আঁকাবাঁকা শিরার চিকিৎসা : ৫৪ জন সার্জনের ৫১ জনই ঢাকায়
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১:২১
বাংলাদেশের প্রায় ৮৫ লাখ মানুষের আঁকাবাঁকা মোটা শিরার (ভেরিকোজ ভেইন) সমস্যা থাকলেও রোগটির চিকিৎসার জন্য মাত্র ৫৪ জন ডাক্তার আছেন। তাদের মধ্যে ৫১ জনই আবার ঢাকায় কাজ করেন।
আঁকাবাঁকা শিরার এই রোগটি সম্বন্ধে মানুষের এমনিতেই ধারণা কম, আবার খুবই সংখ্যক চিকিৎসক থাকায় সময়মতো সঠিক চিকিৎসা মানুষ পায় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অপচিকিৎসায় ভুগে কষ্ট পায়। সচেতনতা বাড়াতে, সঠিক চিকিৎসাটি সঠিক সময়ে দিতে রাজধানীর ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভাস্কুলার সার্জারি বিভাগ ভেরিকোজ ভেইনের ওপর মেডিক্যাল ক্যাম্পের আয়োজন করে থাকে। মেডিকেল ক্যাম্প করা হলে এই রোগটির চিকিৎসায় ক্ষেত্রবিশেষে ৫০ শতাংশ ছাড় দিয়ে থাকে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) ও রোববার রাজধানীর কল্যাণপুরের ইবনে সিনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দুই দিনব্যাপী এ ধরনের একটি মেডিক্যাল ক্যাম্পেইন চলছে বলে জানিয়েছেন ভাস্কুলার সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা: জি এম মগবুল হোসেন।
এই ক্যাম্পেইন উপলক্ষে ভেরিকোজ ভেইনের সর্বাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থাও চালু রাখা হয়েছে।
ইবনে সিনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কোনো প্রকার কাটাছেড়া না করেই সর্বাধুনিক মেশিন ব্যবহার করে আঁকাবাঁকা ভেইনের চিকিৎসা করা হচ্ছে।
ইবনে সিনার এই ক্যাম্পেইন উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছেন বিশিষ্ট ভাস্কুলার সার্জন মুক্তিযোদ্ধা ডা: এম আবিদুর রহমান। তিনি যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী হলেও তিনি প্রতি বছর বাংলাদেশে আসেন এবং ইবনে সিনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসেন এবং চিকিৎসায় সহায়তা করে থাকেন। তিনি বাংলাদেশে ভাস্কুলার সার্জারি চিকিৎসার গোড়াপত্তন করেছেন।
ডা: এম আবিদুর রহমান শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) নয়া দিগন্তকে জানান, ভেরিকোস ভেইনের চিকিৎসা সময়মতো করতে না পারলে পায়ে পচন (আলসার) ধরতে পারে। তখন সুস্থ হতে সময় ও অর্থ দুই-ই বেশি লাগে। কিন্তু পায়ে কোনো ধরনের দেখা দেয়ার সাথে সাথেই ভাস্কোলার সার্জনদের পরামর্শ নিলে ভেরিকোস ভেইন সংক্রান্ত সমস্যায় চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ থাকা যায়। বাংলাদেশে সার্জনদের স্বল্পতা সত্ত্বেও ইবনে সিনায় একটি কমপ্লিট ভাস্কুলার সার্জন টিম আছে।
তিনি জানান, যদি পায়ের শিরা দেখা যায়, কিছুক্ষণ হাটলেই পা ভারী ভারী অনুভূত হয়, পায়ের ত্বকের কালার পরিবর্তন হয়ে যায়, পায়ে যদি পচন ধরে অথবা পায়ে পানি জমলে সেই ব্যক্তির ভেরিকোজ ভেইন বা আঁকাবাঁকা শিরার রোগ হয়েছে বুঝতে হবে। জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ মানুষ সাধারণত এ সমস্যায় ভোগে তবে সবার লক্ষণ প্রকাশ পায় না। লক্ষণ প্রকাশ পায় ৫ শতাংশ মানুষের। সেই হিসাবে বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে ৮৫ লাখ মানুষের চিকিৎসাযোগ্য ভেরিকোজ ভেইন রোগ রয়েছে।
এই রোগটি নারীদের বেশি হয়ে থাকে, বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের। এছাড়া যেসব নারীদের ওভারিয়ান টিউমার হয়ে থাকে তাদেরও ভেরিকোজ ভেইনের সমস্যা হয়ে থাকে। গর্ভাবস্থায় কেন বেশি হয় এই প্রশ্নের উত্তরে ডা: আবিদুর রহমান বলেন, এমনিতেই তখন নারীদের ওজন বেড়ে যায় এবং আবার তখন নানা ধরনের হরমোনার পরিবর্তন হয়ে থাকে। এছাড়া যাদের ওজন বেশি তাদের রোগটি হয়ে থাকে। অ্যাথলেটদেরও এই রোগটি হতে পারে যারা দৌড়ানো প্রতিযোগিতা করেন। তবে দৌড়ানোর কারণে লক্ষণ প্রকাশ দেরিতে ঘটে। এমন একজন ওলিম্পিক গোল্ড মেডালিস্ট অ্যাথলেট সামার স্যান্ডার্স। এছাড়া জিনগত কারণেও বংশ পরম্পরায় রোগটি হয়।
প্রতিরোধ হিসেবে তিনি জানান, খাবারে লবণের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে। তিনি বলেন, যাদের ভেরিকোজ ভেইন রোগ হয় ঘুমানোর সময় পা স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা ওপরে উঠিয়ে ঘুমাতে হবে। নিয়মিত হাঁটাচলা করা হলে এই রোগটি থাকলেও সুস্থ থাকা যাবে এবং রোগটির লক্ষণ প্রকাশ পেতে বিলম্ব হবে। যাদের এই রোগটি রয়েছে তারা যদি শুয়ে-বসে নিয়মিত পায়ের পাতা ওঠা-নামা করেন তাহলে রক্ত সঞ্চালন বাড়বে এবং রোগী সুস্থ থাকবে।
অধ্যাপক জি এম মকবুল হোসেন বলেন, আঁকাবাঁকা শিরার চিকিৎসা ইবনে সিনায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকায় করা যাচ্ছে। কিন্তু ভারতেও এই চিকিৎসা নিতে গেলে কমপক্ষে আড়াই লাখ টাকা লাগে। সিঙ্গাপুরের ভারতের চেয়ে ১০ গুণ বেশি লাগে।
তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, বর্তমানে ইবনে সিনায় দৈনিক ৮ থেকে ১০ জন রোগীর চিকিৎসা হচ্ছে। তবে মেডিকেল ক্যাম্পেইনে আরো বেশি রোগী চিকিৎসা দেয়া হয় বিশেষ ব্যবস্থায়।
ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শনিবারের ক্যাম্পেইনে ডা: আবিদুর রহমান, অধ্যাপক মকবুল হোসেন ছাড়াও আরো ছিলেন অধ্যাপক ডা: নরেশ চন্দ্র মন্ডল, অধ্যাপক ডা: ইমতিয়াজ আহসান, সহকারী অধ্যাপক ডা: আনিসুজ্জামান, সহকারী অধ্যাপক ডা: এ কে এম জিয়াউল হক, ডা: আশরাফ নাজমী, ডা: শহীদুল ইসলাম, ডা: মোহাম্মদ ইরমান প্রমুখ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা