২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ইতিহাস গড়ে ইউরোর রাজা স্পেন

ইতিহাস গড়ে ইউরোর রাজা স্পেন - ছবি : সংগৃহীত

ইতিহাস গড়ল স্পেন। বনে গেল ইউরোর রাজা। আরো একবার ইউরোপীয় ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট মাথায় তাদের, হারানো সিংহাসন পুনরুদ্ধার করল তারা। ইংলিশদের আক্ষেপে পুড়িয়ে চর্তুথবারের মতো দখলে নিলো ইউরো শিরোপা। ইউরোর ইতিহাসে যা পারেনি আর কোনো দল!

বার্লিনের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে রোববার রাতে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে মুখোমুখি হয় এই দুই জায়ান্ট। প্রথমার্ধে ঢিমেতালে ফুটবল হলেও দ্বিতীয়ার্ধে লড়াই হয় জমজমাট। যেখানে শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলে জিতেছে স্পেন। শিরোপা পুনরুদ্ধার করেছে ১২ বছর পর।

এদিকে একটা শিরোপার জন্যে ইংলিশদের হাহাকার বাড়লো আরো একবার। দীর্ঘ হলো অপেক্ষা। এই নিয়ে টানা দ্বিতীয়বার ফাইনালে খেলেও ছোঁয়া হলো না শিরোপা। ইতালির পর এবার স্পেনের সাথেও খুব কাছে গিয়ে ফিরতে হয়েছে তাদের। ৯৬৬ বিশ্বকাপের পর আর কোনো মেজর জেতেনি ইংল্যান্ড।

অবশ্য ইংলিশরা এবার শিরোপা জিতলেই একটু অবাক হতে হতো। ইউরোর ফাইনালে উঠে আসলেও প্রত্যাশিত পারফরম্যান্স দেখাতে পারেনি দলটা। প্রতি ম্যাচেই পাশ করেছে যেন টেনেটুনে। বিপরীতে পারফরম্যান্সের নিরিখে অপ্রতিরোধ্য ছিল স্পেন। প্রত্যাশিতভাবেই শিরোপা জিতেছে তারা।

অবশ্য প্রথমার্ধের খেলা ছিল গতিহীন। শিরোপা লড়াই যেন জমছিল না ঠিকমতো। তবে রূপ পাল্টে গেল বিরতির পর। আক্রমণের ঝড় তুলে এগিয়ে গেল স্পেন। পাল্টা জবাবও এলো বটে। তবে হাল ছাড়েনি দলটা। যখন মনে হচ্ছিলো হয়তো খেলা গড়াবে অতিরিক্ত সময়ে, তখনই শেষ চাল চাললো স্পেন।

স্পেন যখন স্নায়ুচাপে বল সাজাতে ব্যর্থ, ইংলিশরা তখন আরো সতর্ক। প্রথমার্ধে দুই গোলরক্ষকের কাউকেই কোনো পরীক্ষায় পড়তে হয়নি। গোল আসেনি, আসেনি তেমন কোন বড় সুযোগও। প্রথমার্ধ ছিল গোলশূন্য।

তবে দ্বিতীয়ার্ধে খেলার চিত্র বদলে গেল। দ্বিতীয়ার্ধের দ্বিতীয় মিনিটেই লিড পেয়ে যায় স্পেন। গোলটির সাথে জড়িয়ে পুরো আসরে ক্রমেই প্রতিপক্ষের জন্য ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা ইয়ামাল-উইলিয়ামস জুটি। লামিন ইয়ামালের পাস থেকে গোল করেন উইলিয়ামস।

পরের মিনিটেই দ্বিতীয় গোলের দেখা পেয়ে যেত স্পেন।তাদের সাজানো ছকে আবার ইংলিশদের রক্ষণ উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। এবার উইলিয়ামস বক্সে খুঁজে নেন দানি ওলমোকে। কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট শটে হতাশ করেন লাইপজিগ ফরোয়ার্ড। সুযোগ হাতছাড়া করে স্পেন।

অবশ্য এরপর থেকে বারবার ইংলিশ রক্ষণে আতঙ্ক ছড়াতে শুরু করে স্পেন। দারুণ সব সুযোগ তৈরি করেও নিরাশ হতে হয় ফিনিশিংয়ের ব্যর্থতায়। ৬৬তম মিনিটে গোল পেতে পারতেন ইয়ামালও, যদি না পিকফোর্ড বাঁধা হয়ে দাঁড়াতেন।

স্পেনের টানা আক্রমণে যেন খানিকটা পিছিয়ে পড়ে ইংল্যান্ড। নিয়ন্ত্রণ হারাতে থাকে ম্যাচের। এমতাবস্থায় অধিনায়ক হ্যারি কেইনকে উঠিয়ে সেমি ফাইনালের নায়ল অলি ওয়াটকিন্সকে নামান ইংল্যান্ড কোচ। তাতে যেন খানিকটা গতি ফেরে তাদের।

ম্যাচের ৭৩তম মিনিটে গোল করে সমতায় ফেরে ইংল্যান্ড। মাইনুর বদলি হিসেবে নামা কোল পালমারের দুর্দান্ত এক গোল ম্যাচে সমতা ফেরায়। বেলিংহ্যামের ব্যাকপাস থেকে বল পেয়ে ২২ গজ দূরে থেকে বল জালে জড়ান পালমার। ম্যাচে তখন ১-১ সমতা।

তবে ম্যাচটা অতিরিক্ত সময়ে নিতে চেয়েছিল ইংল্যান্ড। তাই জুট বেঁধে উইলিয়ামস ওয়ারজাবলের আক্রমণ রুখে দিচ্ছিল ইংলিশ ডিফেন্ডাররা। ৮২তম মিনিটে ইয়ামালের দারুণ এক প্রচেষ্টা রুখে দেন তারা। তবে শেষ রক্ষা হয়নি।

ম্যাচের ৮৬তম মিনিটে কুকুরেলার পাস থেকে ওয়ান টাচে জয়সূচক গোলটা করেন মিকেল ওয়ারজাবল। এখানেই সমাধি হয় ইংলিশদের শিরোপা স্বপ্নের। শেষ মিনিটের আক্রমণে খানিকটা উত্তেজনা বাড়ালেও আর ম্যাচে ফেরা হয়নি ইংলিশদের।

১৯৬৪ সালে ইউরোর দ্বিতীয় আসরে নিজেদের প্রথম শিরোপা জয়ের পর ২০০৮ ও ২০১২ সালে জোড়া চ্যাম্পিয়ন হয় স্পেন। এবার দখলে নিল চতুর্থ শিরোপা। ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে যা সর্বোচ্চ শিরোপা জয়ের রেকর্ড।


আরো সংবাদ



premium cement