২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১, ২৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

বাংলাদেশে মৃত্যুর ৩৪ শতাংশই হৃদরোগে, প্রাপ্তবয়স্কদের এক-চতুর্থাংশ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত

ওয়েবিনারে আলোকচকরা - ছবি : সংগৃহীত

বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় হৃদরোগে। যার অন্যতম কারণ উচ্চ রক্তচাপ। বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর ৩৪ শতাংশই ঘটে হৃদরোগে। যার অধিকাংশই প্রতিরোধযোগ্য।

তৃণমূল পর্যায়ে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশেই কমানো সম্ভব বলে অভিমত জানিয়েছেন দেশের জনস্বাস্থ্য ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা।

আর এক উপস্থাপনায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতি চারজনের একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) গ্লোবাল রিপোর্ট অন হাইপারটেনশন ২০২৩ অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর ২ লাখ ৭৩ হাজার মানুষ হৃদরোগে মৃত্যুবরণ করে। যার ৫৪ শতাংশের জন্য দায়ী উচ্চ রক্তচাপ।

রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিশ্ব হার্ট দিবস উপলক্ষে গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) আয়োজিত ‘উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ ঝুঁকি’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এসব তথ্য তুলে ধরেন জনস্বাস্থ্য ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা।

এই আয়োজনে সহযোগিতা করেছে গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর (জিএইচএআই)। এবছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘ইউজ হার্ট ফর অ্যাকশন’।

ওয়েবিনারে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জুবায়ের। সঞ্চালনা ও বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপজনিত হৃদরোগের প্রকোপ ও করণীয় সম্পর্কে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রজ্ঞা’র কো-অর্ডিনেটর সাদিয়া গালিবা প্রভা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এই ওয়েবিনারে অংশ নেন।

ওয়েবিনারে এক তথ্যচিত্রে জানানো হয়, বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তদের (৩০-৭৯ বছর বয়সী) অর্ধেকই জানে না যে তাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। অধিকাংশ সময় উচ্চ রক্তচাপের নির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ এবং উপসর্গ থাকে না। এজন্য উচ্চ রক্তচাপকে নীরব ঘাতক বলা হয়। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ অকাল মৃত্যু ঘটায়। উচ্চ রক্তচাপের কারণে যেসব রোগের ঝুঁকি বাড়ে তা হলো, হৃদরোগ, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ অর্থাৎ স্ট্রোক, কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত বা বিকল ও অন্ধত্ব। আর স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ জাতীয় বাজেটের কমপক্ষে ১৫ শতাংশ। কিন্তু বাংলাদেশে এটি দীর্ঘদিন যাবত মাত্র ৫ শতাংশের আশপাশে রয়েছে।

স্বাস্থ্য খাত সংস্কারবিষয়ক বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্যসচিব এবং জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা: আব্দুল্লাহ আল শাফি মজুমদার বলেন, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে অন্যান্য কাজের পাশাপাশি সচেতনতামূলক কার্যক্রম বৃদ্ধি করতে হবে।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ইপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা: সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে ৪০ শতাংশেরও বেশি অকাল মৃত্যু হৃদরোগ-ঘটিত এবং এটি কমানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ।

ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্টস স্কুল অব পাবলিক হেলথের অধ্যাপক ডা: মলয় কান্তি মৃধা বলেন, দেশব্যাপী উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপ সঠিকভাবে জানতে অঞ্চল, বয়স এবং লিঙ্গভেদে প্রায়োগিক গবেষণা প্রয়োজন।

গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর-জিএইচএআই’র বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মুহাম্মদ রূহুল কুদ্দুস বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে সবার জন্য উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করতে সারাদেশে উচ্চ রক্তচাপের রোগীর সংখ্যা নির্ণয় করা জরুরি।

বারডেম জেনারেল হাসপাতালের খাদ্য ও পুষ্টি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান শামসুন্নাহার নাহিদ বলেন, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অপরিহার্য।


আরো সংবাদ



premium cement