লেভারকুজেনের স্বপ্নযাত্রা থামিয়ে প্রথম ইউরোপা লিগ জিতল আতালান্তা
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৩ মে ২০২৪, ১০:০১, আপডেট: ২৩ মে ২০২৪, ১৫:০৯
ম্যাচ শুরুর আগেই লেভারকুজেনকে ভয় পান না- জানিয়ে দিয়েছিলেন আতালান্তা কোচ জিয়ান পিয়েরে গাস্পারেনি। ভয়ডরহীন ফুটবল দিয়ে ‘নেভারলুজেন’দের হারানোর করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন। মাঠে নেমে সেই কাজটিই করে দেখাল তার শিষ্যরা।
ভয়ডরহীন ফুটবল খেলে শূন্যে উড়তে থাকা লেভারকুজেনকে মাটিতে নামিয়ে আনল আতালান্তা। চলতি মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৫১ ম্যাচ পর তাদের প্রথম হারের স্বাদ দিল গাস্পারেনির শিষ্যরা।
বুধবার রাতে ডাবলিনের আভিভা স্টেডিয়ামে ফাইনালে ৩-০ গোলে জিতে ৬১ বছরের শিরোপা খরা কাটিয়েছে ইতালির ক্লাব আতালান্তা। এ জয়ে স্বপ্নীল জয়যাত্রা থেমেছে লেভারকুজেনের। একই সাথে ইউরোপীয় ফুটবলে কেউ কখনো যা করে দেখাতে পারেনি, সেই ‘মৌসুমজুড়ে সব প্রতিযোগিতায় অপরাজিত থাকা’র স্বপ্নভঙ্গও হয়েছে তাদের।
তবে ফাইনালের সবটুকু আলো কেড়ে নিয়েছেন আতালান্তার স্ট্রাইকার আদেমোলা লুকমান। ৩-০ গোলে জয়ের তিনটি গোলই ছিল তার। গোলগুলো করতে গিয়ে মাঠে তিনি যে ফুটবল শৈলী রচনা করেছেন, তাতে স্বমহিমায় উজ্জ্বল হয়েছেন বারবার।
এই হ্যাট্রিকে রেকর্ড বইয়ে নাম লিখিয়েছেন তিনি। ইউরোপা লিগের ফাইনালে প্রথম ফুটবলার হিসেবে হ্যাট্ট্রিক করেছেন লুকমান। ১৯৮৮ সালে ইউরোপা লিগে এক ম্যাচের ফাইনাল শুরুর পর এই কীর্তি এত বছরে কেউ করে দেখাতে পারেননি।
ম্যাচের দ্বাদশ মিনিটেই গোল পেয়ে যায় আতালান্তা। লেভারকুজেনের বক্সের ডান পাশের সীমানা থেকে প্রেস করে বল দখলে নেয় আতালান্তার এক খেলোয়াড়। তিনি সেটি সাথে সাথে বক্সের মধ্যে বাড়িয়ে দিলে কোনোমতে তা প্রতিহত করে একজন ডিফেন্ডার। কিন্তু বলটি বাঁ দিকে ১৪ গজের সামান্য বাইরে থাকা আদেমোলা লুকমানের পায়ের সামনে পড়ে। দুর্দান্ত গতিতে কাছের পোস্ট ঘেষে বলটি জালে জড়াতে ভুল হয়নি তার।
গোল পেয়েই বল দখলের লড়াইয়ে আরো ক্ষিপ্র হয়ে ওঠে ইতালির ক্লাবটি। প্রবল কাউন্টার প্রেসিংয়ে লেভারকুজেনকে কোনো সুযোগই তৈরি করতে দিচ্ছিল না তারা। এর মাঝেও ম্যাচের অষ্টাদশ মিনিটে ভালো সুযোগ তৈরি করে লেভারকুজেন। স্টানিজিচের লং পাস ধরে ডান দিক দিয়ে এগিয়ে গিয়ে বক্সের মধ্যে ক্রস দেন জেরেমি ফ্রিমপং। মাঝে থাকা আমিন আদলি বলটি ভালোমতো আয়ত্বে আনতে না পেরে বক্সের সামান্য বাইরে থাকা ভিয়ার্টসকে পাস দেন। তবে তার শটে জোর না থাকায় সহজেই বল তালুবন্দি করেন আতালান্তার গোলরক্ষক হুয়ান মুসো। পরমুহূর্তেই আবারো কাউন্টারে গিয়ে আরেকটি গোল পেয়েই যাচ্ছিলেন লুকমান, তবে শটটি পোস্টের ওপর দিয়ে চলে যাওয়ায় সে প্রচেষ্টা কাজে আসেনি।
তবে ম্যাচের ২৫তম মিনিটে অসাধারণ ফুটবলশৈলীতে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন লুকমান। এ সময় লং পাসে বল ক্লিয়ার করেন লেভারকুজেনের গোলরক্ষক মাতেই কোভার। বলটি মাঝমাঠে থাকা তার এক সতীর্থ সফট হেডারে ব্যকপাস দেন। কিন্তু তার পাস মুহূর্তের মধ্যে ধরে নিয়ে প্রতিপক্ষের দুই খেলোয়াড়কে ড্রিবল করে ডি-বক্সের বাইরে থেকে ডান পায়ের বাঁকানো শট দেন লুকমান। নিখুঁত শটে বলটি গোলরক্ষের নাগালের বাইরে দিয়ে ফের জালে জড়ায়।
২ গোল পাওয়ার পর শক্তি-সামর্থ্য আর ক্ষিপ্রতার গতি আরো বাড়িয়ে দেয় আতালান্তা। দ্রুতগতির ফুটবল আর প্রেসিং-কাউন্টার প্রেসিংয়ে লেভারকুজেনের খেলোয়াড়দের কোণঠাসা করে ফেলে তারা। তবে এমন ঝড়ের মধ্যেও মাথা ঠান্ডা বল পজেশনাল ফুটবলে মনোযোগী হয় লেভারকুজেন। এ সময় শাবিকেও শিষ্যদের উত্তেজিত না হওয়ার ইঙ্গিত করতে দেখা যায়।
ম্যাচের ৩৫তম মিনিট শুরু হতেই গোল পেয়ে যাচ্ছিল লেভারকুজেন। সতীর্থের চুলচেরা পাসটি একেবারে ফাঁকায় পেয়ে যান গ্রিমালদো। বলটি নিয়ে তিনি যখন এগোচ্ছেন, তখন তার সামনে শুধু আতালান্তার গোলরক্ষক হুয়ান মুসো। কিন্তু তিনি দ্রুত এগিয়ে এলে ডি-বক্সের বাইরে থেকে ফ্লিক করতে গিয়ে বল মুসোর হাতে দিয়ে দেন গ্রিমালদো। ফলে গোলবঞ্চিত হয় লেভারকুজেন। এক মিনিট পর তাদের আরো একটি চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এরপর আরো একটি।
৪২তম মিনিটে আতালান্তার দে কাতালায়েরের শট প্রতিহত করেন লেভারকুজেন গোলরক্ষক। এরপর দু’পাশে আর বলার মতো কোনো সুযোগ তৈরি না হলে ২-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় আতালান্তা।
দ্বিতীয়ার্ধে স্টানিজিচের বদলি হিসেবে ভিক্তর বনিফেসকে নামান শাবি আলোনসো। লেভারকুজেন ফের পজেশনাল ফুটবলে মনোযোগী হলে কাউন্টার প্রেসিং চালিয়েই যায় আতালান্তা। এর ফলও হাতেনাতে পেয়ে যাচ্ছিল তারা। তবে লেভারকুজেনের অসাধারণ ডিফেন্ডিংয়ে দ্বিতীয়ার্ধ শুরুর পাঁচ মিনিটেই তৃতীয় গোল খাওয়া থেকে বেঁচে যায় জার্মান লিগ চ্যাম্পিয়নরা।
তবে সময় অতিক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে ধীরে ধীরে স্বরূপে ফিরতে শুরু করে চলতি মৌসুমে টানা ৫১ ম্যাচ অপরাজিত থাকা লেভারকুজেন। দ্রুতগতির ছোট ছোট পাসে প্রতিপক্ষকে বারবার চমকে দিয়ে গোলের সুযোগ তৈরি করতে থাকে তারা। তবে বক্সের মধ্যে অসাধারণ দক্ষতায় তাদের সব প্রচেষ্টা আটকে যাচ্ছিল আতালান্তার রক্ষণ দেওয়ালে।
৫৮তম মিনিটে ফ্রিমপংয়ের শট পোস্টের ওপর দিয়ে চলে যায়। এ সময়ে গ্যালারির একাংশে লাল-কালো রঙের ঢেউ ওঠে। খেলোয়াড়দের আরো উৎসাহ জোগাতে স্লোগান ও দলীয় সংগীতের সাথে সাথে নাচতে থাকে লেভারকুজেন সমর্থকরা। এতে করে আস্তে আস্তে প্রাণশক্তি ফিরে পেয়ে খেলার ধার আরো বাড়তে থাকে লেভারকুজেনের।
ম্যাচের ৬২ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে দূরের পোস্টে দেয়া ভিয়ার্টসের পাস থেকে আরো একটি গোলের ভালো সুযোগ তৈরি করে শাবির শিষ্যরা। তবে এবারো ত্রাতা হয়ে আভির্ভূত হন আতালান্তার গোলরক্ষক কোভার।
এভাবে কয়েক মিনিট কাটার পর ৭৫ মিনিটে ফের গোল পায় আতালান্তা। নায়ক সেই লুকমান। হ্যাট্ট্রিক! সাথে সাথে অনন্য কীর্তি।
কাউন্টারে এগিয়ে গিয়ে বক্সের বাইরে ফাঁকায় থাকা লুকমানকে পাস দেন জিয়ানলুকা স্কামাক্কা। দুই ডিফেন্ডারকে পরাস্ত করে লুকমান দূরের পোস্ট দিয়ে সজোরে বলটি পাঠিয়ে দেন গন্তব্যে।
এই গোলে ইউরোপা লিগের ফাইনাল ম্যাচে প্রথম হ্যাট্ট্রিক করে রেকর্ড বইয়ে নতুন ইতিহাস লেখেন লুকমান।
শেষের দিকে বেশ কয়েকটি সুযোগ তৈরি করে লেভারকুজেন। তবে সেগুলোকে গোলে কনভার্ট করতে ব্যর্থ হওয়ায় ৩-০ গোলের হার, মৌসুমের প্রথম হার, ৫১ ম্যাচ পর হার, ‘নেভারলুজেন’ তকমা হারিয়ে নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় শাবি আলোনসোর লেভারকুজেনকে।
এই জয়ে ১৯৬৩ সালের পর প্রথম কোনো শিরোপা জিতল আতালান্তা। ৬১ বছর পর সমর্থকদের শিরোপা জয়ের আনন্দে ভাসালেন গাস্পারেনির আতালান্তা।
ইউরোপা লিগের এই শিরোপাটি আতালান্তার প্রথম ইউরোপা লিগ শিরোপা। এর আগে কেবল কোপা ইতালিয়ার একটি ট্রফি ছিল তাদের ক্যাবিনেটে।
এ জয়ে কোচিং ক্যারিয়ারে প্রথম শিরোপা জিতেছেন গাস্পারেনি। অবশেষে ৬৬ বছর বয়সী এই ইতালিয়ান কোচের দীর্ঘদিনের শিরোপা খরা ঘুচেছে।
সূত্র : ইউএনবি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা