ফাংশনাল ওভারিয়ান সিস্ট : কী করা উচিত
- ১৫ জানুয়ারি ২০১৯, ১১:৫৭
ওভারিয়ান সিস্ট ও টিউমার দুটি আলাদা বিষয় হলেও অনেক সময় এ নিয়ে বিভ্রান্তি থেকে যায়, যার ফলে ওভারিতে ফাংশনাল/ফিজিওলজিক্যাল সিস্ট থাকলেও সঠিকভাবে বুঝতে না পেরে রোগীরা দুঃচিন্তায় ভোগেন। যদিও এই ধরনের সিস্টগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আপনা-আপনি মিলিয়ে যায়, দেখা যায় গ্রামে-গঞ্জে কিছু অসাধু ক্লিনিক ব্যাবসায়ী এমন রোগীর অপারেশন করিয়ে তাদের প্রতারিত করে থাকে।
ওভারিতে ফাংশনাল সিস্ট তৈরির কারণ
শরীরে যদি কোনো কারণে হরমোনের তারতম্য হয় তবে ফাংশনাল বা ফিজিওলজিক্যাল সিস্ট তৈরি হতে পারে। এমন কিছু সিস্ট হচ্ছে ফলিকুলার ও কর্পাস লুটিয়াম সিস্ট। শরীরে হরমোনাল ইমব্যালেন্স হলে ওভুলেশন বা ডিম্বস্ফুটন ব্যাহত হয়। নিয়মিতভাবে ডিম্বস্ফুটন না হলে ডিমের এই আবরণীর মধ্যে পানি জমে পরে ফলিকুলার সিস্টে পরিণত হয়।
ফাংশনাল ওভারিয়ান সিস্টের লক্ষণ
# সাধারণত এরা Asymptomatic (আ্যসিম্পটোমেটিক) হয়ে থাকে, অর্থাৎ কোনো লক্ষণ প্রকাশ করে না। তবে কিছু ক্ষেত্রে তলপেটে ব্যথা হতে পারে।
# বিভিন্ন রকম ওভারিয়ান সিস্টের মধ্যে ফলিকুলার সিস্ট সবচেয়ে কমন, যা পলিসিস্টিক ওভারিতে হয়ে থাকে। এই ধরনের রোগীরা অনিয়মিত মাসিক এবং বন্ধ্যাত্বের মতো সমস্যায় ভুগে থাকে। এছাড়া এই সিস্টের সাথে সম্পর্কিত অন্য যে সমস্যাগুলো থাকতে পারে তা হচ্ছে- অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি, শরীরে অবাঞ্চিত লোম, রক্তের ব্লাড সুগার বা কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি।
ডায়াগনোসিস
ফাংশনাল সিস্টের এর সাইজ সাধারণত ৫-৭ সেমি হয়ে থাকে, ভিতরে ক্লিয়ার ফ্লুয়িড/পানি থাকে – আল্ট্রাসাউন্ডের (Lower abdomen/TVS) মাধ্যমে ডায়াগনোসিস হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে টিউমার মার্কার যেমন- CA-125, MRI, CT scan দিয়ে এর প্রকৃতি (benign or malignant) সম্পর্কে ধারণা করা হয়।
চিকিৎসা
অন্যান্য ওভারিয়ান টিউমারের চিকিৎসা অপারেশন হলেও ওভারিয়ান সিস্টের চিকিৎসায় অপারেশন দরকার হয় না, হরমোনাল ওষুধ দেয়া যেতে পারে। সাধারণত ২-৩ মাসের মধ্যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এগুলো চলে যায়। এসময় অবশ্যই একজন গাইনোকোলজিস্ট এর তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে।
তবে অপারেশন লাগতে পারে, যদি-
# ওভারিয়ান সিস্ট টুইস্ট/পেঁচিয়ে যায় অথবা Rupture (ফেটে) হয়। এক্ষেত্রে হঠাৎ করে পেটে প্রচণ্ড ব্যথা হয় এবং ইমার্জেন্সিভাবে চিকিৎসা করাতে হয়।
# দীর্ঘদিন ধরে একই রকম থাকলে অথবা ধীরে ধীরে সাইজ বড় হলে কিংবা টিউমারের কোনো লক্ষণ দেখা দিলে।
# এবং মহিলাদের ৪০ বছরের পর যেকোনো ওভারিয়ান সিস্ট/টিউমার গুরুত্বের সাথে চিকিৎসা করাতে হবে, কারণ এক্ষেত্রে Malignancy বা ক্যান্সার হবার আশঙ্কা থাকে।
মনে রাখতে হবে, ওভারির ডারময়েড সিস্ট এবং চকলেট সিস্টের নামকরণে সিস্ট থাকলেও এগুলো ফাংশনাল বা ফিজিওলজিক্যাল নয়। এগুলো ওভারির প্যাথলজিকাল টিউমার, তাই এর চিকিৎসা পদ্ধতিও ভিন্ন।
ডা. নুসরাত জাহান।
এমবিবিএস, এফসিপিএস (অবস-গাইনি)
সহযোগী অধ্যাপক (অবস-গাইনি)
ডেলটা মেডিকেল কলেজ, মিরপুর-১, ঢাকা।
সিরিয়ালের জন্য : 01924087831