিমাণ কমে গেলে।
এ রোগের লক্ষণগুলো হলো-
ষ শরীরের হাড়ের মধ্যে অস্বস্থি ভাব, পিঠে ব্যথা ও কোমরে ব্যথা।
ষ শরীরে মাংসপেশির দুর্বলতা, যা প্রায়ই দেখা যায়।
ষ রোগী সাধারণত উপরের দিকে উঠতে অর্থাৎ সিঁডি বেয়ে ওপরে উঠতে এবং চেয়ার থেকে উঠতে কষ্ট এবং দুর্বলতা অনুভব করে।
ষ কোনো কোনো সময় রোগী হাঁসের মতো থপ থপ করে হাঁটে।
ষ রোগীর খিঁচুনি দেখা দিতে পারে।
ষ মুখের মাংসপেশি রোগীর অজান্তেই নড়তে থাকে।
* কোনো আঘাত ছাড়াই শরীরে হাড় ভেঙে যায়।
ষ হাড়ের এক্স-রে করলে তা ক্ষয় হওয়া এবং ভাঙা মনে হয়।
ষ সাধারণত বুকের পাজরের হাড়, পায়ের ওপরের অংশের হাড় এবং শ্রোণিচক্রের হাড় বেশি আক্রান্ত হয়।
চিকিৎসা : এ রোগের চিকিৎসার জন্য প্রথমত এর কারণ বের করতে হবে এবং কারণ অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে। অস্টিওম্যালেসিয়া সাধারণত ভিটামিন-ডি কম গ্রহণ করার জন্য হয়। তাই চিকিৎসার ক্ষেত্রে খাদ্যে ভিটামিন-ডি গ্রহণ করার জন্য বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়ে থাকে। সাধারণত যে সব খাবার ভিটামিন-ডি’ সমৃদ্ধ সেসব খাবার গ্রহণ করতে বলা হয়। যেমন- দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য, চর্বিযুক্ত মাছ, ডিম ও যকৃত। ভিটামিন-ডি কে ‘সূর্য ভিটামনি’ নামে অভিহিত করা হয়। কারণ সূর্যরশ্মি শরীরের চামড়ায় পড়লে সেখানে ভিটামিন-ডি উৎপন্ন হয়। সুতরাং রোগীকে সকাল বেলার রোদে কিছুক্ষণ থাকতে বলা হয়। প্রতিদিন ২৫-১২৫ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন-ডি ওষুধ হিসেবে দেয়া যেতে পারে।
যদি রোগীর অন্ত্রে কোনো অসুবিধা থাকে যার জন্য শরীরে ভিটামিন-ডি শোষিত হয় না। সে ক্ষেত্রে প্রতি সপ্তাহে একটি ভিটামিন-ডি ইনজেকশন মাংসে নেয়ার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে। অস্টিওম্যালেসিয়া রোগ যদি কিডনির অসুবিধার জন্য হয়, তবে চিকিৎসা হিসেবে আলফা-ক্যালসিডল দেয়া যেতে পারে। এ রোগের প্রতিটি ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় রোগীকে ভিটামিন-ডি মেইনটেনেনস থেরাপি হিসেবে দেয়া যেতে পারে।
প্রতিকার : আমি আগেই বলেছি, ভিটামিন-ডি’র অপর নাম হলো ‘সূর্য ভিটামিন’। কারণ শরীরের চামড়ার সূর্যরশ্মি পড়লে সেখানে ভিটামিন-ডি উৎপন্ন হয়। তাই অস্টিওম্যালেসিয়া রোগ থেকে অথবা শিশুদের রিকেট থেকে বেঁচে থাকার সহজ উপায় হলো শরীরে রোদ লাগানো। শিশুদের নিয়মিত কিছুক্ষণের জন্য সূর্যের আলোতে রাখলে সহজেই রিকেট থেকে রক্ষা পায়। বড়দের জন্যও একই কথা, শরীরে সূর্যের আলো লাগানো সবার জন্যই দরকার। তা হলে সহজে অস্টিওম্যালেসিয়া থেকে দূরে থাকা সম্ভব। ধনী-গরিব সবাই অতি সহজে বিনা পয়সার এবং বিনা পরিশ্রমে সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন-ডি পেতে পারেন ও রিকেট বা অস্টিওম্যালেসিয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন।
ভিটামিন-ডি খুব সহজভাবে পাওয়ার উপায় হলো- দিনের বেলা প্রতি দিন (প্রায় দিন) অন্তত ১০ মিনিট রোদে যেতে হবে। মুখমণ্ডল ও হাত রোদে রাখতে হবে। এ ছাড়া ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধ খাবার যেমন দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য, ডিম, চর্বিযুক্ত মাছ ইত্যাদি রীতিমতো গ্রহণ করলেও অস্টিওম্যালেসিয়া থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব।
তা ছাড়া প্রতিরোধের জন্য প্রোফাইলেকসিস হিসেবে প্রতিদিন ১০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন-ডি গ্রহণ করা যেতে পারে। পরিশেষে আবারো বলছি, আসুন আমরা সবাই প্রতিদিন সূর্যরশ্মি থেকে ভিটামিন-ডি গ্রহণ করি এবং নিজেদের রিকেট ও অস্টিওম্যালেসিয়া থেকে রক্ষা করি।
লেখক : বাতব্যথা বিশেষজ্ঞ, ইবনে সিনা পেইন, ফিজিওথেরাপি অ্যান্ড রিহেবিলিটেশন সেন্টার, বাড়ি নং-৪৮, রোড নং-৯/এ, ধানমন্ডি, ঢাকা। ফোন : ৯১২৬৬২৫-৬ (চেম্বার), ০১৮১৯-৪১০০৮০।