২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

নেইমারের ৫টি ব্যালন ডি’অর জেতা উচিত ছিল : বুফন

নেইমার এবং জানলুইজি বুফন - সংগৃহীত

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে প্রতিপক্ষের সবচেয়ে কঠিন ফুটবলার হিসেবে মেসি, রোনালদো নয়, বরং নেইমারকে বেছে নিয়েছেন ইতালি ও ইউভেন্তুসের কিংবদন্তি গোলরক্ষক জানলুইজি বুফন। ব্রাজিলের এই তারকা ফুটবলারের অন্তত পাঁচটি ব্যালন ডি’অর জেতা উচিত ছিল বলে মনে করেন তিনি।

২৮ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ার শেষে ২০২৩ সালে গ্লাভস খুলে রাখার সিদ্ধান্ত নেন বুফন। বর্তমানে ইতালির জাতীয় দলের টিম অপারেশন ম্যানেজারের ভূমিকায় রয়েছেন সাবেক এই ফুটবলার।

সম্প্রতি মিলানভিত্তিক ইতালির জাতীয় দৈনিক করিয়েরে দেল্লা সেরাকে এক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বুফন। সেখানে নিজের আত্মজীবনী উপস্থাপন করেন তিনি। এ সময় ক্যারিয়ারের অসংখ্য বিষয় নিয়ে কথা বলেন ৪৬ বছর বয়সী এই কিংবদন্তি।

গোলরক্ষক হওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গোলরক্ষক হওয়ার মাঝে একটা আকর্ষণ আছে। ব্যথা পেয়েও তা থেকে আনন্দ খুঁজে নেয়া, ব্যাপারটি একেবারেই ব্যতিক্রম।’

তিনি বলেন, ‘কিশোর বয়সে আমি যখন খেলা শুরু করেছি, তখনো (ফুটবলের) পরিস্থিতি ৭০-এর দশকের মতো। পিচগুলো সিমেন্টের মতো শক্ত। ক্ষতবিক্ষত হাত, পেছনে কালশিটে পড়ে যাওয়া এবং কতবার রক্তাক্ত হয়েছে এসব দিয়ে তখনকার গোলরক্ষকদের বিচার করা হতো।’

১৯৯৫ সালে পার্মার জার্সি গায়ে চড়িয়ে পেশাদার ফুটবলে নাম লেখান বুফন। ছয় বছরে পার্মাকে বেশ কয়েকটি শিরোপা জেতাতে ভূমিকা রাখেন তিনি। এর মধ্যে ১৯৯৯ সালে ক্লাবটির হয়ে উয়েফা কাপ, কোপা ইতালিয়া ও ইতালিয়ান সুপার কাপ জেতেন এই গোলরক্ষক। পার্মায় থাকাকালেই নিজের প্রতিভা বিশ্বের সামনে তুলে ধরেন তিনি। এরপর ২০০১ সালে তৎকালীন রেকর্ড ট্রান্সফার ফি-তে নাম লেখান ইউভেন্তুসে।

ওল্ড লেডিদের জার্সিতেই টানা ১৮ বছর কাটিয়ে এবং অসংখ্য রেকর্ডের পাশে নিজের নাম লিখিয়ে কিংবদন্তির তকমা অর্জন করেন বুফন। ২০১৮ সালে ইউভেন্তুস থেকে বিদায় নিয়ে এক বছর পিএসজিতে কাটান তিনি। তবে পরের বছরই ফেরেন তুরিনে। আরো দু’বছর সাদা-কালো জার্সিতে খেলে শৈশবের ক্লাব পার্মায় ফেরেন ২০০৬ বিশ্বকাপজয়ী এই গোলরক্ষক। ২০২৩ সালে সেখান থেকেই অবসরে যান তিনি।

তবে শেষবার ইউভেন্তুস ছাড়ার পর বার্সেলোনায় যাওয়ার প্রস্তাব পেয়েছিলেন বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘বার্সা আমাকে ডেকেছিল তাদের রিজার্ভ গোলরক্ষক হওয়ার জন্য। (ক্রিস্তিয়ানো) রোনালদোর সাথে খেলেছি, মেসির সাথে খেলার সুযোগ তখন এসেছিল। তবে শেষমেষ পার্মায়ই ফিরে গেলাম। যেখানে শুরু হয়েছিল, সেখান থেকেই (ক্যারিয়ার) শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অসংখ্য তারকা ফুটবলারের সাথে ও বিপক্ষে খেলার অভিজ্ঞতা হয়েছে সেরি-আর ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা (৬৫৬) এই ফুটবলারের। তাদের মধ্যে তার মোকাবিলা করা সেরা ফুটবলার কে- এমন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ফুটবল বিশ্বকেই তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি।

মেসি-রোনালদোর মধ্যে সর্বকালের সেরা ফুটবলার কে- এ নিয়ে ব্যাপক মতপার্থক্য থাকলেও তাদের কাউকেই নিজের সেরা ফুটবলার ভাবতে পারেন না বুফন। তার কাছে নেইমারই সেরা।

তিনি বলেন, ‘ তিন প্রজন্মের ফুটবলারদের বিপক্ষে আমি খেলেছি। একজনকে কিভাবে বেছে নেই বলুন তো? (জিনেদিন) জিদান, রোনালদো (নাজারিও), (লিওনেল) মেসি, ক্রিস্তিয়ানো (রোনালদো), ইনিয়েস্তা… কত সেরা ফুটবলার রয়েছেন। তবে যদি একজনকেই বেছে নিতে হয়, তবে সে নেইমার। খেলোয়াড় ও মানুষ হিসেবে সে যেমন, তার অন্তত পাঁচটি ব্যালন ডি’অর জেতা উচিত ছিল।’

গত ২০ বছরের মধ্যে সেরা দল কোনটি?- এ বিষয়ে বুফনের উত্তর, ‘২০১৫ সালের বার্সেলোনা ও ২০১৭ সালের রিয়াল মাদ্রিদ। ২০০৩ সালে (আন্দ্রিই) শেভচেঙ্কোর মিলানকেও এই কাতারে রাখতে হবে।’

ওই তিন বছরই দল তিনটির বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে হারে বুফনের ইউভেন্তুস। ফলে তিনবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠলেও শিরোপা তুলে ধরতে বারবার বঞ্চিত হয়েছেন সর্বকালের অন্যতম সেরা এই গোলরক্ষক।

ইতালির জাতীয় দলের হয়ে ১৯৯৭ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ১৭৬টি ম্যাচ খেলেন বুফন। এর মাঝে ২০০৬ সালে ফ্রান্সকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জেতেন তিনি। এছাড়া ২০১৭ সালে গোলরক্ষকদের জন্য চালু করা ফিফার প্রথম বর্ষসেরা গোলরক্ষকের পুরস্কারও ওঠে তার হাতে।
সূত্র : ইউএনবি


আরো সংবাদ



premium cement