শিশুর টাইফয়েড প্রতিরোধ করা জরুরি
- ডা: আহাদ আদনান
- ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
টাইফয়েড আমাদের এই অঞ্চলে খুবই সাধারণ একটি খাদ্য ও পানিবাহিত রোগ। সালমোনেলা টাইফি (টাইফয়েড) এবং প্যারাটাইফি (প্যারাটাইফয়েড) নামক ব্যাকটেরিয়া দিয়ে অসুখটি ছড়ায়। রাস্তার পাশের খাবার, ফুচকা, চটপটি, দূষিত সস, বোরহানি, খোলা পানি, ময়লা দুধ, দূষিত বরফ এমনকি ময়লা পানি দিয়ে ধোয়া প্লেট, গ্লাস থেকেও জীবাণু ছড়াতে পারে।
দূষিত খাবার বা পানির মাধ্যমে জীবাণু শরীরে প্রবেশের চার দিন থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। তীব্র জ্বর যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে, সাথে ক্ষুধামন্দা, বমি ভাব, বমি, মাথাব্যথা নিয়ে রোগ শুরু হয়। অনেক শিশুর সাথে পাতলা পায়খানা, পেট ব্যথা থাকতে পারে। অসুখ দ্বিতীয় সপ্তাহে পড়লে শরীরে সাময়িক লাল দানা (বিশেষ করে বুকে), পেট ফোলা, হাতে-পায়ে ব্যথা, কাশি, শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। রোগী যদি আবোলতাবোল বকে বা খিঁচুনি হয়, কিংবা অজ্ঞান হয়, অথবা পায়খানার সাথে রক্ত যায় বা পেট প্রচণ্ড ব্যথাদায়ক হয় তখন আমরা কিছু বিপজ্জনক জটিলতা চিন্তা করি। টাইফয়েড আক্রান্ত রোগীর জিহ্বায় এক ধরনের সাদা পর্দা পড়ে সামনের দিকে ছুলে যেতে পারে। অনেকের পেটে প্লিহা এবং যকৃৎ হাত দিয়ে ধরে বড় বোঝা যায়।
টাইফয়েড রোগে সময় অনুযায়ী রক্ত, পেশাব পরীক্ষায় বিশেষ ফলাফল পাওয়া যায়। আমাদের বিশেষ করে রক্ত (যেকোনো সময়) এবং পেশাব (দ্বিতীয় সপ্তাহে) কালচার পরীক্ষায় জোর দেয়া উচিত, যাতে প্রকৃত জীবাণু এবং জীবাণুর বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকর ওষুধটি জানা যায়। এছাড়া টাইফয়েডের কাছাকাছি আরো দু’টি অসুখ, ব্রুসেলোসিস (অপাস্তুরিত দুধ, দূষিত ডিমের খোসা বা ময়লা পানির মাধ্যমে হয়) এবং রিকেটশিয়া (ছারপোকা জাতীয় পতঙ্গের কামড়ে হয়) একটিমাত্র রক্ত পরীক্ষা, ফেব্রাইল (বা ট্রিপল) অ্যান্টিজেন শনাক্ত করতে পারে।
টাইফয়েডের প্রকৃত চিকিৎসা জীবাণুর বিরুদ্ধে অ্যান্টিবায়োটিক। এটি মুখে খাওয়ার হতে পারে বা ইনজেকশনও হতে পারে। আগেই বলেছি, কালচার এবং সেনসিটিভিটি পরীক্ষায় এটা জানা যাবে। জ্বর ভালো হয়ে গেলেও ওষুধের কোর্স সম্পূর্ণ পুরো করতে হবে। জটিল রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করে স্যালাইন বা অন্যান্য ওষুধ লাগতে পারে।
টাইফয়েড প্রতিরোধের মূলসূত্র ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং দূষিত খোলা খাবার পরিহার করা। খাওয়ার আগে, খাবার প্রস্তুতির আগে, টয়লেটের পর সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। দোকানের, রাস্তার পাশের, জনবহুল এলাকার খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
টাইফয়েড প্রতিরোধের জন্য বিশ্বে তিন ধরনের টিকা পাওয়া যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রস্তাবিত ‘কনজুগেট’ টিকা সম্প্রতি আমাদের দেশে পাওয়া যায়। মাংসে দেয়ার এই টিকাটি ছয় মাস পূর্ণ হলে নেয়া যায়, যার একটিই ডোজ এবং কার্যকারিতা ৯০ শতাংশের ওপর।
তবে আমাদের দেশে সচরাচর মাংসে আরেকটি টিকা দেয়া হয়। ব্যাকটেরিয়ার দেহের ক্যাপসুল থেকে তৈরি পলিস্যাকারাইড এই টিকা দুই বছর পূর্ণ হলে যে কেউ নিতে পারে। টিকা দেয়ার পরের সপ্তাহ থেকে এর কার্যকারিতা শুরু হয়, প্রথম মাসে সর্বোচ্চ প্রতিরক্ষা দেয় (৮০ শতাংশের কাছাকাছি) আবার তিন বছর পর খানিক দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই টিকার প্রাথমিক ডোজ একটি হলেও তিন বছর পরপর বুস্টার ডোজ নিতে বলা হয়।
মুখে খাওয়ার আরেকটি টিকা আছে যেটি, জীবন্ত দুর্বল ব্যাকটেরিয়া থেকে তৈরি হয়। এটা পাঁচ বছরের ওপর বয়সীদের জন্য উপযোগী। দু’দিন পরপর মোট তিনটি ডোজ এই টিকার।
টাইফয়েড রোগ একবার সেরে আবার হতে পারে। আবার অনেকে জীবাণুর দীর্ঘমেয়াদি বাহকও হতে পারেন। তাই সঠিক রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা খুবই জরুরি।
লেখক : শিশু-রোগ বিশেষজ্ঞ, আইসিএমএইচ, মাতুয়াইল, ঢাকা
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা