সচেতনতা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রধান হাতিয়ার
- ডা. নাজিরুম মুবিন
- ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
প্রতি বছরের ন্যায় গতকাল ৪ ফেব্রুয়ারির তারিখ পালিত হয়ে গেল বিশ্ব ক্যান্সার দিবস। ২০০০ সাল থেকে প্রতি বছর পালিত হয়ে আসছে এই দিনটি। ক্যান্সার প্রতিরোধ, ক্যান্সার নির্ণয় ও ক্যান্সার চিকিৎসাকে ত্বরান্বিত করাই এই দিবসের মূল উদ্দেশ্য।
বিশ্ব ক্যান্সার দিবস ২০২৫ এর মূল প্রতিপাদ্য হলো ‘United by Unique’ অর্থাৎ প্রতিটি ক্যান্সার রোগীর গল্প, প্রয়োজন ও অভিজ্ঞতা ভিন্ন ভিন্ন। তবে আমরা একটা জায়গায় সবাই এক হয়ে যাই, আর তা হলো আমরা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে জয়ী হতে চাই।
ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র হলো- সচেতনতা। এই সচেতনতার নানান মাত্রা আছে। আমাদের সচেতন হতে হবে ক্যান্সার কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়, ক্যন্সারের প্রাথমিক লক্ষণগুলো কি কি এবং ক্যান্সারের চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে।
আমরা প্রায়ই শুনি, আগে তো এতো ক্যান্সার রোগী পাওয়া যেত না এখন কেন এতো ক্যান্সার রোগী দেখা যায়? এর একটি উত্তর হলো- আগে আমাদের রোগ নির্ণয় পদ্ধতি এতো উন্নত ছিল না এবং প্রান্তিক পর্যায়ে এতোটা সহজলভ্যও ছিল না। ফলে অনেক ক্যান্সার রোগী শনাক্তই হতো না। আরো একটি কারণ হচ্ছে আমাদের দেশে পরিবেশ দূষণের মাত্রা জ্যামিতিক হারে বেড়ে চলেছে যা কি না প্রায় সব ক্যান্সারেরই ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে।
তবে একটি আলাপ সব সময় আড়ালেই থেকে যায় তা হলো- আমরা যে আধুনিক জীবনাচরণ বা লাইফস্টাইলের রেলগাড়িতে চেপে বসে আছি তার প্রতিটি অনুষঙ্গ ক্যান্সারের ঝুঁকিকে বাড়িয়ে দেয়।
মহিলাদের বেশি বয়সে বিয়ে করা, বিয়ে না করা, সন্তান ধারণ না করা, সন্তান ধারণ করলেও সন্তানকে বুকের দুধ পান না করানো স্তন ক্যান্সার ও ডিম্বাশয় ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকখানি বাড়িয়ে তোলে।
ধূমপান ফুসফুস ক্যান্সারসহ প্রায় প্রতিটি ক্যান্সারের জন্য দায়ী একটি অভ্যাস।
যারা শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম কম করেন বা করেন না, সিঁড়ির পরিবর্তে লিফটে চড়তে যারা বেশি অভ্যস্ত, যারা মুটিয়ে গেছেন, যাদের কাজের ধরনই বসে থেকে কাজ করা তারা ক্যান্সারের উচ্চ ঝুঁকিতে আছেন।
যাদের একাধিক যৌনসঙ্গী, যারা মদ্যপানে আসক্ত তারাও এই তালিকায় রয়েছেন।
বাইরের অতিরিক্ত ভাজা পোড়া, তেল চর্বি জাতীয় খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার ও ফাস্ট ফুড গ্রহণও আমাদেরকে ধীরে ধীরে ক্যান্সারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব শুধু একটি সুস্থ জীবনাচরণ মেনে চলার মাধ্যমে ।
ক্যান্সারের কিছু প্রাথমিক লক্ষণ আছে যেগুলো নিচে দেয়া হোল :
১. শরীরের কোথাও কোনো চাকা, পিণ্ড বা টিউমারের উপস্থিতি
২. অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ বা নিঃসরণ
৩. দীর্ঘমেয়াদি শুকনো কাশি
৪. গলার স্বরের পরিবর্তন
৫. খাবার গিলতে কষ্ট হওয়া
৬. দীর্ঘমেয়াদি জ্বর
৭. ব্যাখ্যাতীত ওজন হ্রাস
৮. তিলে বা আঁচিলের অস্বাভাবিক পরিবর্তন
৯. দীর্ঘমেয়াদি ঘা যা সচরাচর চিকিৎসায় সারছে না এবং
১০. প্রশ্রাব ও পায়খানার স্বাভাবিক অভ্যাসের ব্যত্যয়
এই লক্ষণগুলো দেখামাত্র আমাদেরকে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে ক্যান্সার হলো কি না সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া জরুরি।
ক্যান্সারের চিকিৎসাকে মোটাদাগে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়।
১. সার্জারি বা অপারেশন
২. রেডিওথেরাপি বা মেশিনের মাধ্যমে চিকিৎসা
৩. কেমোথেরাপি, ইমিউনোথেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি ও হরমোন থেরাপি বা ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা
আমাদের দেশে এই সবগুলো চিকিৎসা পদ্ধতি সহজলভ্য। আমাদের দেশের সার্জনরা দক্ষতার সাথে বিভিন্ন ক্যান্সারের সার্জারি করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। বর্তমানে আমাদের দেশের সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় সর্বাধুনিক মেশিন ও প্রযুক্তির রেডিওথেরাপি প্রদান করা হচ্ছে। সেই সাথে আমাদের দেশের ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলো আন্তর্জাতিক মানের কেমোথেরাপি, ইমিউনোথেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি ও হরমোন থেরাপির ওষুধ উৎপাদন করছে। শুধু তাই নয় তারা ক্যান্সারের ওষুধ বিদেশেও রফতানি করছে। এ ছাড়া বিভিন্ন বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি বাইরের দেশে উৎপাদনকৃত ওষুধ দেশে বাজারজাত করছে। সুতরাং বলাই যায় নানান চড়াই উৎরাই পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশ এখন মোটামুটিভাবে ক্যান্সার চিকিৎসায় স্বয়ংসম্পূর্ণ।
ক্যান্সার চিকিৎসা একটি দীর্ঘমেয়াদি ও খরচসাধ্য চিকিৎসা। এই চাপ প্রশমনে বাংলাদেশ সরকারের কিছু প্রশংসনীয় চলমান কার্যক্রম রয়েছে।
বাংলাদেশের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে শুরু করে মেডিক্যাল কলেজ পর্যন্ত সব স্বাস্থ্যসেবা দান কেন্দ্রে জরায়ুর মুখে ক্যান্সার ও স্তন ক্যান্সারের বিনামূল্যে স্ক্রিনিং কার্যক্রম চালু আছে। জরায়ুর মুখ ক্যান্সারের জন্য দায়ী হিউমান প্যাপিলোমা ভাইরাসের বিপরীতে টিকা কার্যক্রম সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সেই সাথে সরকারের সমাজসেবা কার্যালয় ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসার জন্য এককালীন ৫০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করে থাকে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ ও প্রতিকার নিয়ে এই মৌলিক তথ্যগুলো নিজে জানা এবং অপরকে জানানোর মাধ্যমে আমরা প্রত্যেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারি । আমাদের ছোট ছোট প্রচেষ্টাগুলো একত্র হয়ে ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে অনেক বড় অবদান রাখবে।
লেখক : এমবিবিএস, এফসিপিএস
ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা